কেউ বাড়ির কাজের চাপে স্কুল ছেড়েছে। কেউ বিয়ের চাপ এড়াতে বাঁচার পথ খুঁজছে। এ বার ওদের সামনে নতুন রাস্তা।
স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরি করে স্বনির্ভরতার পথে হাঁটতে চলেছে ওরা।
একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং ইন্টিগ্রেটেড চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস (আইসিডিএস) যৌথভাবে শুরু করছে এই প্রশিক্ষণ। আপাতত দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বিষ্ণুপুরে প্রশিক্ষণ পর্ব শুরু হয়েছে। মুর্শিদাবাদ, উত্তর চব্বিশ পরগনা, জলপাইগুড়িতেও এই কর্মশালা করার পরিকল্পনা আছে বলে দাবি।
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা জানাচ্ছেন, প্রথম পর্বে দিন পনেরোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। অসমের নয়ন শইকিয়া ও তাঁর স্ত্রী প্রশিক্ষণ দেবেন। এর আগেও নয়নবাবু সস্তায় ন্যাপকিন তৈরি করেছেন। ওই সংস্থার কো-অর্ডিনেটর সুজয় রায় বলেন, ‘‘মেয়েরা ন্যাপকিন তৈরি করে বিক্রি করতে পারলে স্বনির্ভর হতে পারবেন। পাশাপাশি ঋতুস্রাবের মতো স্বাভাবিক প্রক্রিয়া নিয়ে জড়তাও কমবে।’’
শুক্রবার বিষ্ণুপুরের প্রশিক্ষণ শিবিরের উদ্বোধন হয়। সোমবার থেকে শুরু হবে কর্মশালা। পঞ্চায়েত দফতরের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছে ওই সংস্থা। প্রশিক্ষিত মেয়েদের স্বনির্ভর প্রকল্পে যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। সস্তায় ন্যাপকিন তৈরি করার মেশিনের দাম প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা। স্বনির্ভর প্রকল্পের আওতায় এলে এই টাকা ঋণ হিসাবে সরকার থেকে পাওয়া যাবে।
আইসিডিএস কর্তারা জানাচ্ছেন, ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সি মেয়েদের নিয়েই এই প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। প্রথম দফায় জনা পঞ্চাশ মেয়েকে ন্যাপকিন তৈরি শেখানো হবে। তাঁদের দাবি, কন্যাশ্রী প্রকল্পের জন্য স্কুলছুট কমলেও নাবালিকা বিবাহের সমস্যা কমেনি। তাই কিশোরীদেরই প্রথমে প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বনির্ভর করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে।
মেয়েরা রোজগার করতে শিখলে জোর করে বিয়ে দেওয়ার প্রবণতাও অনেকটা কমবে বলেই মনে করছেন, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট প্রোজেক্ট অফিসার সৌরিশ বন্দ্যোপাধ্যায়।
স্বনির্ভরতার পাশাপাশি কম দামে ন্যাপকিন বিক্রিও এই প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য। সরকারের তরফে এখন ছ’টি স্যানিটারি ন্যাপকিন ছ’টাকায় বিক্রি করার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু এই প্রকল্পে ন্যাপকিনের দাম অর্ধেক হয়ে যাবে।
এখন অধিকাংশ মেয়েরা স্যানিটারি ন্যাপকিনের পরিবর্তে ঋতুস্রাবে কাপ়়ড় ব্যবহার করে। যার জেরে নানা সংক্রমক রোগে আক্রান্ত হন তাঁরা। সস্তায় স্যানিটারি ন্যাপকিন পেলে এই সমস্যা কমবে।