ভিক্ষুক ওঁরা, জানেন না দিন

পারুল বালা কাটা কাটা স্বরে বললেন,   “না না, আমরা সেই দিনটাই মনে রাখি যে দিন অনেক ভিড় হয়। অনেক বেশি ভিক্ষা পাই। বাকি কোনও দিনই আমাদের নয়।”

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৯ ০২:০৭
Share:

প্রশ্ন শুনে মুখ চাওয়াচাওয়ি করছিলেন প্রভাতী দাস, পারুল বালা, ময়না দাসীরা। ‘নারী দিবস’ কথাটা ওঁরা এর আগে শুনেছেন বলে মনে হল না। ওঁরা প্রাচীন এই শহরের অনেক দিনের বসিন্দা। মঠ-মন্দিরের চাতাল ওঁদের পৃথিবী। ভিক্ষা দেওয়া পর্যটক ওঁদের ঈশ্বর। আর মঠ-মন্দির কর্তৃপক্ষ ওঁদের অঘোষিত অভিভাবক।

Advertisement

কয়েক মাস আগে হঠাৎ স্ট্রোকে আক্রান্ত হন মধ্য ষাটের ময়না দাসী। এক দিকের হাত অসাড় হয়ে গিয়েছে তাঁর। পারুল বালা কাটা কাটা স্বরে বললেন, “না না, আমরা সেই দিনটাই মনে রাখি যে দিন অনেক ভিড় হয়। অনেক বেশি ভিক্ষা পাই। বাকি কোনও দিনই আমাদের নয়।” খর গ্রীষ্মে ওঁরা পোড়েন। বর্ষায় নর্দমা, রাস্তাঘাটের জমা জলে ভেসে যায় মঠ-মন্দিরের চাতাল। পথের ধারের রোয়াকে তখন হাঁটুজলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন ওঁরা। আবার পৌষ-মাঘের শেষ রাতে কুড়ানো কাঠকুটোর আগুনও নিভে যায়। নবদ্বীপের দেড় শতাধিক মঠ-মন্দিরের খোলা চাতাল বা পথের ধারের রোয়াকগুলোই হাজার তিনেক বিধবার ‘বার্ধক্যের বারাণসী’। বেনারস ও বৃন্দাবনের বিধবাদের দুরাবস্থার কথা নিয়ে বিস্তর চর্চা হয়। বিনা ব্যয়ে চিকিৎসা, আশ্রয়ের ব্যবস্থা হয়। কিন্তু নবদ্বীপের অনাথ বিধবারা অন্তরালেই থেকে গিয়েছেন। প্রবীণ নাগরিকদের জন্য বরাদ্দ সরকারি সুযোগ সুবিধা দূরের কথা, দু’বেলা খাওয়া, মাথার উপরে ছাদও জোটে না। অসুখ-বিসুখে ভরসা দাতব্য হোমিয়োপ্যাথি পুরিয়া। ভাগ্যক্রমে কেউ ঠাঁই পান নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে।

রাজ্য সরকারের সমাজকল্যাণ দফতরের অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিক লক্ষ্মীনারায়ণ প্রামাণিক জানান, “২০০০ সালে একটি বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে নবদ্বীপের ওই অনাথ বিধবাদের উপর সমীক্ষা হয়েছিল। তখনই নবদ্বীপে প্রায় আড়াই হাজার অনাথ বিধবা পাওয়া যায়।” নবদ্বীপের পুরপ্রধান তৃণমূলের বিমানকৃষ্ণ সাহা জানান, “শহরে ইতিমধ্যেই আমরা একটি বহুতল আবাস তৈরি করেছি। কিন্তু কয়েক হাজার মানুষের জন্য করার সাধ্য পুরসভার কোথায়?’’ তিনি জানান, বৃন্দাবন ও বেনারসের বিধবারা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সাহায্য পেলে নবদ্বীপের বিধবারা বঞ্চিত।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন