Indian Football Team

গুরপ্রীতদের নিয়ে গর্বিত সন্দীপ-রেনেডির মনে উঁকি দিচ্ছে চিন্তার মেঘ

মোরিনহোর বিখ্যাত ‘পার্ক দ্য বাস’ যদি ভারতের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করে বাংলাদেশ বা আফগানিস্তান, তা হলে সেই জাল কাটিয়ে বেরিয়ে আসার উপায় কী?

Advertisement

ঋষভ রায়, শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ২১:৪৩
Share:

কাতারের বিরুদ্ধে নজর কেড়েছেন গুরপ্রীত-সন্দেশ। ছবি: এএফপি।

কাতারের মাঠে শক্তিশালী কাতারকে রুখে দেওয়ার পরে যুবভারতী ভরানোর ডাক দিয়েছেন ভারতের কোচ ইগর স্তিমাচ। ১৫ অক্টোবর বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনকারী পর্বের ম্যাচে ভারতের সামনে বাংলাদেশ। দেশের প্রাক্তন তারকা ফুটবলার রেনেডি সিংহ মনে করছেন, কাতারকে থামানোর স্ট্র্যাটেজি বুমেরাং হয়ে ফিরতে পারে ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচে। কারণ ব্যাখ্যা করে বহু যুদ্ধের সৈনিক রেনেডি বলছেন, ‘‘ডিফেন্সে লোক বাড়িয়ে কাতারকে থামিয়ে দিয়েছে ভারত। বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান একই ভাবে ভারতকে আটকানোর জন্য নামবে।’’

Advertisement

মোরিনহোর বিখ্যাত ‘পার্ক দ্য বাস’ যদি ভারতের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করে বাংলাদেশ বা আফগানিস্তান, তা হলে সেই জাল কাটিয়ে বেরিয়ে আসার উপায় কী? রেনেডি বলছেন, ‘‘সুনীল ছেত্রীকে ফিরতে হবে। আক্রমণের রাস্তা নিতে হবে। সুনীল ফিরলেই অন্য স্ট্র্যাটেজিতে ফিরে যাবে ভারত। এই দলে গোল করার প্লেয়ারের দরকার। উদান্ত গোটা মাঠ জুড়ে দৌড়চ্ছে। কিন্তু, ওকে ফিনিশিংয়ের দিকে নজর দিতে হবে।’’

মঙ্গলবার রাতে উদান্ত পরীক্ষা নিচ্ছিলেন কাতার-রক্ষণের। তাঁর বাঁক খাওয়ানো শটটা অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। স্তিমাচের ছেলেদের জন্য গর্বিত ভারতের ফুটবলভক্তরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় গুরপ্রীত-সন্দেশদের নিয়ে প্রবল চর্চা চলছে। ভারতের বারের নীচে পঞ্জাবতনয় অপরাজিত ছিলেন। কাতারের ফুটবলাররা ভারতের গোল লক্ষ্য করে ৩০টা শট নিয়েছিলেন। গুরপ্রীতকে হারানো যায়নি। খুব কাছ থেকে তাঁকে দেখেছেন পাঁচ বারের ভারতসেরা গোলকিপার সন্দীপ নন্দী। তিনি বলেন,‘‘বিদেশে প্রায় তিন বছরের মতো কাটিয়ে এসেছে গুরপ্রীত। ওই তিন বছর ওর কেরিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। বিদেশে উন্নতমানের ট্রেনিং গুরপ্রীতের খেলাকে আগের থেকেও ভাল করেছে। ওর আত্মবিশ্বাস বেড়ে গিয়েছে। গুরপ্রীতকে দেখলে মনে হয়বিশ্বমানের গোলরক্ষক আমাদের দলেও রয়েছে।’’

Advertisement

গুরপ্রীত যেমন বারের নীচে দাঁড়িয়ে কাতারের ‘গোলাবর্ষণ’ সামলেছেন, তেমনই সন্দেশ ঝিঙ্গান, আদিল খানরাও নজর কেড়ে নিয়েছেন। কথায় বলে, যাঁরা গোল করেন, তাঁদের কথাই সবাই মনে রাখেন। খেলার মাঠে বহুপ্রচলিত এই আপ্তবাক্যকে ভুল প্রমাণিত করলেন সন্দেশ-আদিলরা। রক্ষণের মধ্যেও যে সৌন্দর্য লুকিয়ে রয়েছে, তা স্তিমাচের দলকে না দেখলে বোঝাই যেত না। কাতারের ফুটবলাররা শারীরিক দিক থেকে সক্ষম। শারীরিক সক্ষমতায় তাঁদের সমানে টক্কর দিয়ে গিয়েছেন সন্দেশ। কেরল ব্লাস্টার্সে সন্দেশ ছিলেন সন্দীপের সতীর্থ। আশিয়ান জয়ী গোলকিপার বলছিলেন, ‘‘সন্দেশ ঝিঙ্গান শারীরিকদিক থেকে খুব শক্তিশালী। নিজের স্বাস্থ্যের দিকে খুব যত্ন নেয়। সন্দেশকে সহজে বল থেকে সরানো যায় না। পাওয়ার ফুটবল খেলতে ও পছন্দ করে। একজন ডিফেন্ডারের কাছ থেকে এটাই তো প্রত্যাশিত।’’

ভারতের স্টপারের সবচেয়ে বড় গুণ কী? সন্দীপ বলেন,‘‘ওর হার না মানা মানসিকতাই ওকে সাফল্য এনে দিয়েছে। বাধা যতই কঠিন হোক, সন্দেশ কোনও সময়তেই হার মানে না। হৃদয় দিয়ে ফুটবলখেলে। গোটা দলটাকেই দেখছি নিজেদের উজাড় করে দিচ্ছে।’’

স্তিমাচের জাদুদণ্ডের ছোঁয়ায় দলটার আত্মবিশ্বাস আকাশ ছুঁয়েছে। নিজেদের পেনাল্টি বক্সের সামনে একাধিক গ্রাউন্ড পাস খেলার মধ্যেই প্রমাণিত এই ভারত ভয় পায় না কাউকে। সন্দীপ বলছেন, ‘‘স্তিমাচের সাফল্য তো এখানেই। দলটাকে একটা সুতোয় বাঁধতে চাইছেন। ইউরোপীয় ঘরানার যে আক্রমণাত্মক ফুটবল তার বীজই বুনতে চাইছেন ভারতে। ওঁর মতো কোচকে সময় দেওয়া দরকার।’’

রেনেডিও কোচের ভূমিকার কথা বলছিলেন। এক বাক্যে তিনি স্বীকার করে নিলেন, সুনীল ছেত্রীর এই ভারত তাঁদের সময়ের থেকে অনেক এগিয়ে। রেনেডিদের সময়ে এ রকম টেকনিক্যাল বিষয়ের দিকে জোর দেওয়া হত না। তাঁর মতে, আইএসএলবদলে দিয়েছে ভারতীয় ফুটবলের মুখচ্ছবি। সুপার লিগের জন্য এ দেশে প্রচুর ভাল ডাইটেশিয়ান আসছেন। বদল হয়েছে ফুটবলারদের খাদ্যাভাসেও। ট্রেনিং যন্ত্রাদিও এখন বিশ্বমানের। সব মিলিয়ে কাতারে ভারতের এই দুরন্ত পারফরম্যান্স।

আরও পড়ুন: গোল করতে উঠে গোল খেয়ে একদিন ভিলেন হয়েছিলেন এই গুরপ্রীতই

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন