আই লিগ
Mohun Bagan

‘বাগানই মনে হচ্ছে চ্যাম্পিয়ন’

গত কয়েকটি ম্যাচে পারফরম্যান্সের নিরিখে রবিবাসরীয় ডার্বিতে মোহনবাগানকেই ফুটবল বিশেষজ্ঞেরা এগিয়ে রেখেছিল। আমি অবশ্য সতর্ক ছিলাম।

Advertisement

শ্যাম থাপা

শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:৪০
Share:

মোহনবাগানের গোলদাতা জোসেবা বেইতিয়া ও পাপা বাবাকর জিওয়ারার উল্লাস। ছবি: সুমন বল্লভ

মোহনবাগান ২ • ইস্টবেঙ্গল ১

Advertisement

আই লিগের প্রথম ডার্বিতে মোহনবাগানের জয় যতটা আনন্দ দিচ্ছে, ঠিক ততটাই হতাশ আমার আর এক ক্লাব ইস্টবেঙ্গলকে দেখে।

ডার্বির ভবিষ্যদ্বাণী করা খুব কঠিন। শক্তির বিচারে যে-দলকে সবাই এগিয়ে রাখছে, ম্যাচের দিন তারাই মুখ থুবড়ে পড়েছে। খেলোয়াড় জীবনে বহুবার আমার এই অভিজ্ঞতা হয়েছে। এ বারেই ব্যতিক্রম। ফেভারিট হিসেবে মাঠে নেমেই বাজিমাত করল জোসেবা বেইতিয়ারা।

Advertisement

গত কয়েকটি ম্যাচে পারফরম্যান্সের নিরিখে রবিবাসরীয় ডার্বিতে মোহনবাগানকেই ফুটবল বিশেষজ্ঞেরা এগিয়ে রেখেছিল। আমি অবশ্য সতর্ক ছিলাম। ভেবেছিলাম, মোহনবাগানের পক্ষে এত সহজ কিন্তু হবে না ডার্বি জেতা। আমি নিজে দীর্ঘদিন ইস্টবেঙ্গলে খেলেছি। পরিস্থিতি যতই প্রতিকূল থাক, ডার্বির আগেই ছবিটা সম্পূর্ণ বদলে যেত লাল-হলুদ শিবিরে। কলকাতা ময়দানের তো প্রবাদই আছে, পিছিয়ে থাকা ইস্টবেঙ্গল যেন খোঁচা খাওয়া বাঘ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই ইস্টবেঙ্গল যে এতটা বদলে যাবে, ভাবতে পারিনি।

ডার্বিতে ফ্রান গঞ্জালেসরা শুধু জিতল বললে কম বলা হবে, আই লিগের খেতাবি দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে গেল। মোহনবাগান আই লিগ না-জিতলেই বরং আমি অবাক হব।

আই লিগে এই মরসুমে শুরু থেকেই মোহনবাগানের খেলা আমাকে মুগ্ধ করেছে। চার্চিলের বিরুদ্ধে যে-ম্যাচটা হেরেছিল, সেটাতেও দুর্দান্ত খেলেছিল বেইতিয়ারা। দলটার সব বিভাগেই দারুণ ভারসাম্য। এর জন্য কৃতিত্ব দিতেই হবে কোচ কিবু ভিকুনাকে। স্পেনীয় কোচের রণনীতিতে আমি মুগ্ধ। মনে হচ্ছে যেন সবুজ ঘাসে আলপনা দিচ্ছে শেখ সাহিল, নংদোম্বা নওরেম, ফ্রান, বেইতিয়ারা। ঠিক ততটাই শক্তিশালী রক্ষণ। আক্রমণ ভাগে কিছুটা সমস্যা হচ্ছিল। কারণ, কলকাতা লিগে সালভা চামোরো দুর্দান্ত খেললেও আই লিগে ছন্দে হারিয়ে ফেলেছিল। দ্রুত ওর জায়গায় পাপা বাবাকর জিওয়ারাকে সই করিয়ে তা মেরামত করেছে মোহনবাগান। রবিবার এই বেইতিয়া-পাপা গোল করেই জেতাল মোহনবাগানকে। অসাধারণ খেলল নওরেম, ফ্রান।

ফুটবল এগারো জনের খেলা। এক বা দু’জনের উপরে নির্ভর করে হয়তো একটা-দু’টো ম্যাচ জেতা যায়। কিন্তু সব ম্যাচে তা সম্ভব নয়। ১৭ মিনিটে বেইতিয়ার প্রথম গোলটা দুর্দান্ত বোঝাপড়ারই ফসল। ইস্টবেঙ্গলের ডিফেন্ডারদের পেনাল্টি বক্সের এক কোণে টেনে নিয়ে গিয়ে নওরেম বল ভাসিয়ে দিয়েছিল পিছনে ফাঁকায় দাঁড়ানো বেইতিয়ার উদ্দেশে। ঠান্ডা মাথায় গোল করে স্পেনীয় তারকা। ৬৪ মিনিটে বেইতির কর্নারে মাথা ছুঁইয়ে গোল করে ২-০ করে পাপা।

প্রথম গোলটার ক্ষেত্রে ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্ডারদের খুব একটা দায়ী করা যায় না। কিন্তু পাপা যে-ভাবে ছ’গজ পেনাল্টি বক্সের মধ্য থেকে বিনা বাধায় হেড করে বল জালে জড়িয়ে দিল, তা বিস্মিত হওয়ার মতোই। ওকে বাধা দেওয়ার জন্য কোনও ডিফেন্ডার কেন ছিল না, এটাই আমার কাছে রহস্য। সুব্রত ভট্টাচার্য বা মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যের মতো ডিফেন্ডার থাকলে পাপার মাথায় বল পৌঁছতই না।

মোহনবাগানের ঠিক উল্টো ছবি ইস্টবেঙ্গলে। রক্ষণ থেকে আক্রমণ ভাগ— কোনও কিছুই ঠিক নেই। কিবুর মতো লাল-হলুদের কোচ আলেসান্দ্রো মেনেন্দেস গার্সিয়াও স্পেনীয়। রিয়াল মাদ্রিদ রিজার্ভ দলে কোচিং করিয়েছেন। জোসে মোরিনহোর সহকারীও ছিলেন। অথচ তাঁর দলের খেলার মধ্যে কোনও পরিকল্পনার ছাপ চোখে পড়ল না। শুরু থেকেই লক্ষ্য ছিল, মোহনবাগানকে গোল করতে না-দেওয়া। তাতে নিজেরা গোল করতে না-পারলেও ক্ষতি নেই। এর মধ্যেই গতির বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটা সুযোগ পেয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। কখনও লালরিনডিকা রালতে। কখনও আবার খাইমে সান্তোস কোলাদোরা অবিশ্বাস্য ভাবে গোল নষ্ট করল।

ইস্টবেঙ্গলকে চেনা গেল ০-২ পিছিয়ে পড়ার পরে। এই সময় আলেসান্দ্রো একটা ভাল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। পিন্টু মাহাতোর জায়গায় সদ্য যোগ দেওয়া প্রতিশ্রুতিমান এডমুন্ড লালরিনডিকাকে নামান। ওর পাস থেকেই গোল করে ৭১ মিনিটে ব্যবধান কমান মার্কোস খিমেনেস দে লা এসপারা মার্তিনরা। এ ছাড়া পুরো ম্যাচে এই স্পেনীয় স্ট্রাইকারের আর কোনও অবদান নেই। হাঁটুতে চোট পেয়ে এডমুন্ড উঠে যাওয়ার পরে ফের বিবর্ণ ইস্টবেঙ্গল আমি বিস্মিত, মার্কোসের মতো স্ট্রাইকারকে কেন এখনও বয়ে বেড়ানো হচ্ছে তা আমার কাছে রহস্য। ওর জায়গায় ভাল মানের বিদেশি স্ট্রাইকার সই না-করালে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখাই উচিত নয় ইস্টবেঙ্গলের।

মোহনবাগান: শঙ্কর রায়, আশুতোষ মেহতা (গুরজিন্দর কুমার), ফ্রান মোরান্তে, ড্যানিয়েল সাইরাস, ধনচন্দ্র সিংহ, ফ্রান গঞ্জালেস, শেখ সাহিল (লালরাম চুলোভা), নংদাম্বা নওরেম, জোসেবা বেইতিয়া, সুহের ভি পি (ব্রিটো পি এম), পাপা বাবাকর জিয়োয়ারা।

ইস্টবেঙ্গল: লালথুম্মাউইয়া রালতে, কমলপ্রীত সিংহ, মেহতাব সিংহ, মার্তি ক্রেসপি, অভিষেক আম্বেকর, কাশিম আইদারা, লালরিনডিকা রালতে, পিন্টু মাহাতো (এডমন্ড লালরিনডিকা/ অভিজিৎ সরকার), খাইমে সান্তোস কোলাদো, খুয়ান মেরা গঞ্জালেস, মার্কোস দে লা এস্পারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন