স্বপ্নের অভিষেকের পর হার্দিক

একশো চল্লিশে বল করা আমার অভ্যেস হয়ে যাচ্ছে

বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়কের কাছ থেকে ওয়ান ডে ক্যাপ প্রাপ্তি। আর এক বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়কের নেতৃত্বে ওয়ান ডে অভিষেক। দেশের হয়ে প্রথম ওয়ান ডে ম্যাচটা এমনিতেই স্মরণীয় হয়ে থাকা উচিত হার্দিক পাণ্ড্যর। রবিবারের ধর্মশালার পরে আরও বেশি করে।

Advertisement
ধর্মশালা শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৬ ০৪:৫১
Share:

বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়কের কাছ থেকে ওয়ান ডে ক্যাপ প্রাপ্তি। আর এক বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়কের নেতৃত্বে ওয়ান ডে অভিষেক। দেশের হয়ে প্রথম ওয়ান ডে ম্যাচটা এমনিতেই স্মরণীয় হয়ে থাকা উচিত হার্দিক পাণ্ড্যর।

Advertisement

রবিবারের ধর্মশালার পরে আরও বেশি করে। কারণ প্রথম ওয়ান ডে-তে শুধু তিনটে উইকেটই তুলে নেননি হার্দিক। পাশাপাশি পেয়েছেন প্রাক্তন এবং সতীর্থদের প্রশংসাও। এবং ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হার্দিকের বোলিংয়ে ধারাবাহিকতা ছিল না। সেই প্রেক্ষিতে দেখলে রবিবার মহেন্দ্র সিংহ ধোনি যখন তাঁর হাতে নতুন বল তুলে দিলেন, তখন তাঁর উপর চাপ থাকাটা ছিল খুব স্বাভাবিক। টি-টোয়েন্টি অভিষেকে যে প্রথম ওভার বল করেছিলেন, সেটা শেষ হয়েছিল এগারো বলে। পাঁচটা ওয়াইড, একটা করে বাউন্ডারি এবং ওভার বাউন্ডারি। ধর্মশালার চিত্রনাট্যটাও শুরুতে একই দিকে এগোচ্ছিল। প্রথম তিনটে বলের দুটোয় বাউন্ডারি, পঞ্চমটায় আবার। কিন্তু টি-টোয়েন্টি অভিষেকের দুঃস্বপ্ন পুরোপুরি ফিরে আসার আগে শেষ বলে মার্টিন গাপ্টিল ক্যাচ তুলে দিলেন স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকা রোহিত শর্মার হাতে।

Advertisement

টি-টোয়েন্টি অভিষেকের মতো এ বার হার্দিক আতঙ্কিত হয়ে পড়েননি। বাউন্ডারি হজম করেও নিজের লাইনে বল করে গিয়েছেন। এবং তার পুরস্কারও পেয়েছেন।

‘‘বলটা অনেক কিছু করছিল। ভাল সুইং করছিল। জানতাম বলটা ঠিকঠাক জায়গায় রাখতে পারলে কিছু একটা হবেই,’’ ম্যাচের শেষে বোর্ডের ওয়েবসাইটকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন হার্দিক। তাঁর আরও ব্যাখ্যা, ‘‘দুটো বলে চার হয়ে গেল। তবু আস্থা হারাইনি। ক্যাপ্টেন সব সময় আমাকে সমর্থন করে গিয়েছে। আমাকে এমন কিছু বলেনি যাতে আমি নার্ভাস হয়ে পড়ি। আমি চাইছিলাম গাপ্টিল ড্রাইভ করুক। শেষ পর্যন্ত স্লিপে ওকে ধরে ফেললাম।’’

কেরিয়ারের প্রথম ওভারে উইকেটের পাশাপাশি আরও দু’জন শিকার হয়েছেন হার্দিকের। ওয়ান ডে স্পেশ্যালিস্ট হিসেবে নিউজিল্যান্ডে যোগ দেওয়া কোরি অ্যান্ডারসন এবং লিউক রঙ্কি। দু’জনের কাউকেই দু’অঙ্কে পৌঁছতে দেননি হার্দিক। পরে তিনি বলছিলেন, ‘‘সত্যিই স্বপ্নের অভিষেক ছিল। দেশের হয়ে ওয়ান ডে খেলতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হচ্ছে। এর চেয়ে ভাল আর কিছু হতে পারত না। নেটে বল করার সময় কেন জানি না মনে হচ্ছিল, এ বার ওয়ান ডে খেলবই। তবু কোথাও গিয়ে একটা টেনশনও ছিল। মনে হচ্ছিল, যদি টিমে না থাকি?’’

শেষ পর্যন্ত তাঁর আশঙ্কা অমূলক প্রমাণ করে বরোদার অলরাউন্ডারের হাতে ওয়ান ডে ক্যাপ তুলে দেন কপিল দেব। যিনি নিজে আটত্রিশ বছর আগে একই দিনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটিয়েছিলেন। ‘‘ওই মুহূর্তটা অনেক দিন মনে থাকবে। কপিল দেবের মতো এক ব্যক্তিত্ব আমাকে ওয়ান ডে ক্যাপ তুলে দিচ্ছেন, ভাবাই যায় না। উনিও একই দিনে টেস্ট ক্যাপ পেয়েছিলেন। সব মিলিয়ে দারুণ অনুভূতি,’’ বলে দিয়েছেন তেইশের হার্দিক।

তিনি যে লাইনে বল করছিলেন, তার সঙ্গে টেস্ট ক্রিকেটের নিখুঁত লাইনের সাদৃশ্য খুঁজে পাচ্ছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। তবে রবিবার হার্দিকের বোলিংয়ের সবচেয়ে নজরকাড়া দিক সম্ভবত তাঁর গতি। গড়ে ১৩৮.৭ কিলোমিটারে বল করছিলেন হার্দিক। কয়েকটা বল তো ১৪০ কিলোমিটার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ‘‘সত্যি বলতে কী, একশো চল্লিশে বল করার কোনও নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে বল করছিলাম না। মাথায় এটাই ছিল যে, ঠিক জায়গায় বলটা রাখতে হবে। তবে এই গতিতে যে বল করতে পারছি, সেটা দারুণ ব্যাপার। একশো চল্লিশে বল করাটা আস্তে আস্তে অভ্যেস হয়ে যাচ্ছে,’’ বলছেন হার্দিক।

ধোনিও ম্যাচের পরে বলেছেন যে, বলের গতি বাড়িয়ে নেওয়ার জন্যই হার্দিককে দিয়ে বোলিং ওপেন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। ‘‘আমরা ভেবেছিলাম ওকে তিন জন সিমারের একজন হিসেবে ব্যবহার করব। ব্যাটসম্যানদের তাক লাগিয়ে দিতে পারে হার্দিক। জোরে বল করতে পারে, মুভমেন্টও আছে। যে উইকেটে অন্য বোলাররা সুইং পায় না, সে সব পিচেও সুইং করাতে পারে,’’ দরাজ সার্টিফিকেট ধোনির।

শুধু বোলিং নয়, আধুনিক ক্রিকেট ম্যানুয়্যাল মেনে ফিটনেস নিয়েও যথেষ্ট খাটছেন হার্দিক। দেখতে রোগা হলেও তাঁর দাবি, তিনি আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি শক্তিশালী। ‘‘ফাস্ট বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে ফিট হওয়াটা খুব দরকার। আমি তাই নিজের শক্তি বাড়াতে চেয়েছিলাম। মনে হয়েছিল, আমার বোলিংকে শুধু একটা জিনিসই সাহায্য করতে পারে। সেটা হল ফিটনেস। আইপিএলের পর দু’মাস প্রচুর খেটেছি,’’ বলছেন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের সদস্য।

স্বপ্নের অভিষেকের পরে বর্তমান যতটা ঝকঝকে, হার্দিকের ভবিষ্যতও আপাতত ততটাই উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। সামনের বছর জুনে লন্ডনে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। যেখানে সিমারের স্লটে নিজের দাবিটা বেশ জোরালো করে রেখেছেন হার্দিক। সীমিত ওভারের অধিনায়কও তাই মনে করেন। ধোনি বলে দিচ্ছেন, ‘‘চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে মাত্র আটটা ওয়ান ডে পাচ্ছি। আমরা দেখে নিতে চাই, নানা পরিবেশ আর পরিস্থিতিতে হার্দিকের প্রতিক্রিয়া কেমন হয়। কত তাড়াতাড়ি ও নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে। যদি রবিবারের পারফরম্যান্সটা ধরে রাখতে পারে, তা হলে তিন পেসারের মধ্যে ও আমাদের প্রথম পছন্দ হতেই পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন