ভারতীয় ক্রিকেটে তিনি বিরাট কিছু করেছেন এমনটা তাঁর অতি বড় ভক্তও বলবেন না। দীর্ঘদিন খেলে গিয়েছেন এমনটাও নয়। কিন্তু ঘুরে ফিরে তাঁর নাম চলে আসে ভারতীয় ক্রিকেটের যে কোনও আলোচনায়। কারণ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ইতিহাসে তিনিই প্রথম বোলার যার নামের পাশে লেখা হয়েছিল হ্যাটট্রিক। ঠিক ২৯ বছর আগের ঘটনা। ১৯৮৭ সালের ২১ অক্টোবর। হ্যাটট্রিক করে বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসে নাম লিখিয়ে ফেলেছেন তিনি।
বিশ্বকাপের ২৪তম ম্যাচ চলছিল নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। ৪২তম ওভারে বল করতে এসেছিলেন চেতন শর্মা। তাঁর তখন ষষ্ঠ ওভার। কিউইরা ১৮২/৫। শেষ পর্যন্ত ন’উইকেটে কিউইরা করেছিল ২২১। যখন বড় রানের লক্ষ্যে পৌঁছনোর স্বপ্নে রীতিমতো স্বস্তিতে নিউজিল্যান্ড তখনই বল হাতে ইতিহাস তৈরি করে ফেললেন চেতন শর্মা। একটা চমক দিয়েছিলেন অধিনায়ক কপিল দেব। মনোজ প্রভাকরের বদলে নিয়ে এসেছিলেন চেতন শর্মাকে। প্রভাকরের তখনও বাকি পাঁচ ওভার। একটি উইকেটও নিয়েছিলেন। কিন্তু নিউজিল্যান্ডকে চমক দিতেই বোলিংয়ে হঠাৎই এই পরিবর্তন করেছিলেন কপিল।
তার পরই ইতিহাস। ওভারে চতুর্থ বলে রুদারফোর্ড বল বুঝতে না পারাই সেই বল তাঁর ব্যাট আর প্যাডের মধ্যে দিয়ে মিডল স্ট্যাম্প উড়িয়ে দেয়। সেখানে ব্যাট করতে নামেন স্মিথ। ফুট ওয়ার্কের ভুলে চেতন শর্মার কাটার এ বার উড়িয়ে দেয় অফ স্টাম্প। চেতন শর্মার হ্যাটট্রিক বলের সামনে তখন দাঁড়িয়ে চ্যাটফিল্ড।
হ্যাটট্রিক বল করার আগে অধিনায়কের সঙ্গে সেকেন্ড খানেকের বাক্যালাপ আর তার পরই ইতিহাস। ফিল্ডিংয়ে ছোট্ট পরিবর্তনও করেন কপিল দেব। সেই বলেই যে লেখা ছিল বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ইতিহাস কে জানত। কে জানত কপিলের একটা সিদ্ধান্ত বিশ্ব ক্রিকেটে এই পর্যায়ে উঠে আসতে পারে। শেষ বলটা সরাসরি গিয়ে লাগে স্টাম্পে। আউটের আবেদন জানিয়ে লাফিয়ে ওঠেন শর্মা। গ্যালারিতে তখন পিন পড়লেও শব্দ শোনা যাবে। আম্পায়ার আঙুল তুলতেই উচ্ছ্বাসের বিস্ফোরণ।
ভারতের সামনে ২২২ রানের লক্ষ্য রেখেছিল নিউজিল্যান্ড। যেটা মাত্র ৩২.১ ওভারে এক উইকেট হারিয়ে তুলে ফেলে টিম কপিল। গাওস্করের অপরাজিত ১০৩ রান ও শ্রীকান্তের ৭৫ই কাজের কাজটি করে দিয়েছিল। অপরাজিত ৪১ রান করে শেষ করেন আজহারউদ্দিন।
ভারতের জয় বা সুনীল গাওস্করের সেঞ্চুরি কোনওটাই যেন এই কৃতিত্বকে ছাপিয়ে যেতে পারেনি আজ পর্যন্ত। হয়তো পারবেও না কখনও। এই দিনটি লেখা থাকবে চেতন শর্মার নামেই। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের প্রথম হ্যাটট্রিক ম্যান হিসেবেও থেকে যাবেন তিনি।
আরও খবর
টেস্ট বোলিংয়ে শীর্ষস্থান ধরে রাখলেন অশ্বিন