কোহালির কানপুরে দাপাচ্ছেন এখন অন্য বিরাট

গৌরব চান্দনাকে মনে পড়ে? দেশজুড়ে শাহরুখ খানের কোটি-কোটি ভক্তকুলের পক্ষে গৌরব চান্দনা নামের ছেলেটাকে ভোলা খুব মুশকিল! ‘ফ্যান’ সিনেমায় যে যুবক সুপারস্টার আরিয়ান খন্নার পিছনে সর্বত্র ছুটে বেড়াত। শুধু একবার স্বপ্নের মহানায়কের সঙ্গে দেখা করার পাগলামি নিয়ে। স্বপ্নকে শেষ পর্যন্ত বাস্তবের জমিতে আছড়ে পড়তে দেখে যে যুবক ঠিক করে, অপমানের প্রতিশোধ সে নেবে।

Advertisement

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়

কানপুর শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৫৬
Share:

বিরাট কোহালির ‘লুক অ্যালাইক’ গৌরব নারঙ্গ।

গৌরব চান্দনাকে মনে পড়ে?

Advertisement

দেশজুড়ে শাহরুখ খানের কোটি-কোটি ভক্তকুলের পক্ষে গৌরব চান্দনা নামের ছেলেটাকে ভোলা খুব মুশকিল!

‘ফ্যান’ সিনেমায় যে যুবক সুপারস্টার আরিয়ান খন্নার পিছনে সর্বত্র ছুটে বেড়াত। শুধু একবার স্বপ্নের মহানায়কের সঙ্গে দেখা করার পাগলামি নিয়ে। স্বপ্নকে শেষ পর্যন্ত বাস্তবের জমিতে আছড়ে পড়তে দেখে যে যুবক ঠিক করে, অপমানের প্রতিশোধ সে নেবে। নেবে, আরিয়ান খন্নারই হুবহু প্রতিভূ হিসেবে নিজেকে পেশ করে। যা করা তার পক্ষে খুব কঠিন ছিল না। আরিয়ান খন্না আর গৌরব চান্দনাকে দেখতে তো হুবহু এক।

Advertisement

ইংরেজিতে, লুক অ্যালাইক।

কানপুরের গৌরব নারঙ্গের অবশ্য নিজের মহানায়কের উপর কোনও প্রতিশোধ নেওয়া-টেওয়ার ইচ্ছে নেই। নিজে যে মহানায়কের কপি-পেস্ট খুব ভাল জানেন। কারণ তাঁর স্বপ্নের নায়ক তো তাঁকে একবারও বলেননি যে, ‘আমার জীবনের পাঁচ সেকেন্ডও কেন তোমাকে দেব?’ উল্টে টিম হোটেলে দেখা করে সেলফি তুলেছেন। নিরাপত্তারক্ষীদের কড়াকড়িতে দাঁড়িয়ে কথাবার্তা চালানো যায়নি এখনও, কিন্তু ফ্যানের একটা ইচ্ছে মিটিয়ে দিয়েছেন। গৌরব নারঙ্গ তাই সিনেমার গৌরব চান্দনার মতো কুকীর্তির কথা ভাবতে পারেন না। একটু-আধটু দুষ্টুমি, ব্যস।

গৌরব নারঙ্গ আসলে বিরাট কোহালির কপি-পেস্ট। হুবহু। গোটা কানপুরে তীব্র শোরগোল ফেলে যিনি বিরাট কোহালি সেজে ঘুরে বেড়াচ্ছেন!

ভারতীয় টিমের হোটেলে চলে যাচ্ছেন যখন খুশি। গাড়ি থেকে নামামাত্র লোকজন ঘিরে ধরছে। ভিড় থেকে আবদার আসছে, ‘স্যর, একটা সেলফি প্লিজ!’

গ্রিন পার্ক পুলিশ তাঁকে দেখে নাকি রীতিমতো সেলাম ঠুকে গেট ছেড়ে দিচ্ছে!

গ্যালারিতে গিয়ে বসলে লোকে ‘কোহালি, কোহালি’ করে টেনে দৌড়চ্ছে তাঁর দিকে। ভাবছে, কোনও কারণে মাঠ ছেড়ে ভারত অধিনায়ক গ্যালারিতে এসে পড়েছেন বুঝি!

রাস্তাঘাটে চলাফেরাই নাকি দায় হয়ে উঠছে। শহরের যে প্রান্তে যাচ্ছেন, যত রাতেই বেরোচ্ছেন, লোকে ভাবছে কোহালির কানপুর দেখার ইচ্ছে হয়েছে বলে বেরিয়েছেন!

স্বাভাবিক। ভারত অধিনায়কের অসম্ভব ফিট চেহারাটা ছাড়া সবই তো এক। মাথার চুল থেকে গালের দাড়ি, সানগ্লাস পরার স্টাইল থেকে হাঁটাচলা সবই তো এক।

প্রিয় নায়কের সঙ্গে ভক্তের সেলফি।

“আরে, এখন এটা আরও বেশি হচ্ছে। গত পাঁচ-ছ’দিন ধরে ইন্ডিয়া টিম এখানে। লোকে আমাকে দেখলে ভাবছে আমিই কোহালি। পরশুই টিম হোটেল গিয়েছিলাম। গাড়ি থেকে নামামাত্র লোকে সেলফি তোলার জন্য পাগল হয়ে গেল! আমিও বলে দিলাম, ঠিক আছে। পরে ফেসবুকে একজনকে দেখলাম, বিরাটের সঙ্গে ছবি তুলে অসম্ভব খুশি। তুলেছে কিন্তু আদতে আমার সঙ্গে!” শুক্রবারের গ্রিন পার্কে দাঁড়িয়ে বলছিলেন কোহালির ‘ডাবল’। তা, ভুলটা ভাঙাচ্ছেন না কেন? এটা ঠিক হচ্ছে? শুনে এ বার চটজলদি উত্তর আসে, “অসুবিধে কী? আমি না হয় একটু বিখ্যাত হচ্ছি। বিরাটের ক্ষতি তো করছি না।”

শোনা গেল, ক্রিকেট-সার্কিটে গৌরবকে প্রথমে নাকি ধরেন হর্ষ ভোগলে। গত বছর কানপুরে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের সময়। কমেন্ট্রি করতে করতে বলেও ফেলেন। নিজের পাড়ায় বহু আগে থেকেই বিখ্যাত ছিলেন, কিন্তু হর্ষের ওই মন্তব্য নাকি গৌরবের জনপ্রিয়তা আরও বাড়িয়ে দেয়। কোহালির সঙ্গে দেখা হওয়াও তখনই, গত বছর। “টিম হোটেলে গিয়েছিলাম। বিরাট আমাকে লবিতে দাঁড়াতে বলেছিল। এসে একটা সেলফি তুলল। চমকে গিয়েছিল একটু। তবে বিশেষ কথা বলার সময় পায়নি কারণ সিকিওরিটি প্রচণ্ড ছিল। কিন্তু আমার জন্য ওটুকুই যথেষ্ট।”

আর এ বার?

এ বারের ইচ্ছেটা একটু আলাদা, চাহিদা একটু অন্য। গৌরব চান্দনার মতো সোহন হালুয়া নিয়ে নয়, গৌরব নারঙ্গ মহানায়কের সঙ্গে দেখা করতে চান বিরাটেরই মুখ আঁকা এক টি-শার্ট নিয়ে। জন্মদিনে ও রকমই একটা কানপুরের গৌরবকে উপহার দিয়েছিল বন্ধুবান্ধবদের কেউ। ‘কোহালি-টু’-র মাথায় আইডিয়াটা তখনই আসে। “একটা অটোগ্রাফ নেব। একটা থ্যাঙ্কস দেব। একটু কথা বলব। আর টি-শার্টটা উপহার দেব। ব্যস, আর কিছু চাই না,” দৃশ্যটা কল্পনা করেই যেন আবিষ্ট হয়ে পড়েন গৌরব। বলতে থাকেন, “ব্যবসা করি আমি। এত নামডাক আমার হতই না যদি কোহালির মতো দেখতে না হতাম। ফেসবুকে দেড়শো মেয়ের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এখনও পড়ে আছে, জানেন? কোহালির জন্য আমার এত কিছু, তাঁর জন্য এই উপহারটা দিতেই পারি। ওকে কে না ভালবাসে? কে না ফ্যান ওর?”

শুধু একটাই যা দুঃখ। একটাই যা আক্ষেপ। বিয়েবাড়ি গেলে মহিলা-মহলে এত যে হইচই পড়ে যায়, উনিশ থেকে উনচল্লিশ নানা বয়সি মহিলার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পড়ে থাকে, তার পরেও ওটা হল না। আসলটা হল না। মহিলা-বন্ধু প্রচুর, কিন্তু ‘স্পেশ্যাল ওয়ান’ একজনও নেই। “কোহালির থেকে তিনটে জায়গায় আমি আলাদা। ওর মতো ক্রিকেট খেলতে পারি না। বডিটা নেই। আর আমার জীবনে এখনও কোনও অনুষ্কা শর্মা নেই,” কথাটা ছুড়ে হাসতে-হাসতে গ্যালারির দিকে দৌড় দেন কোহালি-টু। নিশ্চয়ই কাউকে না কাউকে নতুন করে চমকে দিতে।

টু নয়, ওয়ান হয়ে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন