প্রফুল্ল অপসারণে লোঢা আনার ডাক ফুটবলেও

ক্রিকেট প্রশাসনকে স্বচ্ছ রাখতে এমনই সুপারিশ বিচারপতি আর এম লোঢার। যার জেরে সরতে হয়েছে শরদ পওয়ার থেকে এন শ্রীনিবাসনকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:৪৭
Share:

গদিচ্যূত: কয়েক দিন আগে কলকাতাতেই ফিফা প্রেসিডেন্ট ইনফান্তিনোর সঙ্গে দেখা গিয়েছিল প্রফুল্ল পটেল-কে। আর দেখা যাবে এই ছবি? ফাইল চিত্র

তিন বছর ক্রিকেট প্রশাসনে থাকার পরে যেতে হবে ‘কুলিং অফ’-এ। মন্ত্রী বা আমলা কেউ ক্রিকেট প্রশাসনে থাকতে পারবেন না। রাজ্য বা জাতীয় ক্রীড়াসংস্থায় আলাদা আলাদা ভাবে ক্ষমতায় থাকার সর্বোচ্চ মেয়াদ নয় বছর। তবে তা কখনওই এক টানা নয়।

Advertisement

ক্রিকেট প্রশাসনকে স্বচ্ছ রাখতে এমনই সুপারিশ বিচারপতি আর এম লোঢার। যার জেরে সরতে হয়েছে শরদ পওয়ার থেকে এন শ্রীনিবাসনকে। মঙ্গলবার প্রফুল্ল পটেল নিয়ে আদালতের নির্দেশের পর কথা উঠছে, ফুটবল প্রশাসনেও কেন লোঢা কমিটির সুপারিশ কার্যকর হবে না!

চুনী গোস্বামী প্রসঙ্গ শুনেই বলেন, ‘‘লোঢা কমিটির সুপারিশ প্রয়োজন ফুটবল প্রশাসনকে স্বচ্ছ রাখতে। একই পদে ক্রীড়া-প্রশাসকরা দীর্ঘদিন থাকলে কাজের গতি কমে যায়। আর মন্ত্রী, আমলারা থাকবেন কেন?’’ চুনী যদিও লোঢা কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, সত্তর বছর বয়স হয়ে গেলে পদ ছাড়ার বিষয়টি সমর্থন করেন না।

Advertisement

প্রফুল্ল পটেল সেখানে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনে ২০০৯ সালে যখন প্রবল ভাবে এলেন তখন তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। ফেডারেশনের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সি আকস্মিক অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে। এই পরিস্থিতিতেই ভারতীয় ফুটবলে সর্বোচ্চ কুর্সি চলে যায় প্রফুল্লর দখলে। ফেডারেশনে প্রফুল্ল-রাজ টানা অষ্টম বছর চলছে। দিল্লি হাই কোর্ট তাঁকে সরে যাওয়ার নির্দেশ না দিলে আর কয়েক মাস পরেই তা নয় বছরে পা দিত।

প্রফুল্ল জমানায় সাফল্য সেই সাফ কাপ বা সার্ক পর্যায়ে। অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে চব্বিশটি দেশের মধ্যে চব্বিশতম স্থান প্রাপ্তি। নিউক্যালিডোনিয়ার মতো অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে নতুন খেলতে আসা দেশ যখন জাপানকে রুখে দিচ্ছে, তখন কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে জ্যাকসন সিংহের গোল নিয়েই আনন্দে মাতোয়ারা প্রফুল্লরা। তাঁরা নিজেরাও জানেন না কবে ফের অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে খেলবে ভারত বা খেলতে গেলে কোন পথে হাঁটতে হবে। ফিফার টেকনিক্যাল স্টাডি গ্রুপের সদস্য সোল ক্যাম্পবেল যুবভারতীতে বিশ্বকাপ ফাইনালের দিন বলে গেলেন ভারতীয় ফুটবল পঞ্চাশ থেকে একশো বছর পিছিয়ে। কিন্তু প্রফুল্ল পটেলরা তা শোনেন না। গত আট বছর কেবল পদ আঁকড়ে ফেডারেশনকে ভোট-রাজনীতির আখড়া বানিয়েছেন।

এ রাজ্যে ফুটবল নিয়ামক সংস্থা আইএফএ-র সচিব উৎপল গঙ্গোপাধ্যায় সংস্থার পদে রয়েছেন ২০০১ সাল থেকে। সংস্থার সভাপতি সুব্রত দত্তও আইএফএ ও এআইএফএফ মিলিয়ে পরোক্ষ ভাবে ফুটবলের সঙ্গে জড়িয়ে ১৯৯৬ সাল থেকে। বছর কয়েক আগে ঢাকঢোল পিটিয়ে উৎপলবাবুরা শুরু করেছিলেন আইএফএ অ্যাকাডেমি। সেই অ্যাকা়ডেমি দারুণ শুরু করেও আজ বন্ধ। কিন্তু কর্তারা রয়ে গিয়েছেন।

বাংলার রঞ্জি ট্রফি জয়ী অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘লোঢা কমিটির সুপারিশ মতো রাজ্য ও জাতীয় সংস্থায় তিন বছরের পর ‘কুলিং অফ’-এ যাওয়াটা জরুরি। সবাইকে সুযোগ দিতে হবে।’’ প্রাক্তন ফুটবলার ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়ও সম্বরণের দলে। তিনিও বলছেন, ‘‘একই লোক বছরের পর বছর প্রশাসন চালিয়ে যাবেন, আর টেকনিক্যাল লোক প্রশাসনে আসার সুযোগ পাবেন না এটা হতে পারে না। লোঢা কমিটির এই সুপারিশ ফুটবলে চালু করার সময় চলে এসেছে। আমি নিজে ফেডারেশনের বিরুদ্ধে এই কারণেই মামলা করেছিলাম।’’

প্রাক্তন অ্যাথলিট সোমা বিশ্বাসও বলছেন, ‘‘প্রশাসকদের বুঝতে হবে ফুটবলারদের জন্য রয়েছেন তাঁরা। কিন্তু এখানে হয় তো তার উল্টোটা।’’

সব শুনে তাই প্রশ্ন জাগে, লোঢার সুপারিশ যদি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়দের মানতে অসুবিধা না হয়, তা হলে সুব্রত দত্তদের সমস্যা কোথায়?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন