এ যেন রূপকথার মতো প্রত্যাবর্তন। বছর কয়েক আগেও গ্রামের বাড়িতে প্রতিবেশীরা যার দিকে বাঁকা ভাবে তাকাত, এখন তারাই পাক পেসার মহম্মদ আমির এবং তাঁর পরিবারকে দেখছে সম্ভ্রমের চোখে।
সাত বছর আগে স্পট ফিক্সিং-এর অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে পাঁচ বছরের জন্য নির্বাসিত করা হয়েছিল মহম্মদ আমিরকে। যে দিনগুলোর কথা আজও ভুলতে পারেন না এই পাক পেসারের দুই ভাই নাভিদ এবং ইজাজ। তাঁরাই এখন বলছেন, ‘‘রবিবার ওভালে নতুন বল হাতে আমিরের স্পেলটাই সমস্ত লজ্জা ধুয়ে পরিবারকে সম্ভ্রমের জায়গায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।’’
লাহৌর থেকে ফোনে নাভিদ সোমবার ভারতীয় প্রচারমাধ্যমকে বলেন, ‘‘রাওয়ালপিন্ডিতে চাঙ্গা বুঙ্গিয়াল গ্রামে তখন থাকতাম আমরা। আমির স্পট ফিক্সিংয়ে যখন দোষী সাব্যস্ত হয়, তখন গ্রামে লোকের সঙ্গে মিশতে বা কথা বলতেই লজ্জা করত। তার পর লাহৌরে চলে আসি আমরা। কিন্তু আমাদের অনেক আত্মীয়ই রয়ে গিয়েছেন রাওয়ালপিন্ডিতে। এখন গ্রামে গেলে ভাইয়ের জন্যই ফের চোখ তুলে সকলের সঙ্গে কথা বলতে পারব।’’
এখানেই না থেমে পাকিস্তানের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের আনন্দে তিনি গড়গড় করে বলে চলেন, ‘‘পাঁচ বছরের নির্বাসন কাটিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার পর আমির চেয়েছিল এমন কিছু পারফরম্যান্স করতে যা ওকে আলাদা ভাবে চিনিয়ে দেবে। রবিবার ওভালে সেটা ও করে দেখিয়ে দিল।’’
আরও পড়ুন: কোচের যাত্রা নিয়ে ধন্দে থাকল দলই
আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবার থেকে উঠে আসা আমিরের। পরিবারে ছয় ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি ষষ্ঠ। এক বছর আগে শাস্তি কাটিয়ে আমির যখন টিমে ফেরেন, তখন পাকিস্তানেই অনেকে বলেছে জাতীয় দলে আমিরকে কোচ মিকি আর্থার বাড়তি সুবিধা দিচ্ছেন। কিন্তু গত বছর এশিয়া টি-টোয়েন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহালির প্রশংসার পরেই সব বন্ধ হয়ে যায়। আর রবিবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনালে নতুন বল হাতে ভারতের তিন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান রোহিত শর্মা, বিরাট কোহালি এবং শিখর ধবনকে প্যাভিলিয়নের রাস্তা দেখিয়ে আমির এখন পাকিস্তানে জাতীয় বীরের মর্যাদা পাচ্ছেন।
আমিরের প্রথম কোচ বাজওয়া বলছেন, ‘‘পাঁচ বছর নির্বাসনের পর মাঠে ফিরে এ ভাবে পারফর্ম করাটা সহজ কাজ নয়। আমির সেই ফিটনেসটা বজায় রাখতে পেরেছে বলেই আজ সাফল্য পাচ্ছে।’’
গত বছরই ব্রিটিশ নাগরিক নারিস খানকে বিয়ে করেছেন আমির। মাঠের বাইরে নারিস আর মাঠের ভিতর শোয়েব মালিকের অভিভাবকত্বই বদলে দিয়েছে আমিরকে। যে প্রসঙ্গে পাক বোর্ডের এক কর্তা বলছেন, ‘‘পাক বোর্ডই শোয়েবকে মেন্টর করে দেয় আমিরের। যার সুফল এখন পাওয়া যাচ্ছে।’’