Sports News

ফুটবল উৎসবের মধ্যেই বড্ড একলা দিল্লির অম্বেডকর স্টেডিয়াম

দিল্লির রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ চোখে পড়তেই ঢুকে পড়েছিলাম চির চেনা অম্বেডকরে। খোলা গেট পেরিয়ে সোজা নেমে পড়া যায় মাঠে। কোনও বাধা নেই। মেন গেটে অম্বেডকরের খোদিত মুখেও ধুলো পড়েছে।

Advertisement

সুচরিতা সেন চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৭ ১২:২৬
Share:

অম্বেদকর স্টেডিয়ামের সেই মাঠ। এখন বড় বড় ঘাসে ভর্তি। —নিজস্ব চিত্র।

বিশ্বকাপের রোশনাইয়ে ধুয়ে যাচ্ছে রাজধানী। কিন্তু, সেই আলোকধারার নীচেই এক খণ্ড অন্ধকার। অম্বেডকর স্টেডিয়াম।

Advertisement

কেমন আছে সে? ফুটবল-ইতিহাস বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে, একা। অথচ, তার শহর আজ মেতেছে বিশ্বকাপে। কিন্তু, তার সঙ্গী কেবলই শূন্যতা!

দিল্লির রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ চোখে পড়তেই ঢুকে পড়েছিলাম চির চেনা অম্বেডকরে। খোলা গেট পেরিয়ে সোজা নেমে পড়া যায় মাঠে। কোনও বাধা নেই। মেন গেটে অম্বেডকরের খোদিত মুখেও ধুলো পড়েছে। মাঠে বড় বড় ঘাস। এত মোটা ঘাসে আর যাই হোক ফুটবল হয় না। যদিও ডিএসএ কর্তৃপক্ষের দাবি, নিয়মিত খেলা হয় এখানে। দিল্লি লিগ, সুব্রত কাপ, অফিস টুর্নামেন্টস— কিছু দিন আগে নাকি ফুটবল উৎসবও হয়েছে এখানে!

Advertisement

আরও পড়ুন

ফিরছে বরিস, কলম্বিয়াকে সমীহ করেই নামছে ভারত

বিশ্বকাপে ৮ ফুটবলার, তবুও মণিপুরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন জেমসের

পাশেই বিরাট গ্যালারি নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ফিরোজ শাহ কোটলা। মাঝে মাঝেই ক্রিকেটের আগমনে উৎসবের আবহ তৈরি হয় সেই মাঠে। তখনও একা দাঁড়িয়ে সেই আলোকমালার ছটা গায়ে মাখতে পারে না ফুটবলের অম্বেডকর। মাঠেই দেখা হয়ে গেল দিল্লি সকার অ্যাসোসিয়েশনের এক কর্তার সঙ্গে। সঙ্গে ইস্টবেঙ্গলে খেলে যাওয়া উইলিয়াম। কত কত স্মৃতি মনের মধ্যে নিয়ে ওঁরা আগলে রাখেন এই অম্বেডকরকে। শুধু জাতীয়, আন্তর্জাতিক স্তরের ফুটবলই আর দেখতে পান না। আয়োজন করার সৌভাগ্যও হয় না। তো সেই হেমচন্দ বলছিলেন, ‘‘অনেকটা নোকিয়া ফোন, এইচএমটি ঘড়ির মতো অবস্থা। সময়ের সঙ্গে বদলাতে না পেরে চাপা পড়ে গিয়েছে।’’ ওঁর উচ্চারণ করা শব্দগুলো কোথাও একটা বড় হতাশা হয়ে কানে বেঁধে।

অম্বেডকর গ্যালারিতে বিশ্রাম। —নিজস্ব চিত্র।

বি আর অম্বেডকরের নামে তৈরি স্টেডিয়ামকে নতুন করে সেজে তোলা হয়েছিল ২০০৭ সালে। উদ্বোধন হয়েছিল নেহরু কাপ দিয়ে। ২০০৯-এ এখানেই হয়েছিল নেহরু কাপের ফাইনাল। দু’বারই সিরিয়াকে হারিয়ে জিতেছিল ভারত। ৩৫ হাজারের গ্যালারি সে দিন ভরিয়ে দিয়েছিল দিল্লির ফুটবলপ্রেমী জনতা। উইলিয়াম স্মৃতি হাতড়ে তুলে আনলেন এই স্টেডিয়ামে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের ডুরান্ড ম্যাচের সেই কাহিনি। তিনি বলছিলেন, ‘‘রেকর্ড হয়েছিল সে বার। যত দর্শক স্টেডিয়ামের ভিতরে ছিলেন, তত মানুষই সে দিন ছিলেন বাইরে। ঢুকতে পারেননি। সে সব তো এখন ইতিহাস।’’ ডুরান্ড বন্ধ। এক সময় ডিসিএম ট্রফিও হত এখানে। তাও বন্ধ হয়েছে অনেক কাল আগে। কয়েক বছর আগে ফেডারেশনের দল ইন্ডিয়ান অ্যারোজের হোম গ্রাউন্ড করা হয়েছিল। কিন্তু, পরে কলকাতায় চলে যায় সেই দল।

দেখুন ভিডিও

ফুটবলের থেকে এখন অম্বেডকরে অনেক বেশি করে হচ্ছে মেলা, পার্টি, বিয়ের অনুষ্ঠান। ফলে বারোটা বেজে গিয়েছে মাঠের ঘাসের। এর মধ্যেই স্থানীয় লিগ খেলে দলগুলো। স্থানীয় ফুটবলার ইমরান ঘুরিয়ে যেন এই কথাগুলোই বলে দিলেন। আসলে সরাসরি কেউ একটা বিষয় বলতে চাইছেন না। হয়তো পারছেনও না। এই স্টেডিয়াম আসলে মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন অব দিল্লি (এমসিডি)-র। আর সে কারণেই কাজের কাজটা আর কিছুতেই হচ্ছে না। সকলের কথার আভাসে সেটা কিন্তু পরিষ্কার।

এই সেই গেট যেখানে পা পড়েছে কত কত ফুটবল মহারথীর।—নিজস্ব চিত্র।

এটা সেই মাঠ যেখানে ২০১৪ সালে ফিফা বিশ্বকাপের যোগ্যতা নির্ণায়ক পর্ব খেলেছিল ভারত। সংযুক্ত আরব আমিরশাহির বিরুদ্ধে। সেই ম্যাচ ২-২ ড্র হয়েছিল। আর আজ যখন দিল্লির বুকে বিশ্বকাপ খেলছে ভারতের যুব দল, তখন একলা দাঁড়িয়ে অম্বেডকর স্টেডিয়াম। নিজের সন্তানকেই শেষ করে দিচ্ছে এমসিডি। না হলে, আজ বিশ্বকাপের ম্যাচ না পেলেও দলগুলির প্র্যাকটিস গ্রাউন্ড তো হতেই পারত অম্বেডকর। সেখানে দিল্লি ইউনিভার্সিটির মাঠে হচ্ছে অনুশীলন। কেন অম্বেডকরে নয়? এই প্রশ্নের কোনও জবাব নেই কারও কাছে।

আসলে এমসিডি-র মূল লক্ষ্য পয়সা উপার্জন। আর স্টেডিয়াম নানা কাজে ভাড়া দিয়ে সেটা তোলাও হয়। সে আপনি যাই করুন না কেন, মেলা, পার্টি, বিয়ের অনুষ্ঠান— ফুটবল মাঠ থুড়ি... অম্বেডকর স্টেডিয়াম আছে তো!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন