উচ্ছ্বাসে ভেসে যাওয়ার কারণ তো দেখছি না

মায়ানমারের বিরুদ্ধে ৬৪ বছর পর ঐতিহাসিক জয়ের নায়ক তিনি। ম্যাচের পর ড্রেসিংরুমে সতীর্থদের সঙ্গে মেতে উঠেছিলেন নাচে। কিন্তু চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই উচ্ছ্বাস ভুলে আই লিগে ঘুরে দাঁড়ানোর মানসিক প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন। মায়ানমারের রাজধানী ইয়াঙ্গন থেকে মোবাইল ফোনে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন সুনীল ছেত্রী।ছোটবেলা থেকেই জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখতাম। তাই টানা বারো বছর ভারতের হয়ে খেলার পরেও মনে হয় স্বপ্নের জগতে আছি।

Advertisement

শুভজিৎ মজুমদার

শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৭ ০৩:৩২
Share:

ছন্দে: মায়ানমার বধের নায়ক সুনীল ছেত্রী। ফাইল চিত্র

প্রশ্ন: জাতীয় দলের জার্সিতে মাঠে নামলেই সুনীল ছেত্রী বদলে যান। এর রহস্যটা কী?

Advertisement

সুনীল ছেত্রী: আমি কি ক্লাবের হয়ে ভাল খেলি না? আমার লক্ষ্য থাকে সব ম্যাচেই নিজের সেরাটা দেওয়া। তবে দেশের হয়ে খেলার অনুভূতি সব সময়ই আলাদা।

প্র: কী রকম?

Advertisement

সুনীল: ছোটবেলা থেকেই জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখতাম। তাই টানা বারো বছর ভারতের হয়ে খেলার পরেও মনে হয় স্বপ্নের জগতে আছি। আমার কাছে সব চেয়ে গর্বের হচ্ছে দেশের হয়ে খেলার সুযোগ পাওয়া। এখনও প্রত্যেকটা ম্যাচে নিজেকে প্রমাণ করার চ্যালেঞ্জ নিয়ে মাঠে নামি।

প্র: এখনও কি প্রত্যেকটা দিনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখেন?

সুনীল: অবশ্যই। জাতীয় দলে পারফরম্যান্সই শেষ কথা। পারফর্ম করতে না পারলে অন্য কেউ খেলবে। তাই আমার কাছে পরিশ্রমের বিকল্প নেই। আমি দেশের সর্বোচ্চ গোলদাতা বা কারা আমার চেয়ে ভাল খেলছে, এ সব নিয়ে ভাবি না। নিজের কাজটা ঠিক মতো করতে পারছি কি না, সেটাই আমার কাছে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেকটা ম্যাচের আগেই নিজেকে বলি, মাঠে সব সময় মাথা ঠান্ডা রাখো। স্তুতি বা সমালোচনা— কোনও কিছুতেই কান দিও না।

প্র: ৬৪ বছর পর আপনার গোলেই মায়ানমারের মাটিতে মায়ানমার-কে হারাল ভারত। ফুটবলার হিসেবে এটা কি আপনার অন্যতম সেরা প্রাপ্তি?

সুনীল: মায়ানমারের বিরুদ্ধে ম্যাচটা কঠিন ছিল। ওরা শুরু থেকেই ম্যান মার্কিং করে খেলছিল। যে কারণে বল ধরার সুযোগ আমরা বেশি পাইনি। তবে আমি গোল করলেও জয়ের আসল নায়ক কিন্তু উদান্ত সিংহ। ও অসাধারণ পাস দিয়েছিল বলেই তো গোলটা করতে পেরেছিলাম। তা ছাড়া আমার কাছে প্রাপ্তির সংজ্ঞা কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা।

প্র: আলাদা বলতে?

সুনীল: আমাদের প্রধান লক্ষ্য ২০১৯-এ এশিয়ান কাপের মূল পর্বে খেলা। মায়ানমার-কে হারিয়ে আমরা মাত্র একটা ধাপই এগোতে পেরেছি। তার চেয়ে বেশি কিছু অর্জন করতে পারিনি। তাই উচ্ছ্বাসে ভেসে যাওয়ার কোনও কারণ দেখছি না।

প্র: মিশন মায়ানমার তো সফল। এ বার বেঙ্গালুরু এফসি-কে কি আই লিগে খেতাবের যুদ্ধে ফিরিয়ে আনতে পারবেন?

সুনীল: চলতি আই লিগে ভাগ্য সব সময় আমাদের সঙ্গে থাকেনি। অনেক ম্যাচ ভাল খেলেও জিততে পারিনি। এখন খেতাব নিয়ে ভাবছি না। আমাদের লক্ষ্য, বাকি যে ক’টা ম্যাচ আছে, তাতে ভাল ফল করা।

প্র: আই লিগে বিরতির পরে প্রথম ম্যাচটাই তো ১ এপ্রিল রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে। এটা কতটা চাপের?

সুনীল: মোহনবাগান খুব ভাল দল। কিন্তু কলকাতায় খেলার সময় কখনও বাড়তি চাপ অনুভব করি না। আমার ফুটবল জীবন শুরু হয়েছিল এই শহর থেকেই। ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান দুই প্রধানের হয়েই খেলেছি। আমার হবু স্ত্রী (প্রাক্তন ফুটবলার সুব্রত ভট্টাচার্যের মেয়ে সোনম) কলকাতার মেয়ে। এই শহরের সঙ্গে আমার প্রচুর স্মৃতি জড়িয়ে। তাই কলকাতায় যখন খেলি, মনে হয় নিজের শহরেই খেলছি।

প্র: মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ম্যাচ দেখতে হবু স্ত্রী কি থাকছেন?

সুনীল: খেলা দেখার ইচ্ছে হলে ও নিজেই মাঠে আসবে। আইএসএল দেখতে এসেছিল। রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়াম ওর বাড়ির খুব কাছে। ব্যস্ত না থাকলে হয়তো আসবে। তবে আমি কখনও ওকে জোর করি না।

প্র: আইজল এফসি, ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান ও বেঙ্গালুরু এফসি-র মধ্যে আই লিগ কে জিতবে বলে আপনার ধারণা?

সুনীল: আমার মনে হয়, ইস্টবেঙ্গল বা আইজল এফসি-র চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি। বেঙ্গালুরু এফসি-র ফুটবলার হিসেবে এর চেয়ে বেশি কিছু বলা উচিত নয় আমার।

প্র: আপনাদের ঐতিহাসিক জয়ের দিনেই ধর্মশালায় অস্ট্রেলিয়া-বধ করে সিরিজ জিতেছে ভারতীয় দল। কী বলবেন ক্রিকেটের জয় নিয়ে?

সুনীল: অস্ট্রেলিয়াকে হারানোটা সব সময়ই দারুণ ব্যাপার। ওরা দারুণ ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে সিরিজ ১-১ করল। তার পর জিতল। অসাধারণ নেতৃত্ব দিচ্ছে আমার বন্ধু বিরাট কোহালি। কিন্তু চোটের জন্য এই ম্যাচটা ও খেলতে পারল না। আপাতত বিরাট-কে টেক্সট মেসেজ করে অভিনন্দন জানাচ্ছি। পরে সাক্ষাতে অভিনন্দন জানাতে চাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন