ওয়ান ডে ক্রিকেটে সর্বাধিক উইকেট, বিশ্বরেকর্ড ঝুলনের

দক্ষিণ আফ্রিকার পোচেসত্রুমে বিশ্বরেকর্ড এবং ম্যাচ জেতানো তিন উইকেট নিয়ে মোবাইল ফোন থেকে আনন্দবাজার-কে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন ঝুলন গোস্বামী। বিস্ময়কর হচ্ছে, তাঁর গলায় উচ্ছ্বাসই নেই। বরং আছে বিশ্বকাপের শপথের সুর।ওয়ান ডে-র সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক ঝুলন। বিস্ময়কর হচ্ছে, তাঁর গলায় উচ্ছ্বাসই নেই। বরং আছে বিশ্বকাপের শপথের সুর।

Advertisement

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৭ ০৪:৩৯
Share:

বিশ্বসেরা: মঙ্গলবার ওয়ান ডে-র সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক হয়ে ঝুলন। ফাইল চিত্র

প্রশ্ন: নতুন বিশ্বরকের্ডের মালিক হওয়ার অনুভূতি কী?

Advertisement

ঝুলন গোস্বামী: সত্যি বলছি, এখন আর কিছুই মনে হচ্ছে না। এই রেকর্ডটা যতক্ষণ হচ্ছিল না, অনেক কিছু চলছিল মনের মধ্যে। বেশ কয়েক দিন ধরেই কাছাকাছি এসে গিয়েছিলাম বলে মনে হচ্ছিল, এটা হয়ে গেলে ঘাড় থেকে ভূতটা নেমে যায়। আজকের অনুভূতিটা সেরকমই। ঘাড় থেকে ভূত নেমেছে।

প্র: কী করে এত নির্লিপ্ত থাকতে পারছেন বিশ্বরেকর্ড করেও?

Advertisement

ঝুলন (হাসি): এটাই আমার অনুভূতি। সত্যি কথাটাই বললাম। হতে পারে টুর্নামেন্টের মধ্যে আছি বলে হয়তো খুব উচ্ছ্বাস আসছে না। আমাদের সামনে এখন অনেক বড় লক্ষ্য রয়েছে— বিশ্বকাপ। তার প্রস্তুতি হিসেবেই দক্ষিণ আফ্রিকায় এই টুর্নামেন্ট খেলছি। টিমে অনেক জুনিয়র ক্রিকেটার আছে। তাদের নিয়ে ঝাঁপাতে চাই বিশ্বকাপের জন্য।

প্র: রেকর্ড উইকেটটা নিয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল?

ঝুলন: ধুস, আমি তো জানতামই না রেকর্ড হয়েছে। বাউন্ডারি লাইন থেকে শিখা (পাণ্ডে) এসে বলল, দিদি আপ কা রেকর্ড হো গয়া।

প্র: আপনি শিখাকে কী বললেন?

ঝুলন: বললাম, তাই নাকি? বলিস কী রে? হয়ে গিয়েছে। বাঁচা গিয়েছে।

প্র: নিশ্চয়ই প্রচুর অভিনন্দন বার্তা আসছে আপনার কাছে?

ঝুলন: তা পাচ্ছি। বোর্ড থেকে অমিতাভ চৌধুরি অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন। ডায়না ম্যাম (এডুলজি) অভিনন্দন জানিয়েছেন। আরও অনেকেই মেসেজ পাঠাচ্ছে। খেলোয়াড়রা পাঠাচ্ছে। এই তো সবে মোবাইল খুললাম। সব মেসেজ আসতে শুরু করেছে।

আরও পড়ুন: গম্ভীর হয়তো ফের শুরুতে

প্র: সেলিব্রেট করবেন কী ভাবে?

ঝুলন: আমাদের ম্যাচটা হল পোচেসত্রুমে। শহরের মতো নয় জায়গাটা। মাঠে পুরো টিম একসঙ্গে ছোটখাটো একটা সেলিব্রেশন হয়েছে। সম্ভবত কাল বড় সেলিব্রেশন হবে।

প্র: কাকে উৎসর্গ করবেন রেকর্ড?

ঝুলন: আমার পরিবার এবং যত কোচের অধীনে খেলেছি, যত সতীর্থের সঙ্গে খেলেছি, সকলকে।

তেইশ বছর আগে রিচার্ড হ্যাডলির রেকর্ড ভেঙে কপিল দেব।

প্র: বিশ্বরেকর্ডের উইকেটটা কী স্পেশ্যাল কোনও ডেলিভারি ছিল?

ঝুলন: না, না। এলবিডব্লিউ পেলাম। আমি সোজা রেখেছিলাম।

প্র: চাকদহ থেকে বিশ্বের চূড়োয়— এই যাত্রাপথকে কী ভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

ঝুলন: রোলার-কোস্টার রাইড নিঃসন্দেহে। আমি পরিশ্রম করায় অনীহা দেখাইনি। একটা কথা কী জানেন, খেলায় কোনও গ্যারান্টি থাকে না। স্পোর্টস ইজ আ গ্যাম্বল। খেলোয়াড় হতে চাওয়াটা একটা ফাটকা। লাগতেও পারে, না-ও লাগতে পারে। তবে আমরা যেটা করতে পারি, তা হচ্ছে, পরিশ্রম করে যাওয়া। নিজের কাজের প্রতি সৎ থাকা। দায়বদ্ধতা দেখানো। আমি সেটা করে গিয়েছি। এক বেলা ট্রেনিংয়ে হয়নি, তো দু’বেলা করেছি।

প্র: কপিল দেব যখন বিশ্বরেকর্ড করছিলেন, তখন আপনি কোথায়?

ঝুলন: আমি ম্যাচটা দেখেছিলাম টিভি-তে। তখন খুবই ছোট ছিলাম। আমদাবাদে হয়েছিল রেকর্ডটা। প্রতিপক্ষ ছিল শ্রীলঙ্কা। ভুল বললাম?

প্র: একদম ঠিক বলেছেন। কপিলের রেকর্ড কি অনুপ্রেরণা ছিল?

ঝুলন: অবশ্যই। কপিল দেব ভারতীয় ক্রিকেটে পেস বোলিংয়ের অধ্যায়টাই পাল্টে দিয়েছিলেন। শুধু আমার কেন, সকলেরই প্রেরণা।

প্র: আপনার প্রিয় ভারতীয় বোলারও কি কপিল দেব-ই?

ঝুলন: আমি নিজে খেলা শুরু করার সময় ওঁকে পাইনি। তত দিনে উনি খেলা ছেড়ে দিয়েছেন। আমার খুব ভাল লাগত জাভাগল শ্রীনাথ-কে। আর ভারতের পেসারদের মধ্যে এক নম্বর পছন্দ জাহির খান। বুদ্ধি আর বৈচিত্রে এত ভাল বোলার আমি দেখিনি। এখন সবাই ‘নাকল বল’ করছে। জাহির সেই কবে এটা করে দিয়েছে!

প্র: আপনার প্রিয় বোলার তো গ্লেন ম্যাকগ্রা। সিডনিতে ম্যাকগ্রার সঙ্গে দেখাও হয়েছিল?

ঝুলন: হ্যাঁ। আমার হিরো ম্যাকগ্রা। সিডনিতে আমাকে বলেছিল, লাইন-লেংথের ওপর জোর দেবে। স্মার্ট বোলিং করার চেষ্টা করো।

প্র: ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে কারও সঙ্গে কথা হয় আপনার?

ঝুলন: অনেকের সঙ্গেই হয়। সচিন তেন্ডুলকর, রাহুল দ্রাবিড় বা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় আমাকে খুবই উৎসাহ দিয়েছে। যুবরাজ দেখা হলেই বলে ‘বেঙ্গল টাইগ্রেস’। ক’দিন আগে বেঙ্গালুরুতে জাতীয় অ্যাকাডেমিতে খুব আড্ডা হল মহম্মদ শামির সঙ্গে। আমরা দু’জনেই তখন রিহ্যাব করছিলাম। আমি খুব খুশি হয়েছি শামি ভারতীয় দলে ফিরেছে দেখে। দারুণ বোলার। খুব ভাল ছেলেও।

প্র: চাকদহ স্টেশনের দিকে ফিরে তাকিয়ে আজ কী বলতে ইচ্ছে করছে?

ঝুলন: রোজ ট্রেন ধরতে আসার সময় অনেক সংশয়ের সুর কানে বাজত। তবু ওই স্টেশন থেকে ট্রেনে চাপতাম রোজ একই রকম দায়বদ্ধতা আর স্বপ্ন নিয়ে। কখনও চাওয়া-পাওয়ার হিসেব করিনি। কখনও ভাবিনি, না পারলে কী হবে! চাকদহ স্টেশন আর রোজ সেই ট্রেন ধরে কলকাতায় খেলতে আসা— আজকের এই জায়গায় আসার জন্য আমাকে মানসিক শক্তি যুগিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন