অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপ: ভারতের গোলরক্ষক

ব্যাডমিন্টন কোর্ট থেকে গোলপোস্টের নীচে

সপ্তাহে এক দিন অনুশীলন করেই ভারতীয় দলে? হাসতে হাসতে ধীরজের উত্তর, ‘‘ব্যাডমিন্টন খেলতাম বলে আমার ফিটনেস খুব ভাল ছিল। তাই খুব একটা সমস্যা হয়নি মানিয়ে নিতে।’’

Advertisement

শুভজিৎ মজুমদার

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:৪৩
Share:

ধীরজ সিংহ মইরাংথেম

বছর চারেক আগেও ধীরজ সিংহ মইরাংথেম ফুটবল খেলত শুধু রবিবার। সপ্তাহের বাকি ছয় দিন ব্যস্ত থাকত ব্যাডমিন্টন কোর্টে। অথচ সেই ধীরজ-ই এখন অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের শেষ প্রহরী!

Advertisement

মণিপুরের মইরাংথেম গ্রামে ছোটখাটো ব্যবসা করে সংসার চালান ধীরজের বাবা। কিন্তু চাইতেন ছেলে লেখাপড়া করে প্রতিষ্ঠিত হোক। মইরাংথেমে ভাল স্কুল নেই। তাই মাত্র আট বছর বয়সেই ধীরজকে গ্রাম থেকে ঘণ্টা চারেক দূরের একটি আবাসিক স্কুলে ভর্তি করে দেন। শনিবার স্কুল ছুটির পরে বাড়ি ফিরত ধীরজ। রবিবার সকালে বন্ধুদের সঙ্গে নেমে পড়ত ফুটবল নিয়ে।

ভারতীয় দলের গোলরক্ষকের কথায়, ‘‘ফুটবলার হওয়ার কথা স্বপ্নেও ভাবিনি। আমার লক্ষ্য ছিল ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় হওয়া। কারণ, স্কুলে প্রত্যেক দিন ব্যাডমিন্টন অনুশীলন করতাম। তা ছাড়া আমাদের স্কুলে ফুটবল খেলার খুব একটা চল ছিল না।’’

Advertisement

ব্যাডমিন্টন কোর্ট ছেড়ে গোলকিপিং গ্লাভস হাতে তুলে নেওয়ার কাহিনিটা কী? ‘‘সুরেন্দ্র সিংহ আমাকে ফুটবলে নিয়ে এসেছিলেন।’’ কী ভাবে? ধীরজ বলল, ‘‘সুরেন্দ্র স্যার আমাদের গ্রামে ছোটদের ফুটবল শেখান। বন্ধুদের সঙ্গে আমার খেলা দেখে ওঁর ভাল লেগেছিল। আমাকে ওঁর কোচিং সেন্টারে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু আমার পক্ষে হস্টেল ছেড়ে গ্রামে ফেরা সম্ভব নয়। কারণ, বাবা রাজি হবেন না। সুরেন্দ্র স্যার বললেন, স্কুল ছাড়তে হবে না। তুমি শুধু রবিবার সকালেই আমার কাছে অনুশীলন কোরো।’’

সপ্তাহে এক দিন অনুশীলন করেই ভারতীয় দলে? হাসতে হাসতে ধীরজের উত্তর, ‘‘ব্যাডমিন্টন খেলতাম বলে আমার ফিটনেস খুব ভাল ছিল। তাই খুব একটা সমস্যা হয়নি মানিয়ে নিতে।’’ সঙ্গে যোগ করল, ‘‘সুরেন্দ্র স্যার বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় দল নামাতেন। টুর্নামেন্টগুলোয় খেলতে খেলতেই আমি মণিপুর জুনিয়র দলে নির্বাচিত হই। তার পর এআইএফএফ অ্যাকাডেমিতে সুযোগ পাই।’’

ধীরজের গোলকিপিং বেছে নেওয়ার কারণও চমকপ্রদ। ‘‘গোলরক্ষক হচ্ছে, শেষ প্রহরী। দলকে বাঁচানোর মধ্যে একটা অন্য রকম আনন্দ রয়েছে। তাই গোলকিপিং থ্যাঙ্কলেস জব হলেও আমার ভাল লাগে। কারণ আমি চ্যালেঞ্জ নিতে ভালবাসি,’’ প্রতিশ্রুতিমান গোলরক্ষকের ব্যাখ্যা।

ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্ন দেখা বন্ধ করলেও ব্যাডমিন্টন খেলা অবশ্য ছাড়েনি ধীরজ। ফিটনেস বাড়াতে ব্যাডমিন্টনই প্রধান অস্ত্র পেতর চেহ‌্-র ভক্তের।

জিয়ানলুইজি বুফন, ম্যানুয়েল নিউয়ার-এর মতো গোলরক্ষকদের বাদ দিয়ে আদর্শ পেতর চেহ‌্? ধীরজের কথায়, ‘‘পেতর চেহ‌্-কে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জ নিয়ে খেলতে হয়। কারণ, চেলসি, আর্সেনাল দু’টো দলের ডিফেন্সই খুব শক্তিশালী ছিল না। তাই ওঁর কাজটা অন্যদের চেয়ে অনেক কঠিন।’’ ধীরজ অভিভূত জাতীয় কোচ লুইস নর্টন দে মাতোস-কে নিয়েও। তার কথায়, ‘‘স্পেন, জার্মানি, পর্তুগাল ফুটবলে আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। কিন্তু মাতোস স্যার বলে দিয়েছেন, বিপক্ষে যে-ই থাকুক, মনে করবে তুমি সেরা। প্রতিপক্ষের স্ট্রাইকারকে সম্মান অবশ্যই করবে। কিন্তু কখনও সমীহ করবে না। তাই আমরা এখন কাউকে ভয় পাই না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement