নজির: টিম ম্যান ক্রোমা তৈরি করলেন উদাহরণ। ফাইল চিত্র
তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েও দলগত সংহতি রক্ষার এক চমকপ্রদ উদাহরণ তৈরি করলেন মোহনবাগানের নতুন তারকা আনুসমানা ক্রোমা!
সাদার্ন সমিতির বিরুদ্ধে সোমবার কোনও কারণ ছাড়াই বিপক্ষের মার্কারকে মেরে কার্ড দেখার পর লাইবেরিয়ার স্ট্রাইকারকে নিয়ে যখন তাঁবুতে সমালোচনার ঢেউ, তখনই সবাইকে অবাক করে দিলেন ‘টিম ম্যান’ ক্রোমা। ম্যাচের সেরা হওয়ার জন্য পাওয়া পাঁচ হাজার টাকা তিনি তুলে দিলেন কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তীর হাতে। কোচকে ক্রোমা অনুরোধ করেন, ‘‘টাকাটা সবার মধ্যে ভাগ করে দিন। কারণ এই পুরস্কারটা আমি পেয়েছি সবাই সাহায্য করায়।’’
ম্যাচ শেষে প্রার্থনার পর যে দৃশ্য দেখে অভিভূত পুরো বাগান টিম। হবেনই বা না কেন, সংহতির এ রকম উদাহরণ সাম্প্রতিককালে ময়দানে দেখাননি কোনও ফুটবলারই। হোসে ব্যারোটো, সনি নর্দে, র্যান্টি মার্টিন্সরাও না। কোচেদের তৈরি করে দেওয়া নিয়ম মেনে ফুটবলাররা পুরষ্কারের টাকা ক্লাবে জমা রেখেছেন এ রকম উদাহরণ আছে। করিম বেঞ্চারিফা, সুভাষ ভৌমিক, ট্রেভর মর্গ্যান বা গত মরসুমে সঞ্জয় সেন এটা করেছিলেন টিমের মধ্যে একাত্মতা বাড়াতে। করিম-সুভাষ-ট্রেভররা সেই টাকা জমিয়ে মরসুম শেষে খাওয়া-দাওয়া করেছেন এক সঙ্গে কোনও হোটেলে গিয়ে। গত বার সনি নর্দে, দেবজিৎ মজুমদাররা সারা বছরের পুরষ্কার অর্থের জমানো টাকা দিয়ে এসেছিলেন উত্তর কলকাতার একটি অনাথ আশ্রমের শিশুদের ।
ইস্টবেঙ্গলের হয়ে এ বার কলকাতা লিগে পরপর দু’টি ম্যাচে সেরা হয়েছেন সুহেইর ভিপি এবং কার্লাইল মিচেল। টাকা নিয়ে তাঁরা বাড়ি চলে গিয়েছেন। ক্রোমার পথে হাঁটেননি কেউই।
গতবার চালু থাকলেও, এ বার সেরা পুরস্কারের অর্থ কী করা হবে তার কোনও নিয়ম এখনও চালু হয়নি মোহনবাগানে। তা সত্ত্বেও নিজের সিদ্ধান্তেই ক্রোমা সতীর্থদের মধ্যে টাকা ভাগ করে দিতে চাইছেন, এটাই বিশ্মিত করেছে সবাইকে। সেটা করেও অবশ্য পার পাননি বিতর্কিত ফুটবলারটি। প্রার্থনার পর তাঁকে ডেকে কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তী বলে দিলেন, ‘‘তুমি মাঠের বাইরে এ রকম একটা দৃষ্টান্তমূলক কাজ করলে আর মাঠের ভিতর খারাপ কাজটা করলে কেন? কেন ওভাবে ট্রিপ করে হলুদ কার্ড দেখলে? ওটা তো লালকার্ড হতে পারত। দল সমস্যায় পড়ত।’’ টিম সূত্রের খবর, সবুজ-মেরুনের নতুন আশার প্রদীপ ক্রোমা তা মেনে নেন। প্রতিশ্রুতি দেন, ভবিষ্যতে এ রকম আর করবেন না। সবুজ মেরুনের এ বারের বহু আলোচিত কা-ক্রো জুটির অন্যতম ক্রোমা বুধবার রাতে অবশ্য বললেন, ‘‘সতীর্থরা পাস না দিলে আমি কি গোল করতে পারতাম? না, ম্যাচের সেরা হতাম? টাকাটা সবার পাওয়া উচিত। তাই দিয়েছি।’’
মোহনবাগানের কলকাতা লিগের কোচ শঙ্করলাল অবশ্য বললেন, ‘‘ক্রোমা যেটা করেছে সেটা শিক্ষণীয়। টাকাটা আমরা গতবারের মতোই কোনও ভাল কাজে লাগাব। কিন্তু কেউই দলের উর্ধে নয়। তাই ওকে ভুলটাও ধরিয়ে দেওয়াও হয়েছে। সতর্ক করা হয়েছে।’’