ইজুমি আরাতা। মাঠে ফিরেই জোড়া গোল। ছবি: আইএসএল।
আটলেটিকো দে কলকাতা ৩(মোহনরাজ, আরাতা-২): কেরল ব্লাস্টার্স ২(জার্মান-২)
এই তাঁর ফুটবলারদের হাই ফাইভ দিচ্ছেন। পরক্ষণেই কোচিং স্টাফের সঙ্গে করমর্দন। সেকেন্ডের মধ্যে আরাতার পিঠ চাপড়ে দিলেন। তার পরেই বিপক্ষ বেঞ্চে মর্গ্যানের দিকে হাত বাড়াচ্ছেন।
দীপাবলির রাত ন’টার আন্তোনিও লোপেজ হাবাস।
আটলেটিকো কলকাতার স্প্যানিশ কোচ আতসবাজি না-ই জ্বালান, কিন্তু মাঠে আজ তাঁর দলে ছিল একটা তুবড়ি।
ইজুমি আরাতা।
চোট সারিয়ে চার ম্যাচ পর আজই দলে ফিরলেও শুরুতে বেঞ্চে ছিলেন। দ্বিতীয়ার্ধে কোচ তাঁকে পরিবর্ত নামালেন না তো! যেন তুবড়ির মুখে আগুন লাগালেন। কেরল ব্লাস্টার্স তখন হাঁফিয়ে উঠেছে। এই অবস্থায় গ্যাভিলানের জায়গায় নেমে আরাতার করা প্রথম গোলটা দেখে মনে হল ২০০৬ চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বার্সেলোনাকে দেওয়া ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের গোল! ক্রসটাই অনেকটা বাঁক নিয়ে গোলে ঢুকে গেল। কেরলকে প্রথমার্ধে এগিয়ে দেওয়া জার্মান-ই অবশ্য সেই গোলটাও শোধ করে দিলেন কয়েক মিনিটের মধ্যে। সবাই ধরে নিয়েছে এক-এক পয়েন্ট ভাগাভাগি হচ্ছে। এটিকে-র সমস্যা আরও বাড়িয়ে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে আরাতার ঠান্ডা মাথার ফিনিশ একের জায়গায় তিন পয়েন্ট এনে দিয়ে এটিকে-কে লাইফলাইন দিল আইএসএল-টু’তে। পয়েন্ট টেবলে কলকাতা উঠে এল চারে।
জাপানি আরাতা ‘নীলকণ্ঠ’ হয়েই দলের বিষপান করে এটিকে-তে নতুন প্রাণের সঞ্চার করলেন!
কেরল বরাবর আরাতার কাছে পয়া। ভারতের নাগরিকত্ব নিয়ে আরাতা থেকে নীলকণ্ঠ হয়ে এখানেই প্রথম নীল জার্সিতে খেলেছিলেন। হিউম তো বলেই দিলেন, ‘‘আরাতার দুটো গোলই দারুণ। ও নেমেই তো ম্যাচটা ঘোরাল।’’
আর স্বয়ং দিনের নায়ক? ম্যাচ শেষে মিক্স়ড জোনে না এলেও মাঠে রেফারির শেষ বাঁশি বাজতেই দু’হাত যত দূর পারলেন ছড়িয়ে দিয়ে আকাশের দিকে তাকালেন। চোখমুখে চূড়ান্ত তৃপ্তি। মাঠেই সতীর্থদের সঙ্গে নাচলেন। কোচকে জড়িয়ে ধরলেন বারবার।
আরাতার কোচ সাংবাদিক সম্মেলনে ঢুকলেন ‘ভিকট্রি সাইন’ দেখাতে দেখাতে। যুদ্ধে জেতা জেনারেলকে যেমন লাগে তেমনই দেখাচ্ছে হাবাসকে। আরাতাকে দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি নামানোটাই ছিল তাঁর মোক্ষম চাল। যদিও আত্মতুষ্টির চিহ্নমাত্র নেই। ‘‘জিতেছি। এ বার পরের ম্যাচ নিয়ে ভাবতে চাই। আজ আমাদের দিন ছিল, ব্যস।’’
গতকাল বলা হচ্ছিল, এই ম্যাচটা সিংহের ডেরায় ঢুকে বেঁচে ফেরার লড়াই। গ্যালারি ঠাসা কেরল সমর্থকদের শব্দব্রহ্ম নাকি এতটাই মারাত্মক! কিন্তু আজ মাঠে বসে মনে হল, ম্যাচটা ছিল আইএসএলের বরুসিয়া ডর্টমুন্ড থেকে তিন পয়েন্ট নিয়ে যাওযার চ্যালেঞ্জ।
বরুসিয়ার মতোই কেরল ব্লাস্টার্সে মহাতারকা ফুটবলার নেই। কিন্তু টিভিতে সিগন্যাল ইদুনা পার্কের আবহ দেখলে যেমন মনে হয় ফুটবলটা পুজো করে বরুসিয়া সমর্থকেরা, কেরল সাপোর্টারও তেমনই। বরুসিয়ার জার্সির মতো কেরলের জার্সিও হলুদ। সিগন্যাল ইদুনা পার্কের মতো নেহরু স্টেডিয়ামেও গ্যালারির সামনে জাল লাগানো। প্রতি মিনিটে গ্যালারিতে হলুদ রংয়ের ঢেউ।
গ্যালারির রঙের মতো ম্যাচটাও দেখাল বহু রং। পেনাল্টি গোলে এগিয়ে যাওয়ার পরে কেরল তখন আক্রমণের পর আক্রমণ করছে। অথচ একটাই প্রতি-আক্রমণে কলকাতা সমতা ফেরাল। মোহনরাজের গোলে। দ্বিতীয়ার্ধে কলকাতা চলে গেল পুরোপুরি ডিপ ডিফেন্সে। কেরল সেই সুযোগে অনেক দৌড়ল। অনেক শটও নিল। কিন্তু অমরিন্দরের গ্লাভসে আটকে গেল সেগুলো।
এখানকার গ্যালারির ট্র্যাডিশন হল, মোবাইল ক্যামেরার ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে মাঠে ঢোকা ফুটবলারকে অভ্যর্থনা জানানো। আরাতার ক্ষেত্রেও তাই হল। তখন কে জানত, আরাতা তার চেয়েও অনেক বেশি আলোকিত করবেন আটলেটিকোকে। আর অমাবস্যার রাতে আরও অন্ধকারে ডুবিয়ে দেবেন কেরলকে। কে জানত, দীপাবলির রাত রেফারিকে নিন্দেমন্দ-র রাত হবে না হাবাসের। হবে স্বস্তির রাত, সাফল্যের রাত। যেখানে নাগাড়ে আলোচনা হবে তাঁর স্ট্র্যাটেজির, আর সবই হবে মাত্র একটা মুভে।
এক তুবড়িতে!
আটলেটিকো দে কলকাতা: অমরিন্দর, নাতো, তিরি, ডেঞ্জিল (ভালদো), মোহনরাজ, রিনো, বোরহা, রফিক (জুয়েল), সামিগ, গ্যাভিলান (আরাতা), হিউম।