ভিদাল আর মেসির বল দখলের লড়াই। শনিবার কোপা আমেরিকা ফাইনালে। ছবি: এপি।
আর্জেন্তিনা-০ চিলি-০
(বিরতি পর্যন্ত)
প্রধমার্ধের ২৬ মিনিটও তখন গড়ায়নি। আর্জেন্তিনীয় সমর্থকদের আশঙ্কার পারদ চড়া শুরু হয়ে গেল। হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে অ্যাঞ্জেল দি’মারিয়া মাঠের বাইরে চলে গেলেন ঠিক তখনই। ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট না হয়ে যায় এটাই। চিলির পরপর আক্রমণের মুখে তখন চিন্তায় টুইট ভাসতেও লাগল আর্জেন্তিনা সমর্থকদের। তার আগেই ম্যাচের ২০ মিনিটে দুরন্ত সুযোগ পেয়েছিলেন আগেরো। মেসির সোয়ার্ভিং ফ্রি কিকে মাথা ছুঁইয়ে প্রায় জালে জড়িয়ে দিয়েছিলেন বল। কিন্তু আর্জেন্তিনার ম্যাচে এগিয়ে যাওয়াটা ঠোট আর কাপের দূরত্বে থাকতে বাধ্য করেন ক্লদিও ব্র্যাভো। চিলির গোলকিপার। মেসির বার্সোলোনার সতীর্থ। শেষ চারের যুদ্ধে পেরুকে হারিয়েই যিনি বলেছিলেন, ‘‘ফাইনালের জন্য আসল উৎসবটা তুলে রেখেছি।’’ কিন্তু দি’মারিয়া নেই, তার উপর ক্লাব সতীর্থকে হারিয়ে মেসি কী পারবেন দেশকে এগিয়ে দিতে। এই প্রশ্নটাই প্রথমার্দের শেষে ঘুরছিল সান্তিয়াগো স্টেডিয়ামে।
মেসিকে দেখে এক সময় আর্সেন ওয়েঙ্গার বলেছিলেন, ‘‘আমার মনে হয় ও ভিডিও গেমের ফুটবলার।’’ তখন সবাই কথাটাকে কোচের ঠাট্টা বলে উড়িয়ে দিলেও চিলি কোচ জর্জ সামপাওলি ঠিক সেই পরামর্শটাই নিয়েছিলেন। আর্জেন্তিনা বনাম চিলি ফাইনালের আগে মেসিকে আটকাতে অভিনব পদ্ধতি নিয়েছিলেন চিলি কোচ সামপাওলি। যে প্রযুক্তি দিয়ে ফিফার মতো ভিডিও গেম তৈরি করা হয়, সেই প্রযুক্তি দিয়েই মেসিকে আটকানোর ছক কষেছিলেন সামপাওলি। ‘‘প্লে-স্টেশনে ফুটবল খেলাগুলোতে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় সে রকম প্রোগ্রাম দিয়েই মেসির মুভমেন্ট পরীক্ষা করে দেখছি,’’ বলছেন সামপাওলি।
এক দিকে চিলি কোচের অভিনব পরিকল্পনা। অন্য দিকে ফাইনালের আগে তেতে থাকা মেসি। সব মিলিয়ে কোপার চূড়ান্ত যুদ্ধ শুরুর আগে থেকেই উত্তেজনার পারদ বাড়তে শুরু করেছিল। মেসি যেমন ফেসবুকে নিজের ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘‘ফাইনালের কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে। আর অপেক্ষা করতে পারছি না ফাইনালের জন্য। এ রকম ম্যাচে খেলার স্বপ্নই প্রতিটা ফুটবলার দেখে।’’
দেশের হয়ে প্রথম বড় ট্রফি জিততে এতটাই মরিয়া আর্জেন্তিনার অধিনায়ক, যে টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার আগেই বলে দিয়েছিলেন, ‘‘আর্জেন্তিনার হয়ে ট্রফি জিততে চাই। আমাদের এই প্রজন্মের ফুটবলারদের অবশ্যই চ্যাম্পিয়ন হওয়া উচিত।’’
ফাইনাল শুরুর আগেও অবশ্য একটা ভবিষ্যদ্বাণী করে রেখেছিেলন আর্জেন্তিনার প্রাক্তন কোচ সিজার মেনোত্তি। বলেছিলেন, আর্জেন্তিনা রাজপুত্রের হাতেই উঠতে চলেছে কোপা আমেরিকা। শেষ হতে চলেছে ট্রফি-খরা। সেই কথাই জানিয়েছিলেন ১৯৭৮ বিশ্বকাপজয়ী কোচ মেনোত্তি। ‘‘ফুটবল দক্ষতার দিক দিয়ে দেখলে আর্জেন্তিনা অনেক এগিয়ে। তার উপরে আবার সেমিফাইনালে দুর্দান্ত খেলেছে। আর গোটা কোপাতেই ফর্ম ধরে রেখেছে।’’ ভিদাল-সাঞ্চেজরা ভাল ফুটবলার হতে পারেন, কিন্তু দল হিসাবে একশোয় একশো আর্জেন্তিনা। তবে ঘরের মাঠে সমর্থকদের সামনে নামায়, সান্তিয়াগোর গ্যালারি হয়ে উঠবে ভিদালদের বারো নম্বর সদস্য। কিন্তু তাতেও আর্জেন্তিনাকে পনেরো নম্বর কোপা তোলার থেকে আটকাতে পারবে না চিলি, বলে মনে করেছিলেন মেনোত্তি। প্রথমার্ধের খেলায় অবশ্য সেই ইঙ্গিত পাওয়া গেল না।