কোপায় কাল সোনার বুট বনাম সোনার বল

পুরনো গুরুর অবজ্ঞার জবাব দেওয়ার ম্যাচ মেসির

আট বছর আগে যে কোচের সামনে ম্যাচ শেষে বেঞ্চে মাথা নিচু করে বসেছিলেন তিনি, সেই কোচের সামনে দিয়েই কি এ বার মাথা উঁচু করে মাঠ ছাড়তে পারবেন মেসি?

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৫ ০৪:২২
Share:

২০০৬-এর আর্জেন্তিনা কোচ ও তাঁর রিজার্ভ ফুটবলার।

আট বছর আগে যে কোচের সামনে ম্যাচ শেষে বেঞ্চে মাথা নিচু করে বসেছিলেন তিনি, সেই কোচের সামনে দিয়েই কি এ বার মাথা উঁচু করে মাঠ ছাড়তে পারবেন মেসি?

Advertisement

২০০৬ বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানির কাছে টাইব্রেকারে হারের দিন ১২০ মিনিটেও লিও মেসিকে বেঞ্চ থেকে উঠিয়ে মাঠে পাঠানোর প্রয়োজন বোধ করেননি আর্জেন্তিনা কোচ হোসে পেকারম্যান। প্রথম এগারোয় রাখা তো দূরের কথা!

তার পর বিশ্ব ফুটবলের জল অনেক দূর গড়িয়ে গিয়েছে। মেসি এখন ফুটবলের রাজপুত্র এলএম টেন। আর পেকারম্যান আর্জেন্তিনার চাকরি খুইয়ে অধুনা কলম্বিয়া কোচ। কোপা আমেরিকায় আর্জেন্তিনা-কলম্বিয়া কোয়ার্টার ফাইনালকে তাই যত না মেসি বনাম হামেস হিসেবে দেখছে ফুটবলমহল, তার চেয়ে হয়তো বেশি করে দেখছে পুরনো ছাত্রের প্রাক্তন শিক্ষকের উপর বদলা নেওয়ার ম্যাচ হিসেবে। দশ বছর আগে পেকারম্যানের কোচিংয়েই যে আর্জেন্তিনার হয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচে আবির্ভাব মেসির, কিংবা পেকারম্যানই যে মেসিকে প্রথম বিশ্বকাপ দলে (২০০৬) রেখেছিলেন, সে সব পুরনো আবেগটাবেগ চুলোয় গিয়েছে এলএমটেন ভক্তদের কাছে।

Advertisement

শনিবার চিলির ভিনা দেল মারে সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক ফ্রেম হবে, যদি পেকারম্যানের কলম্বিয়ার ছুটি করে দিয়ে কোপা সেমিফাইনালে ওঠে মেসির আর্জেন্তিনা। ভক্তরা ফুটলেও মেসির অবশ্য যথারীতি পাটিতে পা। দেশের নীল-সাদা স্ট্রাইপ জার্সিতে ১০১ নম্বর ম্যাচে নামার আগে আর্জেন্তিনা অধিনায়ক প্রাক্তন গুরু সম্পর্কে বলেছেন, ‘‘পেকারম্যান আমাকে অনেক উপদেশ দিয়েছিলেন। যা আমি এখনও ভুলিনি।’’

পুরনো ছাত্র এবং তাঁর প্রাক্তন শিক্ষক, দু’জনের দলই শনিবার ওপেন ফুটবল খেলবে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। বিশেষ করে মেসি আর পেকারম্যান, দু’জনের টিমই কোপার গ্রুপ লিগে বিপক্ষের ডিফেন্সিভ ট্যাকটিক্সের জবাব সেভাবে খুঁজে না পেলেও আক্রমণাত্মক মনোভাব ত্যাগ না করায়। মেসিও যে জন্য বলছেন, ‘‘কলম্বিয়ার খেলার স্টাইল আমাদের সাহায্যে আসতে পারে। কারণ ওদের ফুটবলারদের নিজেদের ডিফেন্স ছেড়ে ওঠার সাহস আছে। যেটা আমাদের বেশির ভাগ প্রতিপক্ষের দেখা যায়নি। যে জন্য আমি মনে করি আমরা শনিবার আক্রমণের বেশি জায়গা আর সুযোগ দুই-ই পাব।’’

কোপায় আবার পেকারম্যান অন্য এক ‘নাম্বার টেন’-কে নিয়ে কাজ করছেন। তিনি, হামেস রদ্রিগেজ গত বছর বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা এবং অনেকের মতে কাপ-সেরার গোল্ডেন বল-ও মেসির বদলে হামেসের পাওয়া উচিত ছিল। যিনি বলছেন, ‘‘সবাই জানে আর্জেন্তিনার মেসি আছে। কিন্তু আমার মতে ম্যাচ ফিফটি-ফিফটি। কারণ, কলম্বিয়াও সুন্দর অ্যাটাকিং ফুটবল খেলে।’’

হামেসের সাহস বেড়ে যাওয়ার মতো মন্তব্য করছেন আবার মেসিরই এক টিমমেট। চোটের জন্য ২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলতে না পারা সেই অ্যাঞ্জেল দি’মারিয়া বলে দিচ্ছেন, ‘‘আমরা অ্যাটাকাররা এত বেঁটে-বেঁটে যে, এই আর্জেন্তিনা টিম ক্রেসপো কিংবা বাতিস্তুতাকে ব্যবহার করতে পারত!’’ ৩৯ বছরের ক্রেসপো আর ৪৬-এর বাতিস্তুতা, দু’জনই ছয় ফুটের বেশি। বিপক্ষ বক্সে উঁচু বলে অনেক গোল করতেন। ‘বাতি গোল’ তো বিশ্বফুটবলে একটা ট্রেডমার্ক হয়ে উঠেছিল।

বিশেষজ্ঞরা অবশ্য দি’মারিয়ার মন্তব্যে বাস্তবতার চেয়ে বেশি খুঁজে পাচ্ছেন আত্মসমালোচনা আর কোচের স্ট্র্যাটেজিকে হালকা খোঁচা। সাবেয়ার কোচিংয়ে কাপ ফাইনাল খেলা আর্জেন্তিনা এক বছরের মধ্যে তাতা মার্টিনোর কোচিংয়ে কোপায় নেমে টিমের অ্যাটাকিং থার্ডে লম্বা ফুটবলার থাকা না সত্ত্বেও প্রায়শই হাই-বল অ্যাটাকে যাচ্ছে। দি’মারিয়ার কথায়, ‘‘এ রকম অ্যাটাকের সময় আমাদের মতো বেঁটে ফরোয়ার্ডরা বিপক্ষের ডিফেন্ডারদের সঙ্গে এঁটে উঠতে পারছে না। ক্রেসপো বা বাতিস্তুতা থাকলে যেটা হত না।’’

দুঃখের কথা, তিনি— একমেবাদ্বিতীয়ম মেসিও যে পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চি!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন