আইএস যোগে গ্রেফতার, শঙ্কায় অলিম্পিক শহর

মশাল জ্বলে ওঠার দিন সাতেক আগে অলিম্পিকের শহরে সত্যি সত্যিই ঢুকে পড়ল ‘আইএস’ নামের আতঙ্কটা। খাস রিও ডি জেনেইরো থেকেই গ্রেফতার হল ইসলামিক স্টেটের এক অনুগামী। পুলিশের দাবি, জেরার মুখে অভিযোগ স্বীকার করে শায়ের কালাওউন নামে ওই ব্যক্তি জানিয়েছে, এক সময়ে সে সিরিয়াতেও গিয়েছিল।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

রিও ডি জেনেইরো শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৬ ০৩:৩১
Share:

মশাল জ্বলে ওঠার দিন সাতেক আগে অলিম্পিকের শহরে সত্যি সত্যিই ঢুকে পড়ল ‘আইএস’ নামের আতঙ্কটা। খাস রিও ডি জেনেইরো থেকেই গ্রেফতার হল ইসলামিক স্টেটের এক অনুগামী। পুলিশের দাবি, জেরার মুখে অভিযোগ স্বীকার করে শায়ের কালাওউন নামে ওই ব্যক্তি জানিয়েছে, এক সময়ে সে সিরিয়াতেও গিয়েছিল।

Advertisement

বাংলাদেশের গুলশন থেকে ফ্রান্সের নিস, মিউনিখ থেকে ডালাস— দিন কয়েকের ব্যবধানে বিশ্ব জুড়ে ঘটে চলা একের পর এক হত্যাকাণ্ডে এমনিতেই কাঁপছিল রিও। কারণ, ঘটনাগুলোর অধিকাংশতেই মিলেছে আইএস-যোগ। তার উপর, ক’দিন আগেই আল কায়দার শাখা সংগঠনগুলি সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের অনুগামীদের অলিম্পিকে হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়েছিল। তারা এ-ও বলেছিল, ব্রাজিলে ভিসা পাওয়া সোজা। অস্ত্রও জোগাড় করা যায় অনায়াসে। একটা ছুরি নিয়ে একটা মানুষ যদি মার্কিন বা ইজরায়েলি খেলোয়াড়দের উপরে হামলা চালাতে পারে, তা হলে সহজেই বিশ্বের নজর ঘুরে যাবে তার দিকে।

১৯৭২-এর মিউনিখ অলিম্পিকে হত্যাকাণ্ডের স্মৃতিটা তাই ফিরে আসতে শুরু করেছিল ব্রাজিলেও। বেড়েছিল পুলিশি নজরদারি। শুরু হয়েছিল ধরপাকড়। শুধু রিও থেকেই সন্দেহভাজন ১২ জনকে তড়িঘড়ি গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তার পর গত বুধবার রিওর নোভা ইগুয়াস এলাকায় নিজের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় কালাওউনকে।

Advertisement

পুলিশের দাবি, ইন্টারনেটে আইএস-মতবাদ প্রচার করত ৩৪ বছরের এই যুবক। ২০১৪ সালে ব্রাজিলে ফুটবল বিশ্বকাপের সময়েই তার সম্পর্কে জানতে পেরেছিলেন গোয়েন্দারা। কিন্তু তদন্ত শুরু হতেই সিরিয়ায় পালিয়ে গিয়েছিল কালাওউন। সম্প্রতি সে দেশে ফেরে। ধৃতের আইনজীবীর অবশ্য দাবি, ২০১৪-র বিশ্বকাপের সময়ে লেবাননে ছিল কালাওউন। তা ছাড়া, পুলিশের হাতে তার বিরুদ্ধে কোনও জোরালো প্রমাণও নেই।

কূটনীতিকদের একাংশের মতে, খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা নিয়ে আমেরিকা-সহ বিভিন্ন দেশ প্রবল চাপ দিচ্ছে ব্রাজিলকে। অলিম্পিকের উদ্বোধন উপলক্ষে বেশ কয়েক জন রাষ্ট্রপ্রধান এবং প্রায় পাঁচ লক্ষ বিদেশি পর্যটকের হাজির থাকার সম্ভাবনা রিও-তে। এ দিকে দেশ জোড়া আর্থিক সঙ্কটে ব্রাজিলের আইন-শৃঙ্খলার অবস্থা শোচনীয়। চলছে লাগাতার বিক্ষোভ। তা থেকে রেহাই পায়নি অলিম্পিকের মশাল দৌড়ও। সেই সঙ্গে বেড়েছে খুন-চুরি-ধর্ষণের মতো অপরাধ। ব্রাজিলের আইনমন্ত্রী অ্যালেকজান্দ্রে দে মরেইসের দাবি, খুচরো অপরাধ নিয়েই তাঁরা বেশি চিন্তিত। ‘‘এখানে জঙ্গি হানার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য’’— বলেছেন তিনি।

তবে এই দাবিতে ভরসা করছেন না অনেকেই। উঠে আসছে ১৯৯৬-এর আটলান্টা অলিম্পিকের কথাও, যেখানে গর্ভপাত নিয়ে সরকারি নীতির বিরোধিতায় এক ব্যক্তি অলিম্পিক পার্কে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল। মারা গিয়েছিলেন ১ জন, আহত হন ১১১ জন। কুড়ি বছর পরে সেই ঝুঁকিটাই যে বহুগুণ, তা খোলাখুলি বলছেন বর্তমানে ব্রাজিলের বাসিন্দা, প্রাক্তন এফবিআই অফিসার রিচার্ড ফোর্ড। তাঁর কথায়, ‘‘গত এক বছরে সারা বিশ্বে জঙ্গি হানা বেড়েছে। কাজেই ‘ব্রাজিলে সেই আশঙ্কা প্রায় শূন্য’— এটা খুব অপেশাদারের মতো মন্তব্য! বরং এখানের যা পরিস্থিতি, সেই আশঙ্কাটা যথেষ্টই।’’ চিন ইতিমধ্যেই তাদের পুরো অলিম্পিক টিমকে ব্রাজিল সফর নিয়ে সতর্ক করে দিয়েছে।

বিদেশি সংবাদমাধ্যমে একটা চর্চা চলছে যে, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় কার্যত কোনও অভিজ্ঞতাই ব্রাজিলের নেই। সরকারি সূত্রের বক্তব্য, সেই ফাঁক ভরাট করতেই বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় রেখে চলছেন ব্রাজিলের গোয়েন্দারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন