ম্যাচের সেরা অভিষেক, লড়াইয়ে মুগ্ধ অরুণও

তখনও জেতার জন্য দরকার ছিল ৬৭ রান। প্রদীপ্ত প্রামাণিক পরীক্ষা দিতে নামলেন। তখন কে ভেবেছিল, দিনের শেষে তিনিই ফিরবেন নায়কের মতো ব্যাট তুলতে তুলতে!  

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:৩৫
Share:

নায়ক: বাংলার জয়ের নেপথ্যে প্রদীপ্ত ও সুদীপ জুটি।

তখনও জেতার জন্য দরকার ছিল ৬৭ রান। প্রদীপ্ত প্রামাণিক পরীক্ষা দিতে নামলেন। তখন কে ভেবেছিল, দিনের শেষে তিনিই ফিরবেন নায়কের মতো ব্যাট তুলতে তুলতে!

Advertisement

সেই সময়ে ক্রিজে ছিলেন বাংলার সহ-অধিনায়ক সুদীপ চট্টোপাধ্যায়। তাঁকে দেখেই সুদীপ বলে ওঠেন, ‘‘এখান থেকে ছয় পয়েন্ট নিয়ে ফিরতে হলে কিন্তু আমাদেরই দায়িত্ব নিতে হবে। আমাদের জুটির পরে আর কোনও ব্যাটসম্যান নেই।’’ সিনিয়র সতীর্থের কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন প্রদীপ্ত। উইকেট ছুড়ে না দিয়ে আসার প্রতিজ্ঞা থেকে সরেননি।

যখন আর মাত্র ৯ রান প্রয়োজন, তখন সুদীপ আউট হয়ে গেলেন। তখনও নিয়ন্ত্রণ হারাননি প্রদীপ্ত। কামড়ে পড়েছিলেন এক দিকের উইকেট। শেষের দিকে অশোক ডিন্ডার পরামর্শ প্রদীপ্তকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। চেন্নাই থেকে ফোনে প্রদীপ্ত বলছিলেন, ‘‘সুদীপদা আউট হওয়ার পরে চাপ বেড়ে গিয়েছিল। আমি ভেবেছিলাম একটা ছয় মেরে চাপ হাল্কা করে দেব। সেটাই ডিন্ডাদাকে গিয়ে বলি। কিন্তু আমাকে এই ঝুঁকি নিতে বারণ করে ও। বলে, তুই যেমন খেলছিস খেলে যা। সেটাই আমাকে চাঙ্গা করে দেয়। তার পর থেকে খুচরো রান নিয়েই ম্যাচ নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে আসি।’’ ডিন্ডা নিজে রান আউট হয়ে গেলেও ঈশান পোড়েলকে নিয়ে শেষ উইকেটে জয় ছিনিয়ে নেন প্রদীপ্ত।

Advertisement

চেন্নাইয়ের এম এ চিদম্বরম স্টেডিয়ামে চতুর্থ দিনের পিচ ব্যাটসম্যানদের কাছে হয়ে উঠেছিল কঠিন প্রশ্নপত্রের মতো। সেই পিচে প্রদীপ্ত যে ২৫ রানের অপরাজিত ইনিংসটি খেললেন, তা হয়তো ভাল পিচে ১২৫ রানের সমান, মত বাংলার মেন্টর অরুণ লালের। আর রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ নিয়ে অরুণের মন্তব্য, ‘‘মনে হচ্ছিল হার্ট অ্যাটাক হয়ে যাবে! কী অসাধারণ একটা ম্যাচ! দুর্দান্ত লড়াই করে জিতেছে ছেলেরা!’’ শিশুর মতো উচ্ছ্বাস ধরা পড়ছিল অরুণের গলায় যখন বলছিলেন, ‘‘দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অবস্থা থেকে দারুণ ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ছেলেরা। আশা করছি, এই জয়ের পরে আমরা আরও কিছু দুর্দান্ত জয় তুলে নিয়ে রঞ্জি অভিযানে দারুণ ভাবেই এগিয়ে যেতে পারব।’’

আর বাংলার সহ-অধিনায়ক? টানা ১৪ ইনিংসে রান না পাওয়ার পরে সুদীপ বুঝিয়ে দিলেন, অভিজ্ঞতার কোনও বিকল্প হয় না। ১৭০ মিনিট ধৈর্য ধরে ক্রিজে পড়ে থেকে বিপক্ষ বোলারদের যাবতীয় আক্রমণ রুখে দিলেন তিনি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে দশটি সেঞ্চুরি থাকা সত্ত্বেও এই ইনিংসকেই অন্যতম সেরা হিসেবে বেছে নিচ্ছেন সুদীপ। চেন্নাই থেকে ফোনে বললেন, ‘‘রঞ্জিতে প্রচুর রান করেছি। কিন্তু এই ইনিংস আমার মনে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে। এত দিন রান পাচ্ছিলাম না। আজ ব্যাট করতে যাওয়ার সময় সেটা মনের মধ্যে ছিল। তাতেই হয়তো জেতার তাগিদ বেড়ে গিয়েছিল।’’

ম্যাচের সেরা অভিষেক রামন ফোনে বললেন, চেন্নাইয়ের পিচ ব্যাটসম্যানদের জন্য অত্যন্ত কঠিন হয়ে উঠেছিল। তার মধ্যেও যে অগ্নিপরীক্ষায় সফল হয়েছেন, তাতে দলের সকলেই খুশি। অরুণ বললেন, ‘‘যে লড়াইটা ছেলেদের মধ্যে খুঁজছিলাম, সেটা চোখের সামনে দেখিয়ে দিয়ে গেল সুদীপ আর প্রদীপ্ত। পিচে একটা বল ঘুরছে তো অন্যটা সোজা হয়ে যাচ্ছে। একটা বল বাউন্স করছে তো অন্যটা নিচু হয়ে যাচ্ছে। সেখানেও ঝুঁকি নিয়ে লং-অনের উপর দিয়ে একটা ছয় মেরে দিল প্রদীপ্ত। যা অনেকটা চাপ কমাতে সাহায্য করেছে। অভিষেক রামনকেও বাদ দিলে চলবে না। দুই ইনিংসেই ও দারুণ সফল। আমি মুগ্ধ।’’

তামিলনাড়ুর বাঁ হাতি স্পিনার সাই কিশোরকে যখন প্রদীপ্ত ছয় মারেন, তখনও প্রায় ৩০ রান পিছিয়ে বাংলা। এ ধরনের পিচে যে শুধু খুচরো রান নিয়ে জেতা সম্ভব নয়, তা ড্রেসিংরুমে বাংলার মেন্টরের সঙ্গে আলোচনা করে নিয়েছিলেন ব্যাটসম্যানেরা। তাই প্রদীপ্তও ভয় পাননি। তাঁর কথায়, ‘‘আমি বরাবরই ইতিবাচক ক্রিকেট খেলতে পছন্দ করি। এই ম্যাচেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু শেষ ৯ রান করতে ৩০ বল নিয়ে ফেলেছি। কারণ মাথার পিছনে একটাই কথা ঘুরছিল, যে কোনও মূল্যে আমাকে ম্যাচ বার করতেই হবে। আউট হওয়া চলবে না।’’ ইচ্ছে থাকলেও ঝুঁকি নেননি প্রদীপ্ত। ফল, বাংলার ছয় পয়েন্ট।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন