ভারতীয় দলে অনেক দিন ধরেই একজন কোচের দরকার ছিল। ‘টিম ডিরেক্টর’ কনসেপ্টটা আমাদের দেশের ক্রিকেটে পাকাপাকি ভাবে কার্যকর হয়ে উঠবে কি না, এটা নিয়ে একটা সন্দেহ ছিল। বোধহয় সে জন্যই ভারতীয় বোর্ড একজন কোচের খোঁজে ছিল, যে কি না ক্রিকেটারদের কাছে শ্রদ্ধেয় এবং জনপ্রিয় দুই-ই।
অনিল কুম্বলে সে রকমই একজন। দায়বদ্ধতা আর সততার দিক থেকে ওকে নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। মাঠে ও মাঠের বাইরেও সবার সঙ্গে ওর সম্পর্ক ভাল। এখনকার কোচেদের যেহেতু মাঠের বাইরেও ক্রিকেটারদের সমান ভাবে সামলাতে হয়, তাই এই ব্যাপারটা ওর কাজে লাগবে। তা ছাড়া সবাই ওকে শ্রদ্ধা করে।
ভারতীয় দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর রবি শাস্ত্রী যে দলের উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছিল, তা নিয়ে দ্বিমত নেই। ওর দায়িত্বে দলও ভাল করেছে ওয়ান ডে, টি টোয়েন্টিতে। কিন্তু তাও রবির উপর টিম ডিরেক্টরের তকমাটা চাপানো ছিল। যার মানে, বোর্ড নতুন কাউকে খুঁজছিল।
কেন কোচ হিসেবে অনিল কুম্বলের কাছে ভাল কিছু আশা করছি? অনিল জীবনে অনেক ওঠাপড়া দেখেছে। ও যে মুরলীধরন, শেন ওয়ার্নদের মতো প্রতিভা নিয়ে ক্রিকেটে এসেছিল, তা নয়। কিন্তু স্ট্র্যাটেজি, ডিসিপ্লিন আর ডেডিকেশন সম্বল করে ও নিজেকে তৈরি করে নিয়েছে। ওর সেরা আউটগুলো যদি ইউটিউবে দেখেন, তা হলে বুঝতে পারবেন প্রতিটা অসাধারণ স্ট্র্যাটেজির ফল। এই ব্যাপারটা ওর কোচিংয়েও কাজে লাগবে। ও জানে কী করে সঠিক প্ল্যানিং ও স্ট্র্যাটেজির মাধ্যমে সাফল্য পাওয়া যায়। এই কনসেপ্টটাই ও দলের মধ্যে শেয়ার করবে।
আমরা একটা টিম বানানোর চেষ্টা করছি। যার একটা ধারাবাহিকতা থাকবে। আর দলে নতুন ছেলেরা আসছে, তাদেরও সামলাতে হবে। এ রকম একটা সময়ে অনিল কুম্বলের মতো কাউকে কোচ করে আনাটা খুব দরকার ছিল।
ইন্ডিয়া টিমে অশ্বিন একটা বড় ফ্যাক্টর। ও ভাল বল করলে ভারতের জেতার সম্ভাবনা বাড়ে। অশ্বিনের সঙ্গে অনিলের পার্টনারশিপটা আরও ভাল জমবে এই কারণে যে, অশ্বিন ওর বোলিংয়ের যতটা গভীরে যেতে চায়, অনিল ততটাই নিয়ে যেতে পারবে। ওরা নিজেদের মধ্যে যেমন বোলিংয়ের বেসিকস নিয়ে আলোচনা করতে পারবে, তেমনই বোলিংয়ের বিজ্ঞানটাও দু’জনেরই ভাল মতো রপ্ত। ফলে বিদেশের মাটিতেও অশ্বিনকে আরও কার্যকর করে তুলতে পারবে অনিল।
কিন্তু অন্য বোলারদেরও অনিলের কাছ থেকে অনেক কিছু নিতে হবে। এমনকী যারা দলের বাইরে থাকছে, তাদেরও। কারণ বোলিংটাই ভারতীয় ক্রিকেটের এখন সবচেয়ে দুর্বল জায়গা। একটা সিস্টেম তৈরি করা দরকার যার মাধ্যমে সেটা হতে পারে। যেমন অক্ষর পটেল জিম্বাবোয়েতে ভাল বল করল। পরের সিরিজে ও টিমে নেই। কিন্তু কোচের সঙ্গে ওর যোগাযোগটা যেন ছিন্ন না হয়ে যায়। এ রকম বোলারদের ট্র্যাক করতে হবে। কোচকে তাদের সম্পর্কে আপডেটেড হতে হবে। অনিলের সঙ্গে কথা বলে বোর্ডের এ রকম একটা সিস্টেম তৈরি করা দরকার।
আর অনেককে বলতে শুনছি স্বভাবের দিক থেকে বিরাট কোহালি আর অনিল কুম্বলে যখন দু’জন বিপরীত মেরুতে, তখন দু’জনের মধ্যে একটা সংঘাত হতে পারে। আমার কিন্তু মনে হচ্ছে উল্টোটাই হবে। কারণ, বিরাটের আগ্রাসনটাকে ব্যালান্স করবে অনিল। আমার ধারণা ও সেটা এখন থেকেই প্ল্যান করছে।
এখনকার কোচেরা ড্রেসিংরুমের সঙ্গে একাত্ম না হয়ে উঠতে পারলে তাদের পক্ষে সফল হওয়া মুশকিল। আধুনিক ক্রিকেটে টিমের সবচেয়ে হার্ডওয়ার্কিং লোক হতে হয় কোচকেই। আমার মনে হয় অনিল কুম্বলে যে রকম ‘ফ্লেক্সিবল’, তাতে ওর এই নতুন ভূমিকার সঙ্গে মানিয়ে নিতে কোনও সমস্যা হবে না।
তা ছাড়া ভারতীয় দলের কোচের জায়গাটা এমনই যে তাকে স্টেজের পিছন থেকে কাজ করতে হয়। সে সামনে আসতে চাইলে মারাত্মক ইগো সমস্যা চলে আসে টিমের মধ্যে। যেমন এসেছিল গ্রেগ চ্যাপেলের ক্ষেত্রে। এই ব্যাপারে ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম সফল কোচ গ্যারি কার্স্টেন ছিলেন আদর্শ। উনি বরাবর পিছনে থেকেই কাজ করে এসেছেন। অনিলও সে রকমই মানুষ। মেন্টর হলেও মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের সঙ্গে মাঠে নেমে ওকে কাজ করতে দেখেছি। তাই কোচিংয়ের অভিজ্ঞতা না থাকলেও আধুনিক কোচিংয়ের ধারণাটা অনিলের আছে বলেই আমার বিশ্বাস।
কুম্বলেতে সায় চ্যাপেলের
অনিল কুম্বলে ভারতের কোচ হওয়ায় খুশি গ্রেগ চ্যাপেল। প্রাক্তন ভারতীয় কোচ নিজের কলামে লিখেছেন, ‘‘বিরাট-কুম্বলে জুটি ভারতীয় ক্রিকেটে শক্তিশালী হয়ে উঠবে।’’ তাঁর মতে, মাঠে ক্যাপ্টেনের উপর ভরসা রাখতে হয় কোচকে। চ্যাপেলের আশা, কুম্বলে সেটা ভালই করবেন। রাহুল দ্রাবিড়ের দলের ‘হৃদয়’ ছিলেন কুম্বলে, মনে করেন চ্যাপেল। তিনি আরও মন্তব্য করেন, ‘‘ওই দলে যদি আরও কয়েকজন স্বার্থহীন ক্রিকেটার থাকত, তা হলে ভারতকে হারানো অসম্ভব হয়ে উঠত।’’