উৎসাহ: বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে শাহজাদের মেন্টরের ভূমিকায় আফ্রিদি। সঙ্গে বাংলার অপরূপও। ফাইল চিত্র
‘ফ্যান’ ছবির সেই ভক্ত গৌরবের মতো না হলেও শাহরুখ খানের জন্য নাকি পাগল মহম্মদ শাহজাদ। বলিউড বাদশার কত যে সংলাপ মুখস্থ তাঁর, তার হয়তো কোনও হিসেব নেই। দলের ড্রেসিংরুম মাতিয়ে রাখেন এসআরকে-র গরমাগরম ও মজাদার সংলাপেই।
মঙ্গলবার দীপক চাহারকে ফাইন লেগ দিয়ে বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে পাঁচ নম্বর ওয়ান ডে সেঞ্চুরি পূর্ণ করে সে জন্যই বোধহয় শাহরুখ-ভঙ্গিমায় দু’দিকে দু’হাত ছড়িয়ে মুহূর্তটাকে উপভোগ করলেন আফগানিস্তানের সবচেয়ে আগ্রাসী ব্যাটসম্যান। জানা গেল, আগেও তিনি সেঞ্চুরি করে এ ভাবেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।
প্রায় ৯৫ কেজি ওজন। তবু সারা দিন ধরে মাঠে পড়ে থাকার মতো অদম্য মানসিকতা তাঁর। এই দৃঢ় মানসিকতাই তাঁকে প্রায় ৩৮ ওভার ব্যাট হাতে যুদ্ধ করার পরেও ৫০ ওভার স্টাম্পের পিছনে গ্লাভস হাতে উইকেট সামলানোর ক্ষমতা জোগায়, বলছেন তাঁর কোচেরা।
আফগানিস্তানের প্রাক্তন কোচ লালচাঁদ রাজপুত, যিনি জিম্বাবোয়ের কোচের দায়িত্ব পেয়েছেন সদ্য, তিনি হারারে থেকে ফোনে বলেন, ‘‘শাহজাদের মতো ক্রিকেট প্রতিভা ও দেশে বিরল। চেহারা ও রকম হলেও টেকনিক ও মানসিকতায় ও ঠিক সব সামলে নেয়।’’ মঙ্গলবার শাহজাদের ইনিংস দেখেননি রাজপুত। কিন্তু স্কোর শুনে বললেন, ‘‘ভারতের মতো দলের বিরুদ্ধে এই ব্যাটিংই তো ওর দৃঢ় মানসিকতার পরিচয় দেয়।’’
এর আগেও প্রায় ১২৫ কেজি ওজন নিয়ে বার্মুডার ডোয়েন লেভেরককে খেলতে দেখেছে ক্রিকেটবিশ্ব। তাঁরও আগে স্থূলকায় ডেভিড বুন, অর্জুন রণতুঙ্গারাও ক্রিকেট দুনিয়া শাসন করেছেন। সেই ধারাই বজায় রেখে চলেছেন এ প্রজন্মের মহম্মদ শাহজাদ।
বিপিএল-এ রংপুর রাইডার্সে শাহজাদ যখন খেলতেন, তখন সেই দলে ছিলেন পাকিস্তানের প্রাক্তন অধিনায়ক শাহিদ আফ্রিদিও। সেই দলের সহকারী কোচ ছিলেন কলকাতার অপরূপ চক্রবর্তী। তিনি জানালেন, আফ্রিদির কাছে ক্রিকেট-পাঠের চেয়ে মানসিক ভাবে বেশি উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন শাহজাদ। অপরূপ বলেন, ‘‘আফ্রিদির পরামর্শে ও প্রচুর পরিশ্রম করত। তবে মানসিক ভাবে নিজেকে চাঙ্গা রাখার উপায় নিয়েই বেশি কথা হত ওঁদের মধ্যে। ব্যাটিংয়ের স্টান্সেও এখন কিছুটা বদল হয়েছে ওর। দু’বছরে যে নিজেকে কতটা বদলেছে শাহজাদ, তার প্রমাণ তো পাওয়াই গেল।’’
শাহজাদের বাঙালি কোচিং সঙ্গীর মতে, ‘‘সিঙ্গলস নেওয়াটা একদম পছন্দ নয় ওর। চার-ছয়েই বেশি রান তুলতে চায়। কারণ, ও জানে ওকে পঞ্চাশ ওভার কিপিংও করতে হবে। দুটো একসঙ্গে সামলানো বেশ কঠিন। এই ব্যাপারে ওর আদর্শ হলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি।’’ মঙ্গলবারও দুবাইয়ে এশিয়া কাপের সুপার ফোর ম্যাচে ব্যাট করার সময় তাঁর আদর্শ ক্রিকেটার মহেন্দ্র সিংহ ধোনি তাঁর পিছনে ছিলেন। তাই আরও উদ্বুদ্ধ হয়ে একেবারে হিসাব কষে ইনিংসটা খেলেন। সেঞ্চুরির মুখে ছিলেন অতি সাবধানী। ৭৬ বলে ৯৪ রান তোলার পরে ছ’টা রান করতে নেন আরও ১২টি বল।
সিঙ্গলসও বেশি নেননি। ১১টি চার ও সাতটি ছয় মেরে প্রায় ৭০ শতাংশ রান মাঠের বাইরে থেকে আনেন তিনি। ম্যাচের বিরতিতে তাঁকে টিভিতে বলতে শোনা যায়, ‘‘এখানে তিন সপ্তাহ ধরে আছি। তার আগেও এখানে অনেক বার খেলেছি। তাই দুবাইয়ের পরিবেশ, উইকেট সম্পর্কে ধারণা আছে। আজ উইকেটটা বেশ পাটা। তাই ম্যাচের আগেই ভেবেছিলাম, আজকের দিনটা আমার হতে পারে।’’
এই গরমে টানা ব্যাটিংয়ের পরে আবার টানা কিপিং! শাহজাদ বলেন, ‘‘ব্যাটিংয়ের পরে ড্রেসিংরুমে গিয়ে আইস বাথ নিয়েছি। ভাল করে স্নান করেছি। এখন একেবারে তাজা।’’