দেখিয়ে দিয়েছি কুলদীপদের কী ভাবে খেলতে হয়, বলছে জুটি

মঙ্গলবারের আগে পর্যন্ত খুব বড় ক্রিকেটপ্রেমীও এই নাম দুটো জানতেন বলে অভিযোগ নেই। কিন্তু হংকংয়ের এই দুই অখ্যাত ক্রিকেটারই এশিয়া কাপে ভারতের প্রথম ম্যাচে রোহিত শর্মা এবং ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের শিরদাঁড়ায় আতঙ্কের স্রোত বইয়ে দিয়েছিলেন প্রথম উইকেটে ১৭৪ রান যোগ করে

Advertisement

কৌশিক দাশ

দুবাই শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:৩৫
Share:

চর্চায়: দুই ওপেনার নিজাকত খান ও অংশুমান রথ। নিজস্ব চিত্র

দু’জনেই ছ’ফুটের ওপর লম্বা। বয়স এক জনের কুড়ি, অন্য জনের ছাব্বিশ। ওয়াঘার এ-পার ও-পার থেকে তাঁদের পরিবার চলে গিয়েছিল হংকংয়ে। তাঁরা— অংশুমান রথ এবং নিজাকত খান।

Advertisement

মঙ্গলবারের আগে পর্যন্ত খুব বড় ক্রিকেটপ্রেমীও এই নাম দুটো জানতেন বলে অভিযোগ নেই। কিন্তু হংকংয়ের এই দুই অখ্যাত ক্রিকেটারই এশিয়া কাপে ভারতের প্রথম ম্যাচে রোহিত শর্মা এবং ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের শিরদাঁড়ায় আতঙ্কের স্রোত বইয়ে দিয়েছিলেন প্রথম উইকেটে ১৭৪ রান যোগ করে। অংশুমান করেছিলেন ৯৭ বলে ৭৩ রান। নিজাকতের রান ১১৫ বলে ৯২।

এত সহজে কী করে খেলে দিলেন ভারতীয় বোলিং? বিশেষ করে যেখানে মাঝের ওভারগুলোয় বল করছিলেন সীমিত ওভারের ক্রিকেটে অন্যতম সেরা স্পিন-জুটি কুলদীপ যাদব এবং যুজবেন্দ্র চহাল। যাঁদের সামলাতে হিমশিম খেয়েছে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানেরাও!

Advertisement

ম্যাচের পরের দিন সকালেই টিম হোটেলের লাউঞ্জে পাশাপাশি বসিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছিল ভারত-হংকং ম্যাচের দুই নায়ককে। সেখানে বসেই এই দুই ওপেনার ফাঁস করলেন কী ভাবে সহজেই খেলে দিতে পেরেছিলেন ভারতের ‘কুলচা’কে। ‘‘আমরা আফগানিস্তানের সঙ্গে নিয়মিত ক্রিকেট খেলি। ওদের যে সব স্পিনার আছে, তাদের খেলা কিন্তু মোটেও সহজ কাজ নয়। রশিদ খানকে তো এত খেলার পরেও বোঝা যায় না বলটা কোন দিকে ঘোরাবে। কিন্তু স্পিন খেলার পাঠটা ভালই রপ্ত হয়ে যায়,’’ বলছিলেন অংশুমান। যাঁর পরিবার ছেলের জন্মের আগেই চলে গিয়েছিলেন হংকংয়ে।

অংশুমানের কথা শুনতে শুনতেই ঘাড় নাড়ছিলেন তাঁর বাইশ গজের সঙ্গী। যাঁর জন্ম পাক-পঞ্জাবের শিনকায়। সেখান থেকে এক বছর বয়স হওয়ার আগেই ছেলেকে নিয়ে বাবা-মা চলে যান হংকংয়ে। সঙ্গীর কথা শুনতে শুনতে নিজাকত যোগ করেন, ‘‘ওদের বল বুঝতে পারছিলাম বলেই তো শট খেলতে কোনও সমস্যা হয়নি।’’

বলা হয়ে থাকে, চায়নাম্যান (বাঁ-হাতে যিনি ডান হাতি ব্যাটসম্যানদের ক্ষেত্রে অফস্পিন করান আর গুগলিটা উল্টো দিকে যায়) বোলারদের বোঝা খুব কঠিন। কুলদীপের গুগলি তো আরওই বোঝা যায় না। বিশেষজ্ঞরা বার বার বলেছেন, কব্জির মোচড় দেখে না বুঝতে পারলে স্ট্রোক খেলা যাবে না। আপনাদের ক্ষেত্রে কী হয়েছে? কুড়ি বছর বয়সি হংকং অধিনায়ক অংশুমান জবাব দিলেন, ‘‘আমি তো বুঝতে পারছিলাম। কোনও সমস্যা হয়নি। আর বলটা বুঝতে পারলে আমি হয় ফ্রন্টফুটে খেলি, না হয় ব্যাকফুটে। মাঝামাঝি আটকে যাই না। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা না ফ্রন্টফুট, না ব্যাকফুট— কোথাও পুরোপুরি যায় না। তাই স্পিনারদের বিরুদ্ধে সমস্যায় পড়ে যায়।’’ একটু থেমে যোগ করলেন, ‘‘কুলদীপদের বল যে বোঝা যায়, সেটা বোধ হয় আমরা সবাইকে বুঝিয়ে দিলাম।’’ অংশুমান যখন কথাগুলো বলছিলেন, কোনও দম্ভ নয়, ঠিকরে পড়ছিল আত্মবিশ্বাস।

ভারত, পাকিস্তান ও আরও বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ক্রিকেটারদের নিয়ে তৈরি হংকং দল। অংশুমানের মন্তব্য, ‘‘আমাদের মাথায় থাকে না, আমরা ভারত, পাকিস্তান না অন্য কোথা থেকে এসেছি। আমরা এখন শুধুই হংকংয়ের ক্রিকেটার।’’ হয়তো সে জন্যই বুধবার দুপুরে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ শুরু হলে কোনও দলকে সমর্থন করবেন না তিনি। শুধু দেখতে চান একটি রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ। নিজাকত অবশ্য একই প্রশ্নে শুধু হাল্কা হাসিই হাসেন।

দুই ওপেনারের মধ্যে আক্রমণাত্মক ছিলেন নিজাকতই। ভারতীয় বোলারদের বিরুদ্ধে অনায়সে শট খেলেছেন। কোনও বোলার কি একটু হলেও সমস্যা ফেলেছিলেন? নিজাকত মনে করতে পারছেন না। শুধু একটাই আফসোস করছেন। ‘‘ম্যাচটা আমাদের জিতিয়ে দিয়ে আসা উচিত ছিল। আনসি (অংশুমান) আউট হয়ে যাওয়ার পরে আমার আরও অনেকটা সময় উইকেটে থাকা উচিত ছিল। এখানেই আমাদের অভিজ্ঞতার অভাব ধরা পড়েছে,’’ বলছিলেন পাক বংশোদ্ভূত বিরাট কোহালির ভক্ত এই ওপেনার।

অংশুমানের পরিবার হংকং এসেছে ভুবনেশ্বর থেকে। হংকংয়েই জন্ম, তার পরে লেখাপড়ার সূত্রে ইংল্যান্ড যাত্রা। ভারতীয় রক্ত শরীরে থাকলেও কোনও ভারতীয় ক্রিকেটার নন, শ্রীলঙ্কার কুমার সঙ্গকারার ভক্ত তিনি। ‘‘সঙ্গার খেলার স্টাইল, মাঠ এবং মাঠের বাইরের আচরণ, দারুণ লাগে,’’ বলছিলেন হংকংয়ের বাঁ হাতি ওপেনার। আর কোহালির ফিটনেসে মুগ্ধ নিজাকত।

মঙ্গলবার তাঁরা ম্যাচ জেতাতে না পারলেও, দুই ওপেনার কিন্তু আশা হারাচ্ছেন না। অংশুমান পাশে বসে থাকা সঙ্গীর কাঁধে হাত রেখে বলে উঠলেন, ‘‘এ রকম ম্যাচ নিশ্চয়ই আরও হবে।’’ মাথা নাড়িয়ে নিজাকত বলে উঠলেন, ‘‘অবশ্যই। হংকংয়ের জন্য আকাশই এখন সর্বোচ্চ সীমা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন