Australia vs India

অস্ট্রেলিয়া টিম বাসে পাথর, ঘটনাকে লঘু করতে ব্যস্ত পুলিশ-প্রশাসন

অসমে জঙ্গি সমস্যা বহাল। বহাল রয়েছে আফস্পাও। তাই খেলা চলাকালীন ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল। এমনকী মাঠে জ্যামার থাকায় দেশি-বিদেশি সাংবাদিকরা খবর পাঠাতেও বেজায় সমস্যায় পড়েছিলেন। টিম বাসের সঙ্গে ছিল পুলিশের এসকর্ট।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৭ ১৩:৩৫
Share:

এই বাসে করেই ম্যাচ শেষে ফিরছিলেন স্মিথরা-নিজস্ব চিত্র।

গত কাল, মঙ্গলবার রাতে অস্ট্রেলিয়ার টিম বাস লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া ও তার আঘাতে কাচের জানালার বড় অংশ ভেঙে যাওয়ায় মুখ পুড়েছে গুয়াহাটি তথা দেশের। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নিন্দার মুখে পড়েছে অসম ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন, অসম পুলিশ, বিসিসিআই। তার পরেও পুলিশ ও অসম ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়া টিম বাসে পাথর ছোড়ার ঘটনাকে লঘু করে দেখাতেই ব্যস্ত।

Advertisement

আরও পড়ুন: অস্ট্রেলিয়ার টিমবাসের কাচ ভাঙল পাথরে, মুখ পুড়ল গুয়াহাটির

আরও পড়ুন: সমস্যা করল বাঁ-হাতি পেস

Advertisement

গত কাল রাতে ভারতকে হারিয়ে হোটেলে ফেরার পথে সাউকুচি এলাকায় ৩৭ নম্বর জাতীয় সড়কে দুর্বৃত্তরা অস্ট্রেলিয়ার টিম বাস লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ে। ভাঙা জানালার ছবি টুইট করে অতিথি দলের তরফ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেন ওপেনার অ্যারন ফিঞ্চ। রাতেই পুলিশ কমিশনার হীরেন নাথ-সহ তাবড় কর্তা, আমলারা হোটেলে যান। অস্ট্রেলিয়া দল ঘুমোতে যায় ভোর প্রায় চারটেয়। আজ সকালেই ফের হোটেলে আসেন ক্রীড়ামন্ত্রী নবকুমার দোলে, ডিজিপি মুকেশ সহায়,মুখ্য সচিব ভি কে পিপারসেনিয়া এবং পুলিশ কমিশনার। সকলেই জানান, ঘটনাটি দুঃখজনক। কিন্তু নিরাপত্তায় খামতি ছিল না। স্টেডিয়াম, পরিকাঠামো, গোটা ব্যবস্থায় অস্ট্রেলিয়া দল খুশি ছিল। রাতের ঘটনা নিয়ে তারা কোনও অভিযোগও দায়ের করেনি। ওই ঘটনার কোনও ছাপ চলতি অনুর্ধ-১৭ বিশ্বকাপে পড়বে না।

ইঁট ছুঁড়ে এই ভাবেই জানলার কাঁচ ভাঙা হয়েছে।

অসমে জঙ্গি সমস্যা বহাল। বহাল রয়েছে আফস্পাও। তাই খেলা চলাকালীন ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল। এমনকী মাঠে জ্যামার থাকায় দেশি-বিদেশি সাংবাদিকরা খবর পাঠাতেও বেজায় সমস্যায় পড়েছিলেন। টিম বাসের সঙ্গে ছিল পুলিশের এসকর্ট। তার পরেও লাল রঙের সেমি বুলেটপ্রুফ এএস০১এইচসি ৯৫৬৭ নম্বরের ত্রিশূল ট্রান্সপোর্টের বাস লক্ষ্য করে কী ভাবে দুষ্কৃতীরা পাথর ছুড়তে পারে? পুলিশকর্তারা নিরাপত্তার গাফিলতি মানতে না চাইলেও প্রশ্ন উঠছে, যদি পাথরের বদলে গ্রেনেড ছোড়া হত- তখন কী ঘটতে পারত?

অর্থ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা রাতেই টুইট করে লেখেন, “আমরা অত্যন্ত ক্ষমাপ্রার্থী। অসমবাসী কখনও এই ধরণের আচরণ সমর্থন করে না। দোষীকে শাস্তি দেওয়া হবে।”

রবীন্দ্র জাদেজা আজ সকালে ঘটনাটি নিয়ে টুইটে লেখেন, অতিথিদের সঙ্গে এমন ব্যবহার করা ঠিক হয়নি। রবিচন্দ্রন অশ্বিন লিখেছেন, ভারত তার অতিথিদের অত্যন্ত সম্মান করে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বাসে পাথর ছোড়ার ঘটনা সেই ভাবমূর্তিকে কালিমালিপ্ত করল। আমাদের অনেক বেশি দায়িত্বশীল ব্যবহার করা প্রয়োজন।

এত গুরুতর ঘটনার পরেও প্রথম থেকেই পুলিশ ঘটনাটি ঢাকার চেষ্টায় ব্যস্ত। এমনকী অসম ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি দেবজিৎ শইকিয়াও রাতে বলেন, রাজ্যের স্বার্থে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের ছোট ঘটনা বড় করে দেখানো উচিত নয়। হীরেন নাথের বক্তব্য, “এমন কোনও বড় ঘটনা ঘটেনি। নিরাপত্তা পর্যাপ্ত ছিল। এ কোনও পাগল বা মাতালের কাণ্ড হতে পারে। মোটেই পরিকল্পিত আক্রমণ নয়। শুনেছি অনেক সময় সামনের চাকা থেকে পাথর ছিটকেও তীব্র গতিতে চলা বাসের কাচ ভাঙতে পারে। যুগ্ম কমিশনার ঘটনার তদন্ত করছেন। অস্ট্রেলিয়া দল কোনও অভিযোগ করেনি। আমরাই তদন্ত চালাচ্ছি। পুলিশ দু’জনকে আটক করেছে।” কিন্তু ফিঞ্চ পাথর ছোঁড়ার কথা বলেছেন। কমিশনারের বক্তব্য, ফিঞ্চ বাইরে থেকে পাথর ছোঁড়ার কথা লেখেননি। ঘটনাটিকে ভীতিপ্রদ বলেছেন মাত্র। সংবাদমাধ্যমেরও বাড়াবাড়ি করা উচিত নয়। কমিশনারের দাবি, ঘটনায় কেউ জখম হননি। কিন্তু হোটেলকর্মীরা জানান, কাচে হাতে আঘাত পেয়েছেন একজন। এ দিকে গাড়ি সংস্থা ত্রিশূলের তরফে বলা হয়, বাসের ভিতরে তৈরি হওয়া উচ্চ চাপের ফলেও এমনটা ঘটে থাকতে পারে।

অসমে জঙ্গি সমস্যা বহাল। বহাল রয়েছে আফস্পাও। তাই খেলা চলাকালীন ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল। এমনকী মাঠে জ্যামার থাকায় দেশি-বিদেশি সাংবাদিকরা খবর পাঠাতেও বেজায় সমস্যায় পড়েছিলেন। টিম বাসের সঙ্গে ছিল পুলিশের এসকর্ট।

বাসের চালক ইমারান আলি বলেন, এসকর্ট গাড়িগুলির সঙ্গেই যাচ্ছিলাম। হঠাৎ জোরে শব্দ পাই। ভিতরে খেলোয়াড়রা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু আমি বাস না থামিয়ে সোজা হোটেলে ঢুকে যাই। বাসের সঙ্গে থাকা এসকর্ট গাড়ির পুলিশকর্মীরাও পাথর ছোড়া ব্যক্তিদের ধরার চেষ্টা করেননি।

বিপর্যস্ত অজি টিম বাস।

সাধারণত এমন ঘটনা ঘটলে বাসের কাচের ফরেনসিক পরীক্ষা হয়। বিশদ তদন্তের পরে তবেই ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামত করা হয়। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে পাথরের ঘায়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাসটিকে ভোরেই পুলিশ সারাতে পাঠিয়ে দেয়। তড়িঘড়ি নতুন কাচও লাগানো হয়। পুলিশ ও কর্মকর্তাদের দাবি, ওই বাসেই অস্ট্রেলিয়া দল বিমানবন্দরে যাবে। তাই তাড়া ছিল। উচ্চ নিরাপত্তা বলয়ে থাকা খেলোয়াড়দের জন্য সেমি বুলেটপ্রুফ বাস দেওয়ার কথা। কিন্তু পাথরের ঘায়ে যে ভাবে বাসের এতটা অংশের কাচ ভেঙেছে, তাতে কাচ কতটা শক্ত ছিল– তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন