রুপো এলেও হিমাকে নিয়ে উল্লাস গ্রামে

জুলাই মাসে ফিনল্যান্ডে জুনিয়র বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স মিটে মেয়ে সোনা জেতার পর থেকে দম ফেলতে পারেননি হিমার বাবা-মা। যেমন শুভেচ্ছাবার্তা, পুরস্কারের স্রোত আসতে থাকে তেমনই বাড়তে থাকে প্রত্যাশার পারদ।

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত 

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৮ ০৪:৫৩
Share:

রাতভর বাড়ির সামনে, চাষের জমিতে জ্বলেছে বাতি। দু’দিন ধরে চলেছে নামগান। উদ্দেশ্য একটাই। দেশের হয়ে আরও একটা সোনা। শেষ পর্যন্ত জার্কাতায় এশিয়ান গেমসে হিমা দাসের সেই সোনার দৌড় থেমে গেল রুপোতেই। যা দেখে খানিক থমকে গিয়েছিল ধিঙের গ্রামে হিমা দাসের বাড়িতে জড়ো হওয়া ভিড়। তারপরেই ফেটে পড়ল উল্লাসে। রুপো পেলেও ফের নিজের ও দেশের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে অসমের এই ভূমিকন্যা।

Advertisement

জুলাই মাসে ফিনল্যান্ডে জুনিয়র বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স মিটে মেয়ে সোনা জেতার পর থেকে দম ফেলতে পারেননি হিমার বাবা-মা। যেমন শুভেচ্ছাবার্তা, পুরস্কারের স্রোত আসতে থাকে তেমনই বাড়তে থাকে প্রত্যাশার পারদ। ৩ নম্বর কান্ধুলিমারি গ্রামের বাড়ি ও পাশের নাম-ঘরে গত দুই দিন ধরে চলছিল নামগান। বাড়িতে আসা সকলের জন্যে নাগাড়ে পিঠে বিলিয়েছেন বাবা রঞ্জিৎ দাস ও মা জোনালি দাস। হিমার সঙ্গেই গিয়েছেন তাঁর প্রশিক্ষক নিপন দাস। হিমার সবচেয়ে প্রিয় গায়ক জুবিন গর্গ হিমাকে উৎসাহ দিতে নিজেই জাকার্তা চলে গিয়েছিলেন।

রবিবার সকাল থেকে অধীর আগ্রহে গোটা গ্রামের মানুষ, সংবাদমাধ্যম, অনুরাগীরা কান্ধুলিমারিতে ভিড় জমিয়েছিলেন। প্রথমে শোনা গিয়েছিল, ঘরের মেয়ের দৌড় ৩টেয়। পর জানা যায় সাড়ে পাঁচটায় দৌড়োবে ‘ধিঙ এক্সপ্রেস’।

Advertisement

দমবন্ধ দৌড়ে শেষের দূরত্বটা এত দিন যেভাবে ঘুচিয়ে দিয়েছেন হিমা, ফাইনালে তা পারলেন না। ‘কাম অন’ হিমা ধ্বনির মধ্যেও বাহরিনের সালোয়ার সঙ্গে শেষ পঞ্চাশ মিটারে তাঁর দূরত্বটা কমল না। খানিকক্ষণের জন্য হতাশায় থমকে গিয়েছিল উল্লাস। মনে পড়ছিল লন্ডন অলিম্পিক্সে মেরি কমের হেরে যাওয়ার সময়টা। কিন্তু তারপরেই রঞ্জিৎবাবু এবং হিমার বাড়ির সকলে আনন্দ শুরু করেন। শুরু হয় অকাল দীপাবলী। আতসবাজির আলো ও শব্দে ঢেকে যায় কান্ধুলিমারি। রঞ্জিৎবাবুর বক্তব্য, ‘‘সোনাই শেষ কথা নয়। মেয়ে আগের চেয়েও ভাল সময় করেছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দু’বার জাতীয় রেকর্ড ভেঙেছে। তার মূল্যও কম নয়। এই ভাবে এগোলে ভবিষ্যতে দেশকে সোনা দেবেই মেয়ে।

এশিয়ান গেমসে প্রতিদিন হিমাদের ৫০ ডলারের দৈনিক ভাতা পাওয়ার কথা। কিন্তু খেলোয়াড়দের দেওয়া ফোরেক্স কার্ড কার্যকর না হওয়ায় হিমারা গেমস ভিলেজের বাইরে বেরোতেও পারছেন না। মেয়ের সঙ্গে বেশি কথাও হয়নি বাবা-মায়ের। আজ দ্বিতীয় হওয়ার পরে মাথায় অসমের ফুলাম গামোসা জড়ানো প্রশিক্ষক নিপন দাসের হাত থেকে তেরঙ্গাটা নিয়ে নেন। গলায় ঝুলিয়ে নেন অসমের গর্বের প্রতীক ফুলাম গামোসা। কোথাও যেন আগের সেই উচ্ছ্বাসটা দমিত। মা জোনালিদেবী জানান, প্রার্থনা চলছিল সোনার পদকের। কিন্তু মেয়ের লড়াইটাই আসল সোনা। আপাতত রাতে মেয়ের সঙ্গে কথা বলার অপেক্ষায় আছেন বাবা-মা।

অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল বলেন, ‘‘হিমা গোটা দেশকে গর্বিত করেছেন।’’ অর্থমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা বলেন, ‘‘রাখির দিন হিমা আমাদের অসাধারণ উপহার দিল।’’

এর আগে ১৯৬৬ সালে এশিয়ান গেমসে ৮০০ মিটার দৌড়ে সোনা পেয়েছিলেন অসমের ভোগেশ্বর বড়ুয়া। ১৯৮৬ সালে শুটিংয়ে ব্রোঞ্জ পান জয়দীপ দাস। ২০০৬ সালের এশিয়াডে তিরন্দাজিতে ব্রোঞ্জ পেয়েছিলেন জয়ন্ত তালুকদার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন