কেরল ব্লাস্টার্স-১ (বিনীত) : আটলেটিকো দে কলকাতা-১ (পিয়ারসন)

তিন টাচে তিন বার শেষ চার

‘কফি উইথ করণ’ শো-এ এসে শব্দটা প্রথম বলেছিলেন শাহরুখ খান। ‘ডিমোশনাল’ মানে ‘ডিটাচড্’ কিন্তু ‘ইমোশনাল’! মঙ্গলবার রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামে ম্যাচ শেষের পর যেন সেই ‘ডিমোশনাল’ মুহূর্ত মিক্সড জোনে। ড়্রেসিংরুম ছেড়ে বেরোনোর সময় কেরলের মেহতাবের সঙ্গে দেখা কলকাতার ইয়ান হিউমের।

Advertisement

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৬ ০২:৫৯
Share:

পিয়ারসেনকে নিয়ে গোলের উচ্ছ্বাস। মঙ্গলবার রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

‘কফি উইথ করণ’ শো-এ এসে শব্দটা প্রথম বলেছিলেন শাহরুখ খান।

Advertisement

‘ডিমোশনাল’ মানে ‘ডিটাচড্’ কিন্তু ‘ইমোশনাল’!

মঙ্গলবার রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামে ম্যাচ শেষের পর যেন সেই ‘ডিমোশনাল’ মুহূর্ত মিক্সড জোনে। ড়্রেসিংরুম ছেড়ে বেরোনোর সময় কেরলের মেহতাবের সঙ্গে দেখা কলকাতার ইয়ান হিউমের। একদফা হাসি-ঠাট্টার পরে মিক্সড জোনে এসে হিউম পড়ে গেলেন বিপক্ষ টিমের জনসংযোগ কর্ত্রীর মুখোমুখি। তাঁকে একটা ছোট্ট চুম্বন সেরেই দৌড় টিমবাসের দিকে।

Advertisement

কিছুক্ষণের মধ্যে দেখা মিলল এ দিনের এটিকে গোলদাতা পিয়ারসনের। হিউমের মতো তিনিও প্রাক্তন কেরল ব্লাস্টার্স ফুটবলার। হোটেলে ফেরার আগে হিউমের প্রক্সিটা যেন দিয়ে গেলেন তিনি। ‘‘আমার আর হিউমের কাছে কেরল হল পুরনো টিম। কলকাতায় চলে এলেও ইমোশানটা একই আছে। তবে মাঠে পুরো ডিটাচড্। তাই তো হিউমের পা থেকে আজ কলকাতার গোলের আক্রমণটা শুরু হয়ে আমায় এসে শেষ হল।’’

নিট ফল?

প্রথম দু’বছর হাবাস জমানায় যা হয়েছিল, আইএসএল থ্রি-তে মলিনা জমানাতেও সেই ট্র্যাডিশনই বজায় রাখল আটলেটিকো দে কলকাতা। ইন্ডিয়ান সুপার লিগের তিন বছরে তিনবারই সেমিফাইনালে উঠল এটিকে। তা-ও আবার লিগের শেষ ম্যাচে পুরনো কোচ হাবাসের পুণের মুখোমুখি হওয়ার আগেই। এ দিন ম্যাচ শেষে পর আবেগে যেন ভাসছিলেন কলকাতার টিম মালিক সঞ্জীব গোয়েন্কা। বললেন, ‘‘কলকাতার মানুষের আশীর্বাদ ছিল বলেই তিন বার সেমিফাইনালে উঠলাম। এ বার ফাইনালে ওঠার লড়াই শুরু হবে আমাদের।’’ আগের দু’বারের কোচ হাবাসের কথা মনে পড়ছে কি? হাসতে হাসতে এটিকে মালিকের জবাব, ‘‘আমি মলিনা নিয়ে সুখে আছি।’’

এ দিনের পর কলকাতা ১৩ ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবলে তিন নম্বরেই শুধু থাকল না, একইসঙ্গে ঢুকে পড়ল সেমিফাইনালের কক্ষে। দ্বিতীয়ার্ধেই তাঁদের খেলা আরও ধারালো হয় বলে আগের দিন কেরল কোচ স্টিভ কপেল মজা করে বলেছিলেন, দ্বিতীয়ার্ধের খেলাটাই রবীন্দ্র সরোবরে প্রথমার্ধে খেলতে চান তাঁরা। এ দিন সত্যিই সেটা ঘটল।

কিক-অফের আগে এ দিন বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ব্রাজিলীয় ফুটবল ক্লাবের খেলোয়াড়দের স্মরণে মাঠে যখন দু’দল এক মিনিট নীরবতা পালন করছে, তখন মুম্বই থেকে এল ব্যারেটোর ফোন। আইএসএলে নীরবতা পালনের উদ্যোগকে প্রশংসা করে প্রাক্তন ব্রাজিলীয় তারকা ম্যাচের ভবিষ্যদ্বাণীও করলেন। ‘‘কলকাতা ডিফেন্স যেন আজ বিনীতকে ফাঁকা না ছাড়ে। ও কিন্তু স্কোরিং জোনে সুযোগ পেলেই গোল করে।’’

ব্যারেটোর ফোনের আট মিনিট পরেই বিনীতের চমৎকার হেডে কেরলের এগিয়ে যাওয়া। আটলেটিকো বক্সে মেহতাবের ভাসানো বল যখন দেবজিৎ গ্রিপ করতে গিয়ে হাতছাড়া করলেন, শিকারী বাঘের মতো ওৎ পেতেছিলেন বিনীত। বল মাথায় আসতেই সঠিক প্লেসিং করে বুক চাপড়াতে চাপড়াতে ছুট লাগালেন এটিকে বেঞ্চের দিকে! কারণটা জানিয়ে গেলেন হোটেলে ফেরার আগে। ‘‘ওই দিকেই আমাদের সমর্থকেরা চুপ করে বসেছিলেন। তাই টিম এমব্লেম দেখিয়ে বলছিলাম, আমরা আছি। তোমরা সেলিব্রেট করো।’’

যদিও দশ মিনিটের বেশি ছিল না বিনীতের কেরল। তার মধ্যেই পিছিয়ে থাকা কলকাতাকে এ দিন যাঁরা ম্যাচে ফেরালেন তাঁরা আবার দু’জনই কেরলের প্রাক্তনী। প্রথম জন ইয়ান হিউম— হাফ টার্নে যাঁর পাস পস্টিগার পা ঘুরে কেরল বক্সে অরক্ষিত জায়গায় চলে গিয়েছিল। দ্বিতীয় জন পিয়ারসন— সেই বল ধরে চমৎকার প্লেসিংয়ে ১-১ করলেন। তিন টাচে তিন বার শেষ চারের টিকিট কনফার্মড এটিকের। যে গোল নিয়ে ম্যাচ শেষে পিয়ারসনের উচ্ছ্বসিত প্রতিক্রিয়া, ‘‘মিলিয়ন ডলারের ফাইনাল পাসটা বাড়িয়েছিল হেল্ডার।’’ যে কথা শুনে এটিকের মার্কি হেল্ডার পস্টিগা আবার বলছেন, ‘‘গোলটা করে পিয়ারসন টেনশনটা কমিয়ে দিল।’’

ম্যাচের আগে কেরলের বঙ্গসন্তান গোলকিপার সন্দীপ নন্দী বলছিলেন, তাঁদের রক্ষণই দলের ইউএসপি। কিন্তু এ দিন পিয়ারসন যখন গোল করছেন, তখন এ দিন রিজার্ভে থাকা সন্দীপকে বেঞ্চে বসে দেখতে হল, এটিকে ফরোয়ার্ডকে আটকাতে ‘কেরল ইউএসপি’ নিরুদ্দেশ! বিপক্ষ ডিফেন্ডারদের কেউ পিয়ারসনের ধারেকাছে নেই।

মলিনা আবার প্রথমার্ধের মাঝামাঝি বোধহয় বুঝে গিয়েছিলেন গোয়া ম্যাচে ফর্মের তুঙ্গে থাকলেও রবীন্দ্র সরোবরে তাঁর লেফট ব্যাক রবার্ট পুরনো ‘ফর্মে’ ফিরে গিয়েছেন। দ্বিতীয়ার্ধে তাই রক্ষণকে পোক্ত করতে রবার্টের জায়গায় নামিয়ে দিলেন আই লিগে বেঙ্গালুরুতে বিনীতেরই সতীর্থ কিগান পেরেরাকে। আর সেই অস্ত্রে বিনীতকে বোতলবন্দি করে ম্যাচে কলকাতার জাঁকিয়ে বসা।

এর পরেও অবশ্য সেমিফাইনালে দু’টো ব্যাপারে নজর দিতেই হবে কলকাতা কোচ মলিনাকে। দ্যুতি প্রথম এগারোর বাইরে চলে যাওয়ার পরে ডান দিকে প্রীতম কোটালের ওভারল্যাপ ছাড়া এটিকের আক্রমণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। দ্যুতিকে দরকার রাইট উইংয়ে। আর অর্ণবকে কভারিংয়ের সময় আরও অনেক বেশি ক্ষিপ্র হতে হবে। না হলে হাবাসের দ্বিতীয় দফার মতো সেমিফাইনালে এটিকে-রথ থেমে না যায়!

আটলেটিকো দে কলকাতা: দেবজিৎ, প্রীতম, অর্ণব, তিরি, রবার্ট (কিগান), বোরহা, পিয়ারসন, লারা (দ্যুতি), পস্টিগা, অবিনাশ, হিউম (বেলেনকোসো)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন