শেষ চারের অঙ্ক

দুটো ম্যাচকেই নক আউট ধরে খেলুক কলকাতা

হাবাসের টিমের বিরুদ্ধে কলকাতা জিততে পারেনি। তাতে মলিনার কোনও ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করি না। বরং বলব লাভই হয়েছে।

Advertisement

সঞ্জয় সেন

শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:১৮
Share:

হাবাসের টিমের বিরুদ্ধে কলকাতা জিততে পারেনি। তাতে মলিনার কোনও ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করি না। বরং বলব লাভই হয়েছে।

Advertisement

পুণের বিরুদ্ধে শুক্রবার কলকাতার স্প্যানিশ কোচ যে স্ট্র্যাটেজি নিয়েছিলেন তাতে আমার পূর্ণ সমর্থন আছে। রিজার্ভ বেঞ্চকে দেখে নেওয়ার এটাই তো সেরা জায়গা ছিল। সেই কাজটা সঠিকভাবেই করেছেন মলিনা। গুরুত্বহীন ম্যাচে শুধু ইগো রক্ষার জন্য হিউম-দ্যুতিদের মতো প্লেয়ার নামিয়ে ঝুঁকি নেওয়ার কোনও মানে হয় না। যখন চার-পাঁচ জন ফুটবলারের কার্ড সমস্যা আছে। আমি কোচ থাকলেও এটাই স্ট্র্যাটেজি হিসাবে নিতাম। মলিনা গ্রুপ লিগের শেষ ম্যাচে যা চেয়েছিলেন সেটা কিন্তু পেয়েছেন। কলকাতার রিজার্ভ বেঞ্চ যে যথেষ্ট শক্তিশালী সেটা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে পুণের বিরুদ্ধে। সরাসরিই বলেছি, হাবাস-হাবাস বলে এত বাজার গরম করার কোনও মানে খুঁজে পাইনি ম্যাচটা দেখে। পুণে টিমটা এত খারাপ খেলল! কলকাতার বেলেনকোসো যদি সহজ সুযোগগুলো এ ভাবে নষ্ট না করত তা হলে দু’-তিন গোলে জিততেই পারত এটিকে। সোজা কথায়, রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামে যে সাত ম্যাচ খেলেছে মলিনার টিম, তার মধ্যে সবচেয়ে আক্রমণাত্মক মনোভাব দেখলাম এই ম্যাচে। সেমিফাইনালের আগে যা কলকাতা কোচকে নিশ্চয়ই সাহস জোগাবে।

দিল্লি বা মুম্বই, সেমিফাইনালে যে দলই এটিকে-র সামনে পড়ুক মলিনাকে কিন্তু অন্য রকম অঙ্ক করে খেলতে হবে। ডাবল লেগ সেমিফাইনাল হলেও এটাকে ১৮০ মিনিটের নক আউট হিসাবে দেখাটাই সঠিক ট্যাকটিক্স হবে। মলিনা নিজে তাঁর মতো করে স্ট্র্যাটেজি ঠিক করবেন নিশ্চয়ই। তবে আমি কোচ হলে দু’ভাবে এগোতে চাইতাম। হোম এবং অ্যাওয়েকে দু’ভাগে ভাগ করতাম। আগে হোম খেলতে হলে জিততে চাইতাম বিপক্ষের উপর চাপ বাড়াতে। আর আগে অ্যাওয়ে ম্যাচ হলে কোনও মতেই হারতে চাইতাম না। সেক্ষেত্রে ঘরের মাঠের সুবিধাটা নিতাম। কারণ এটিকে ঘরের মাঠে যখন খেলবে তখন যে দর্শক-সমর্থন পাবে সেটা দিল্লি বা মুম্বই তাদের নিজেদের মাঠে কখনও পাবে না। কলকাতার দর্শকদের নিজের টিমের প্রতি প্যাশনটাই আলাদা। তা সে এটিকে, ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান যেই খেলুক। অনেকেই আমার কাছে জানতে চাইছেন, আইএসএল থ্রির চ্যাম্পিয়ন কে হবে? আমার র‌্যাঙ্কিং এখন পর্যন্ত দিল্লি, মুম্বই এবং কলকাতা। কেরল বা নর্থইস্ট যেই শেষ চারে যাক, তাদের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল যেহেতু নক-আউট, তাই যে কোনও অঘটন ঘটতেই পারে। টাইব্রেকার হলে তো কিছুই বলা যায় না। লিগ পর্যায়ে ড্র-এর জন্য খেলা যায়, এখানে তো সে সুযোগ নেই।

Advertisement

এ বার অন্য প্রসঙ্গে আসি। গ্রুপ লিগ এখন শেষ পর্যায়ে। শুরুর তিন-চারটে ম্যাচ দেখার পর থেকেই বলে আসছি এ বার বিদেশিদের চেয়ে স্বদেশিরাই আমাকে বেশি খুশি করছে। মালুদা ছাড়া কোনও ক্লাবের মার্কি আমার চোখ টানেনি এখনও। একটা ম্যাচ ছাড়া ফোরলান কিছু করতে পারেনি। পস্টিগারও বা গোল কোথায়? ক’টা ম্যাচ জিতিয়েছে ও। প্রচার বা বিপণনের জন্য প্রথম আইএসএলে মার্কি ফুটবলারের নিয়ম চালু করেছিলেন সংগঠকরা। মার্কিদের যা হাল তাতে এই নিয়মটা তুলে দেওয়া উচিত। নাম কিনতে গিয়ে অযথা টাকা নষ্ট!

মার্কি বা বিদেশিদের বেশির ভাগের পারফরম্যান্স ভাল লাগেনি এ বার। আই লিগে খেলা বিদেশিদের থেকে বেলেনকোসোরা কিন্তু ভাল নয়। বরং বেশ কিছু স্বদেশি ফুটবলার বেশি চোখে পড়েছে। দেবজিৎ, অবিনাশ, প্রবীর, প্রীতম (সবাই এটিকে), মিলন সিংহ, কেন লুইস, সৌভিক চক্রবর্তী, আনাস (দিল্লি), শেহনাজ (মুম্বই), রাওলিন বর্জেস, সুব্রত পাল, সত্যসেন সিংহ (নর্থইস্ট), বিনীত (কেরল) এ বার নিজেদের ছাপিয়ে গিয়েছে। সনি নর্ডি বা কাতসুমিরা যা পারেনি সেটা করেছে কেন লুইস। চারটে গোল। বিদেশিদের মধ্যে দিল্লির মার্সেলিনো বা কলকাতার দ্যুতি, জাভি লারাদের মতো কয়েকজন ভাল খেলছে।

গ্রুপ লিগ শেষ হলেও টুর্নামেন্টের শেষ পর্বের খেলা এখনও বাকি। সেই খেলাগুলো আরও ধুন্ধুমার হবে বলেই মনে হয়। আমার ধারণা সেখানে আরও বেশি করে দেখা যাবে ভারতীয়দের দাপট। যেটা আমি দেখতে চাইছিও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন