আটলেটিকো ২ (দ্যুতি, হিউম-পেনাল্টি) : চেন্নাইয়ান ২ (রানে, মুলডার)

মশলাহীন আইএসএল ম্যাচে পাশ নম্বর পেয়ে গেলেন মলিনা

পুণেতে বসে আন্তোনিও হাবাস কী ভাবছিলেন কে জানে। তবে পেনাল্টিটা পাওয়ার পর জোসে মলিনাকে দেখে মনে হচ্ছিল, মাঠের সুখীতম মানুষ। এমনভাবে আটলেটিকো দে কলকাতার কোচ ওই সময় লাফিয়ে উঠলেন, আকাশের দিকে দু’হাত মুঠি করে তুলে, মনে হল তাঁর টিম জিতেই গিয়েছে।

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৬ ০৪:২৩
Share:

গোল করেও জেতাতে পারলেন না টিমকে। রবিবার রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামে হিউম। ছবি: উৎপল সরকার

পুণেতে বসে আন্তোনিও হাবাস কী ভাবছিলেন কে জানে।

Advertisement

তবে পেনাল্টিটা পাওয়ার পর জোসে মলিনাকে দেখে মনে হচ্ছিল, মাঠের সুখীতম মানুষ। এমনভাবে আটলেটিকো দে কলকাতার কোচ ওই সময় লাফিয়ে উঠলেন, আকাশের দিকে দু’হাত মুঠি করে তুলে, মনে হল তাঁর টিম জিতেই গিয়েছে।

বোধনের ম্যাচে পস্টিগা-হিউমরা জেতেননি শেষ পর্যন্ত। টিম না জিতলেও কলকাতার জার্সিতে কোচিং জীবনের প্রথম ম্যাচে কিন্তু কার্যত জিতলেন মলিনা। দুটো কারণে— প্রথমত, পিছিয়ে পড়েও গত বারের চ্যাম্পিয়ন টিমকে রুখে দিলেন তিনি। দ্বিতীয়ত হাবাস নামক ছায়ার সঙ্গে যুদ্ধের শুরুতে পাশ মার্ক পেয়ে গেলেন। মাথা নিচু করেই ড্রেসিং রুমে ফিরেছেন। ম্যাচের পর বলেও গেলেন, ‘‘দুটো লাকি গোল পেয়ে গেল ওরা। না হলে আমরাই জিততাম।’’

Advertisement

ম্যাচের নব্বই মিনিটের চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে বসলে কিন্তু মনে হচ্ছে, মলিনা বা মাতেরাজ্জি দু’জনের টিমই জিততে পারত। ভিভিআইপি বক্সের আবহও তো সে কথাই বলে গেল।

সমীঘ দ্যুতির দুর্দান্ত প্লেসিং-এর গোলটার পর দেখা গেল চট্টোপাধ্যায় এবং গঙ্গোপাধ্যায়— দুজনেই উচ্ছ্বসিত হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে হাততালি দিলেন। এক জন টলিউডের প্রসেনজিৎ আর অন্য জন ক্রিকেটার সৌরভ।

একটু দূরে বসে থাকা অভিষেক বচ্চনের মুখটা তখন চুন।

পরিবেশটা বদলে গেল পরের এগারো মিনিটেই। চেন্নাইয়ান পরপর দু’গোল করে ফেলায়। টিমের অন্য সমর্থকদের সঙ্গে তখন কোমর দুলিয়ে নাচতে লাগলেন অমিতাভ-পুত্র। সঙ্গে চিৎকার, ‘কাম অন কাম অন বয়েস।’

আবার পঁচাশি মিনিটে ফের ফিরে এল চট্টোপাধ্যায়-গঙ্গোপাধ্যায়ের যুগল উচ্ছ্বাস। পেনাল্টি থেকে হিউমের গোলটার সময়।

১-০, ১-২, ২-২। বিরতির পর চার-চারটে গোল। দু’দলের আক্রমণাত্মক আগুনে মনোভাব, জেতার জন্য মরিয়া চেষ্টা—ম্যাচটাকে রঙিন করে দিয়ে গেল দুর্গাপুজোর শহর জুড়ে জ্বলে ওঠা আলোর সঙ্গে সঙ্গত করে। মাতেরাজ্জি পেনাল্টি নিয়ে তাঁর বিরক্তির কথা হালকা করে তুলে দিয়ে গেলেন। মলিনা জানিয়ে গেলেন, ‘‘সব বিভাগে। আমাদের আরও উন্নতি করতে হবে।’’ যে রকম আই লিগেও ম্যাচ শেষে বলে যান কোচেরা।

কিন্তু এই মশলা টুর্নামেন্ট যে ভাবনার উপর দাঁড়িয়ে শুরু করেছিলেন নীতা অম্বানীরা, সেটার যে দফারফা হয়ে গেল রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামে এসে। পরিবেশ আদালতের গেরোয় পড়ে আই লিগের রেপ্লিকা মনে হল রবিবারের ম্যাচকে। টুর্নামেন্ট শুরুর সময় মাঠে খেলা দেখতে আসা দর্শকদের স্বাচ্ছন্দ ছিল আইএসএলের প্রধান্যের প্রথম তালিকায়। পরেরটা ছিল, ফুটবলের সঙ্গে গানে, নাচে, আতসবাজির রোশনাইয়ে দর্শকদের মনোরঞ্জন। যুবভারতীতে যা এত দিন থাকত এটিকের ম্যাচে। কিন্তু এর কোনওটারই যে এ বার দেখা পাওয়া গেল না। টুর্নামেন্টের থিম সং ‘বাজেগি সিটি’ এমন ভাবে বাজানো হল যে মনে হচ্ছিল শ্রাদ্ধ বাড়িতে রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজছে। শুধু কি তাই ‘‘জিতবে কে? এ...টি...কে,’’ সেই গলা ফাটানো ডিজের চাকরিও চলে গিয়েছে এ বার। শব্দ দূষণের নিয়মের জাতাকলে পরে।

বাথরুম খুঁজতে গেলে দর্শকদের যেতে হচ্ছে সোয়া কিলোমিটার। পুলিশ গাড়ি আটকাচ্ছে আধ কিলোমিটার দূরে। যে রাস্তা দিয়ে দর্শকদের ঢোকার কথা সেখানকার রাস্তা আধো-অন্ধকার। কাদায় পড়ে যাচ্ছেন মানুষ-জন। রাতের ম্যাচ। যে কোনও বড় ঘটনা ঘটতেই পারে। এটিকের খেলা দেখতে আসেন বহু মহিলা দর্শক। তাদের জন্য স্টেডিয়ামের বাইরেটা কতটা নিরাপদ তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। হেরিটেজ সরোবর হিসাবে ঘোষিত এই অঞ্চল। মাঠের আলো বাইরে যাচ্ছে কী না তার জন্য মেশিন বসানো আছে। লঙ্ঘন করলেই ম্যাচ বন্ধ হয়ে যাবে।

মাঠের ভিতরের ছবিটা ভাল-মন্দয় মেশানো। কলকাতার কর্তারা প্রচুর খরচ করে মাঠ তৈরি করেছেন। মাঠটা ভারি হলেও বেশ ভাল। সবুজে-সবুজ। ভাল খেলার আদর্শ। গ্যালারি ঝাঁ চকচকে। কিন্তু বাকিটা? মাঠের বাইরের যে অঞ্চলটা এক সময় অ্যাথলেটিক্সের ট্র্যাক ছিল সেখানে মাটি আর বালি ফেলা হয়েছে। বৃষ্টির জল জমে গিয়েছে সেখানে। বল পড়লে ভাসছে। সবুজ-কার্পেটের উপর জল-কাদা একাকার। কলকাতার কর্তারা নিজেরাই এখন ভাবছেন কেন যে এই মাঠটা বাছতে গেলেন? আসলে তারা ভাবেননি পরিবেশবিদদের কাছ থেকে এ রকম গুতো আসবে। তার উপর পুলিশের বাড়াবাড়ি তো আছেই। হাজার সাতেক দর্শক এসেছিলেন খেলা দেখতে। ফলে মাঠ পুরো ভরেনি। পুলিশের ভুল-ভাল নির্দেশে তাদের অনেককে পুরো স্টেডিয়াম চক্কর দিতে হয়েছে। এটিকের ম্যাচ দেখতে আসা দর্শকদের কিন্তু ইস্ট-মোহনের সমর্থকদের মতো তীব্র আবেগ নেই। যারা শত অসুবিধা সত্ত্বেও মাঠে আসবেন। আইএসএল সমর্থকরা আসেন মূলত ফুটবল প্যাকেজের আনন্দ নিতে। সেটা তারা কিন্তু পাচ্ছেন না এ বার। বাধ্য-বাধকতার মধ্যেও দর্শকদের জন্য কিন্তু এটিকে কর্তাদের অনেক কিছুই করার করার আছে। বাথরুম তৈরি, কোন গেট দিয়ে কে ঢুকবে তার দিক নির্দেশ তার উপর তো নিষেধাজ্ঞা নেই।

শেষ পর্যন্ত কলকাতার কর্তারা কী করবেন তা তারাই বলতে পারবেন। কিন্তু মলিনার রক্ষণ আর মাঝমাঠ নিয়ে শঙ্কা থেকে যাচ্ছেই। অর্ণব আর তিরি— দুই স্টপারের মধ্যে এখনও সমঝোতা গড়ে ওঠেনি। মাঝমাঠে বোরহা হাঁটছেন। দ্যুতি ছাড়া নজরে পড়ার মতো কেউ নেই সেখানে। সামনে পস্টিগা মোটামুটি খেললেও হিউম গত বারের ফর্মে নেই। বয়সের ছাপ তাঁর খেলায় প্রকট। পাসিং ফুটবল খেলার চেষ্টা করলেও সমঝোতার অভাবে তা পঞ্চাশ শতাংশ কার্যকর হচ্ছে।

আইএসএলের প্রত্যাশিত প্যাকেজ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই রবীন্দ্র সরোবরে। নাচ-গান না থাকুক, মলিনার টিমের খেলাটা যদি চোখের আরাম দেয় তা হলেও দর্শকরা তাতে বুঁদ হয়ে থাকতে পারেন।

আটলেটিকো: দেবজিৎ, প্রীতম, অর্ণব, তিরি, রবার্ট (প্রবীর), বোরহা, দ্যুতি, বিক্রমজিৎ, জাভিলারা (বেলনকোসো), পস্টিগা (ডিকা), হিউম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন