অনুশীলনে হিউমদের সঙ্গে নাতো। (ডান দিকে) দুই মেরুতে মলিনা ও পস্টিগা।-উৎপল সরকার
চোখ টিপে মৃদু হাসলেন। তার পর ভরা মিডিয়া সেন্টারের চার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে বিড়বিড় করে উঠলেন, ‘‘তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে পস্টিগা। তবে এখনও যা অবস্থা, দিল্লি ম্যাচ তো বটেই, পরের মুম্বই, নর্থ-ইস্ট ম্যাচেও বোধহয় ওকে পাব না!’’
শুক্রবার প্র্যাকটিসের পরে যখন কথাগুলো বলছিলেন এটিকে কোচ জোসে মলিনা, অসম্ভব অসহায় দেখাচ্ছিল স্পেনের মানুষটিকে। এক ঝলক দেখলে মনে হবে, এক জন কোচই সঠিক ভাবে নিশ্চিত নন তাঁর দলের মার্কি ফুটবলার কবে মাঠে ফিরবেন! আসলে চব্বিশ ঘণ্টা আগে প্রেসের সামনে প্রকাশ পাওয়া পস্টিগার মনোভাবের সঙ্গে তাঁর কোচের এ দিনের করা মন্তব্যের যে কোনও মিল নেই! মলিনার মার্কি বলছেন, ‘‘তাড়াহুড়ো করতে চাই না। পুরো সুস্থ হয়ে মাঠে ফিরতে চাই।’’ সেখানে স্বয়ং মলিনার মুখে আবার উল্টো সুর। অভিব্যক্তিও আলাদা।
এটিকে কোচকে অবশ্য কাঠগড়ায় দাঁড় করালে অন্যায় হতে পারে। একে টিমে গোলের খরা (চার ম্যাচে মাত্র পাঁচ গোল), তার উপর সবচেয়ে দামি ফুটবলার অনির্দিষ্টকালের জন্য অনিশ্চিত। তাই পস্টিগার অনুপস্থিতিতে এটিকে অন্দমহলে যে তোলপাড় চলছে, সেটা আন্দাজ করতে বোধহয় ব্যোমকেশ বক্সির মাথার দরকার পড়ে না। ম্যাচে হিউম, জাভি লারা কিংবা দ্যুতি কোনও রকমে এখনও সামাল দিয়ে চললেও, গোটা লিগ টানার মতো ক্ষমতা কি আছে? আগের গোয়া ম্যাচের মতোই আবার যে কোনও দিন আটকে যেতে পারে কলকাতা।
সবচেয়ে বোধহয় ভয়ের, এটিকের এই মানসিক দুর্বলতা সম্পর্কে খুব ভাল হোমওয়ার্ক করে এসেছেন দিল্লি ডায়নামোস কোচ জামব্রোতা। এখনও পর্যন্ত আইএসএলে এটিকের মতোই অপরাজিত ইতালীয় কোচের দল। তাই আজ শনিবার রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়াম থেকে পুরো পয়েন্ট তুলতে মরিয়া দিল্লি কোচ চব্বিশ ঘণ্টা আগে সাফ বলে দিলেন, ‘‘কলকাতা ভাল টিম। কিন্তু আমরা এখান থেকেই নতুন করে টুর্নামেন্ট শুরু করতে চাইছি।’’
মাতেরাজ্জি, দেল পিয়েরো, গার্সিয়া— আইএসএল থ্রি-তে আসার আগে তিন বন্ধুর সঙ্গে নাকি লম্বা আলোচনা করেছেন বিশ্বকাপজয়ী জামব্রোতা। এটিকে নিয়ে বিশেষ ভাবে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। দিল্লি টিম সূত্রেই খবর, শুক্রবারই কলকাতার চারটে ম্যাচের ভিডিও একসঙ্গে দেখানো হয়েছে ফুটবলারদের। নিজে জামব্রোতা নামী ডিফেন্ডার ছিলেন বলে এটিকের ডিফেন্সিভ থার্ডের দুর্বলতাগুলোকে আলাদা করে মার্ক করে রেখেছেন। চার ম্যাচ পরেও প্রীতম-অর্ণবদের মধ্যে যে বোঝাপড়া তৈরি হয়নি, সেটা নিশ্চয়ই নোটবুকে তুলে নিয়েছেন তিনি। জামব্রোতা বললেন, ‘‘গোলের জন্য শুরু থেকেই ঝাঁপাতে হবে আমাদের। অ্যাওয়ে ম্যাচে প্রথমে গোল পেয়ে গেলে ফুটবলারদের আত্মবিশ্বাস এক ধাক্কায় অনেকটা বেড়ে যাবে।’’
প্রাক্তন ডিফেন্ডারের ছক তৈরি। প্রাক্তন গোলকিপারও কি গোল খাওয়া বাঁচানোর কোনও অ্যান্টিডোট খুঁজে রেখেছেন? শনিবারের ম্যাচে জামব্রোতা বনাম মলিনা মানেই তো ডিফেন্ডার-গোলকিপার যুদ্ধ। যেন কাতানেচিও বনাম তিকিতাকা। যদিও মলিনার প্র্যাকটিসে নতুনত্ব কিছু পাওয়া যায়নি এ দিন। সেই পাস পাস পাস আর সেট পিস। খুব মনোযোগ দিয়ে দেখলে যেন সঞ্জয় সেনের প্র্যাকটিসের সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যায়! মলিনার কথাতেও যেন বাগান কোচের ছাপ, ‘‘এই ম্যাচটা আমাদের জিততেই হবে। না হলে চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইয়ে অনেকটা পিছিয়ে পড়ব।’’
তবে দিনের সবচেয়ে চমকপ্রদ কথাটা বোধহয় জামব্রোতা-ই বলে গেলেন! ‘‘আইএসএল যে ভাবে উন্নতি করছে, তাতে খুব তাড়াতাড়ি লা লিগা, সিরি ‘এ’-কে ধরে ফেলবে।’’ এখানেই থামছেন না তিনি। আরও এক ধাপ এগিয়ে জামব্রোতার মন্তব্য, ‘‘আইএসএলের জনপ্রিয়তা আমাকে ভারতে টেনে নিয়ে এসেছে। আমি আইএসএলের জন্যই অন্য দেশের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছি।’’ আইএসএল ভবিষ্যৎ কী, সেটা তো সময়ের ডায়রিতে চাপা। তবে জামব্রোতার সার্টিফিকেট নীতা অম্বানীকেও নিশ্চয়ই খুশি করবে।
আবার অতি আবেগ কেন? সাধারণ আবেগেরও দেখা নেই এ দিন মলিনার হাবেভাবে! কলকাতার ‘সাদা শার্ট’-এরও ছায়া নেই নতুন কোচের মধ্যে। ভরসা সেই হিউম-দ্যুতি জুটি। কিন্তু দ্যুতির একটা গোল থাকলেও এ মরসুমে হিউমকে এখনও পর্যন্ত ছন্দে পাওয়া যায়নি। জাভি লারা তো আর রোজ দিন রক্ষা করবেন না টিমকে! মলিনাকে নতুন বিকল্প খুঁজতে হবে। এবং এই ম্যাচেই অনেকগুলো পরিবর্তন হতে পারে টিমে। সবচেয়ে বড় স্বস্তি, নাতো ফিরছেন। যার মানে এটিকে ডিফেন্স আরও শক্তিশালী।
কে জানে, বিকল্পের সন্ধান দিল্লি ম্যাচেই হয়তো পেয়ে গেলেন এটিকে কোচ!
শনিবারে
আইএসএল— আটলেটিকো দে কলকাতা: দিল্লি ডায়নামোস (রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়াম, ৭-০০)