লক্ষ্য: দলকে আবার ট্রফি এনে দেওয়ার জন্য লড়াই শুরু সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বেন কাটিংয়ের। ফাইল চিত্র
গত বছরের ফাইনালে ১৫ বলে অপরাজিত ৩৯। তার পর বল হাতে ক্রিস গেইল, কে এল রাহুলের উইকেট। বিরাট কোহালিদের স্বপ্ন একাই শেষ করে দিয়ে সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার এই অলরাউন্ডার। দশম আইপিএল শুরুর আগে ফাইনালের নায়ক সেই বেন কাটিং স্লেজিং থেকে কোহালি— সব কিছু নিয়ে হায়দরাবাদ থেকে ফোনে বললেন আনন্দবাজারের-কে।
প্রশ্ন: আগের বারের ফাইনালটা তো আপনি কোনও দিন ভুলতে পারবেন না। একার হাতে ট্রফিটা বিরাট কোহালিদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিলেন?
বেন কাটিং: না, না শুধু আমার কথা বলছেন কেন? আমাদের টিমে সবাই দারুণ খেলেছিল। ওরা ও রকম না খেললে আমরা ফাইনালে উঠতে পারতাম না। বিশেষ করে ব্যাট হাতে ডেভিড ওয়ার্নার আর বোলিংয়ে ভুবনেশ্বর কুমার, মুস্তাফিজুর।
প্র: ফাইনালে আপনি দু’টো দুর্দান্ত কাণ্ড করেছিলেন। শেন ওয়াটসনের ইনিংসের শেষ ওভারে তিনটে ছয়-সহ ২৪ রান তুলেছিলেন। আর তার পর ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা ক্রিস গেইলকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। কোন ঘটনাটা আপনার কাছে বেশি স্মরণীয়?
কাটিং: কোনও সন্দেহ নেই, ক্রিস গেইল ওই সময় খুব ভাল খেলছিল। ম্যাচটাকে প্রায় নিয়ে চলে যাচ্ছিল আমাদের হাত থেকে। ওই সময় ওকে ফিরিয়ে দিতে পারাটা দারুণ ব্যাপর ছিল। তবে আমার সবচেয়ে ভাল লেগেছিল ওয়াটসনের ওই ওভারটায় অতগুলো রান তোলা। স্কোরবোর্ডে দু’শোর ওপর রান থাকলে টিমের মনোবলটা বেড়ে যায়। সেটাই হয়েছিল আমাদের।
প্র: ফাইনালটা দারুণ উত্তেজক ছিল। আপনারা বড় রান তুলে দেওয়ার পরে বিরাট-গেইল মিলে ম্যাচটা প্রায় নিয়ে গিয়েছিলেন আপনাদের হাত থেকে। আপনার কাছে টার্নিং পয়েন্ট কী ছিল ফাইনালের?
কাটিং: আমরা বড় রান তোলার পরে গেইল আর বিরাট দারুণ শুরু করেছিল। একটা সময় তো স্কোরবোর্ডে ১১ ওভারের মধ্যে বিনা উইকেটে ১১৪ রান উঠে যায়। ওই সময় আমরা চাপে পড়ে গিয়েছিলাম। আমার ভাগ্য ভাল, ওপেনিং জুটিটা ভাঙতে পেরেছিলাম। মিডল ওভারে দু’টো উইকেটও তুলে নিয়েছিলাম। আমাদের বোলাররাও ওই সময় চাপটা ধরে রাখতে পেরেছিল। আমার কাছে ওই মিডল ওভারে আরসিবি-র পরপর কয়েকটা উইকেট তুলে নেওয়াটাই ফাইনালের টার্নিং পয়েন্ট।
প্র: আইপিএল ফাইনালে ম্যান অব দ্য ম্যাচ। সবচেয়ে গ্ল্যামারাস টুর্নামেন্ট জিতিয়ে দেওয়ার পরে আপনার জীবনে কী পরিবর্তন এসেছে? নতুন তারকাপুজো কি উপভোগ করছেন?
কাটিং: না, না আমার জীবনে কোনও পরিবর্তন আসেনি। ফাইনালের পরের দিনই আমরা অস্ট্রেলিয়া উড়ে গেলাম। সেখানে প্রি-সিজন ট্রেনিং শুরু হয়ে গেল। তার পরে কুইন্সল্যান্ড আর ব্রিসবেনের হয়ে খেলতে নামা। সে ভাবে কোনও পরিবর্তন আসেনি।
প্র: এই আইপিএলে নিজেকে কোন জায়গায় দেখছেন? নিজের এবং টিমের লক্ষ্য কী?
কাটিং: এ বার আমাদের টিমটা বেশ শক্তিশালী। আমি তো বলব আগের বারের চেয়েও শক্তিশালী। এ বার বেন লাহলিন, ক্রিস জর্ডানরা দলে আছে। ক্রিস কী রকম বোলার আমরা সবাই জানি। তা ছাড়া ও ব্যাটটাও ভাল করতে পারে। লোয়ার অর্ডারে দ্রুত রান তুলতে পারে।
প্র: আপনাদের প্রথম ম্যাচটাই তো আগের বারের ফাইনালের রিপ্লে। বিরাট কোহালির আরসিবি-র সঙ্গে। যদিও বিরাট খেলবেন না, কিন্তু কতটা টেনশনের ম্যাচ হবে বলে মনে হয়?
কাটিং: দারুণ একটা ম্যাচ হতে যাচ্ছে। আগের বারের ফাইনালটার মতো জমবে নিশ্চয়ই। আর ভুলে যাবেন না এ বার ম্যাচ আমাদের ঘরের মাঠে। তা ছাড়া ওদের বিরাট কোহালিও তো শুনছি সপ্তাহ দু’য়েকের জন্য ছিটকে গিয়েছে। ওদের জন্য এটা একটা বিরাট ধাক্কা। আশা করি টুর্নামেন্টে আমাদের শুরুটা ভালই হবে।
প্র: ভারত-অস্ট্রেলিয়া সিরিজে যে ভাবে স্লেজিং হল, মাঠের বাইরে যে সব ঘটনা ঘটল, তার পর কি বলবেন এ বারের আইপিএলে আরও বেশি আগ্রাসী ক্রিকেট দেখা যাবে? বিশেষ করে যখন ভারত-অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটাররা মুখোমুখি হবেন?
কাটিং: ভারত-অস্ট্রেলিয়ার ব্যাপারটা কী জানেন তো, আমরা দু’দেশের ক্রিকেটাররা চারিত্রিক দিক দিয়ে অনেকটা একই রকম। মাঠ এবং মাঠের বাইরে। দু’দেশের ক্রিকেটারদের মানসিকতাও বেশ আগ্রাসী। তাই দু’দল মুখোমুখি হলে এতটা উত্তেজনা হয়, স্লেজিং হয়। আমি তো বলব, খেলার জন্য এই উত্তেজনাটা খারাপ কী!
প্র: বিরাট কোহালিকে নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতাটা কী রকম?
কাটিং: আমার সঙ্গে বিরাটের সম্পর্কটা কিন্তু খুব ভাল। খুব সম্ভবত অস্ট্রেলিয়া ‘এ’ টিমের হয়ে ওর বিরুদ্ধে প্রথম খেলি। তখন থেকেই কিন্তু আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব রয়েছে। ও দেখা হলেই ‘হাই, হ্যালো’ বলে। আইপিএলে বিরাটের বিরুদ্ধে বেশি ম্যাচ খেলিনি। তাই ওর বিরুদ্ধে খেলার জন্য মুখিয়ে আছি।
প্র: আইপিএলে আপনার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাটা কী রকম? কখনও স্লেজিংয়ের মুখে পড়েছেন বা স্লেজ করেছেন?
কাটিং: দেখুন, একটা কথা পরিষ্কার বলছি। আমি মনে করি টি- টোয়েন্টি ম্যাচে স্লেজ করে কোনও লাভ হয় না। এটা এত ফাস্ট একটা খেলা যে মুহূর্তে মুহূর্তে পরিস্থিতি বদলে যায়। এখানে স্লেজ করা মানে সেটা বুমেরাং হয়ে যাওয়া।
প্র: কী ভাবে ব্যুমেরাং হতে পারে?
কাটিং: ধরুন একজন বোলার একটা ভাল বল করে ব্যাটসম্যানকে কিছু বলল। তার পরের বলটাই কিন্তু উড়ে যেতে পারে স্ট্যান্ডে। আবার এক জন ব্যাটসম্যান একটা বড় শট নিয়ে বোলারকে গালাগালি দিল। দেখা গেল, পরের বলেই ব্যাটসম্যানের স্টাম্প উড়ে গিয়েছে। টি-টোয়েন্টি অ্যাকশনে ভর্তি ক্রিকেট। এখানে স্লেজিং করার তাই প্রশ্নও নেই।
প্র: এ বার তো আপনাদের ওপর চাপ বেশি থাকবে। গত বারের চ্যাম্পিয়ন। প্রত্যাশাও বেশি।
কাটিং: না, আমরা যে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম সেটা ভুলেই গিয়েছি। ওটা গত বছরের ঘটনা। আমরা নিজেদের ওপর কোনও প্রত্যাশার চাপ পড়তে দিচ্ছি না। এ বার আবার সম্পূর্ণ নতুন করে শুরু হচ্ছে আমাদের লড়াই।