মাকে গোল উৎসর্গ করেও হতাশ বলবন্ত

পঞ্জাবের হোশিয়ারপুর গ্রামের মধ্য পঞ্চাশের রবিন্দর কৌর চেনেন না লিওনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো-কে। তাঁর কাছে ফুটবল মানেই ‘মেরা বেটা খেলতা হ্যায়’!

Advertisement

শুভজিৎ মজুমদার

ভুবনেশ্বর শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৭ ০৪:১৬
Share:

স্বস্তি: গোল করে জেতানোর পরে তৃপ্ত বলবন্ত। নিজস্ব চিত্র

পঞ্জাবের হোশিয়ারপুর গ্রামের মধ্য পঞ্চাশের রবিন্দর কৌর চেনেন না লিওনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো-কে। তাঁর কাছে ফুটবল মানেই ‘মেরা বেটা খেলতা হ্যায়’!

Advertisement

রবিবার মাতৃদিবসের শুভেচ্ছা জানাতে বলবন্ত ফোন করতেই রবিন্দর বলেছিলেন, ‘‘আজ তোমাকে গোল করতে হবে।’’ বারবাটি স্টেডিয়ামে ফেডারেশন কাপ সেমিফাইনালে ডার্বিতে বিশ্বমানের গোল করে মায়ের কথা রাখতে পেরেই বেশি উচ্ছ্বসিত বলবন্ত। বললেন, ‘‘ম্যাচের আগে মাকে ফোন করলেই বলেন, ভাল করে খেলবে। এ বারই প্রথম বললেন গোল করতে হবে। মায়ের কথা রাখতে পেরে বেশি আনন্দ হচ্ছে। গোলটা মাকেই উৎসর্গ করছি।’’

মায়ের জন্যেই ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে বলবন্তের। তিনি যখন সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে পেশাদার ফুটবলার হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, পরিবারের সকলেই বিরোধিতা করেছিলেন। ব্যতিক্রম মা। বলবন্ত বলছিলেন, ‘‘মা সেই সময় বলেছিলেন বল্লু (বলবন্তের ডাক নাম) যখন ফুটবল খেলতে চাইছে, ওকে বাধা দিও না। ও সফল হবেই। মা সব সময় পাশে ছিলেন বলেই আমি ফুটবলার হতে পেরেছি। না হলে হয়তো আমার জীবনটা অন্য খাতে বইত।’’ গত মরসুমে প্রায় পুরোটাই চোটের জন্য মাঠের বাইরে কাটাতে হয়েছিল বলবন্তকে। সুস্থ হয়ে যখন ফিরলেন, দেখলেন প্রথম দলে দুরন্ত ফর্মে থাকা জেজে লালপেখলুয়া। তাঁর জায়গা হল রিজার্ভ বেঞ্চে। একটা সময় মোহনবাগান ছাড়ার কথাও ভেবেছিলেন। ইস্টবেঙ্গল কর্তারা সেই সময় প্রস্তাব দেওয়ার পরে বলবন্ত জানিয়েছিলেন, মোহনবাগান যদি তাঁকে না রাখে, তা হলেই লাল-হলুদে খেলবেন। শেষ পর্যন্ত পুরনো ক্লাবেই থেকে যান বলবন্ত। সবুজ-মেরুনের সিংহ বললেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গল গত তিন-চার বছর ধরেই আমাকে চাইছে। কিন্তু মোহনবাগানের পরিবেশের সঙ্গে আমি দারুণ ভাবে মানিয়ে নিয়েছি। এ বারও যখন শুনলাম সঞ্জয় সেন কোচ, তখন আর দ্বিতীয়বার ভাবিনি।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: কুস্তি নয়, এ বার অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসে গীতা ফোগত

মোহনবাগানের মতোই বলবন্তের দুর্বলতা রয়েছে ফেডারেশন কাপ নিয়ে। চার বছর আগে কোচিতে এই টুর্নামেন্টে চার্চিল ব্রাদার্সের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নেপথ্যে তিনিই ছিলেন মূল কারিগর। এ বারও ফাইনালে। বলবন্ত বললেন, ‘‘ফেডারেশন কাপটা আমার কাছে অত্যন্ত পয়া টুর্নামেন্ট। গত বছর গুয়াহাটিতে মোহনবাগান চ্যাম্পিয়ন হলেও চোটের জন্য আমি খেলতে পারিনি। সেই আক্ষেপটা ২১ মে বারবাটি স্টেডিয়ামে মেটাতে চাই।’’ তবে দুরন্ত ফর্মে থাকা সত্ত্বেও জাতীয় দলে ডাক না পাওয়ার হতাশা গোপন করতে পারছেন না। বলছেন, ‘‘জাতীয় দলে খেলা স্বপ্ন। কিন্তু আমার হাতে সব কিছু নেই। আমাকে মাঠে নেমে নিজের সেরাটা দিয়ে যেতে হবে। তার পরে দেখা যাক কী হয়।’’ বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে ফাইনালের আগে ছ’দিন সময় থাকলেও সোমবার থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন বলবন্ত-রা।

এ দিন সকালের উড়ানে ভুবনেশ্বর থেকে কলকাতা ফিরে এসেছেন কোচ সঞ্জয় সেন। ক্লান্ত থাকায় ফুটবলারদের ফেরার টিকিট কাটা হয়েছিল বিকেলের উড়ানে। কিন্তু ক্লান্তি উপেক্ষা করেই ফিটনেস ট্রেনিংয়ে নেমে পড়েছিলেন সনি নর্দে, ড্যারেল ডাফি-রা। কেউ জিম করলেন। কেউ কেউ সুইমিং পুলেই স্ট্রেচিং করলেন ফিজিক্যাল ট্রেনার গার্সিয়া মিরান্দার কাছে। তবে অদ্ভুত ভাবে উধাও ডার্বি জয়ের উচ্ছ্বাস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন