নায়ক: সাফল্যের পরে উচ্ছ্বসিত মেহদিকে অভিনন্দন শাকিবের। এএফপি
প্রতিশোধ। ঠিক পাঁচ মাস আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ঘরের মাঠে গতিময় পিচে ০-২ টেস্ট সিরিজ হেরে ফিরেছিল বাংলাদেশ। রবিবার ঢাকার শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সেই হারের পাল্টা জবাব দিল শাকিব আল হাসানের দল। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ইনিংস ও ১৮৪ রানে হারিয়ে সিরিজও ২-০ জিতল বাংলাদেশ।
শুধু সিরিজ জিতেই থেমে থাকেনি শাকিব-বাহিনী, গড়া হয়ে গিয়েছে একাধিক রেকর্ড। যা নিয়ে উত্তাল সোশ্যাল মিডিয়া। শুভেচ্ছাবার্তায় ভরিয়ে দিচ্ছেন সমর্থকেরাও। ১৮ বছরের টেস্ট ইতিহাসে প্রথম বার ইনিংস জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ। এমনকি, বিপক্ষকে ফলো-অন করানোর অভিজ্ঞতাও প্রথম বার হল তাদের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসে ৫০৮ রান করেছিলেন মুশফিকুর রহিমরা। মাহমুদুল্লাহ করেন ১৩৬ রান। শাকিব করেন ৮০। জবাবে প্রথম ইনিংসে ১১১ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ২১৩ রানে শেষ হয়ে যায় শিমরন হেটমায়ারেরা। সৌজন্যে বাংলাদেশের তরুণ অফস্পিনার মেহদি হাসান মিরাজ। প্রথম ইনিংসে নেন পাঁচ উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁর প্রাপ্তি সাতটি। গোটা ম্যাচে তাঁর পরিসংখ্যান ১২-১১৭ যা ছাপিয়ে গিয়েছে তাঁরই গড়া আগের রেকর্ডকে (১২-১৫৯)। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে স্পিনার হিসেবে এক টেস্টে ১৬ উইকেট নেওয়ার নজির ছিল প্রাক্তন ভারতীয় লেগস্পিনার নরেন্দ্র হিরওয়ানির। তার ঠিক পরেই জায়গা করে নিলেন বাংলাদেশের অফস্পিনার।
এখানেই শেষ নয়, এই সিরিজে ৪০ উইকেট নিয়েছেন বাংলাদেশের স্পিনারেরা। যা দু’ম্যাচের সিরিজে সর্বোচ্চ। ১৫টি উইকেট মেহদির। তাইজুল ইসলামের ঝুলিতে দশটি। ৯টি শাকিবের। ছয় উইকেট নিয়েছেন অফস্পিনার নইম হাসান। রবিবার একই দিনে ৯ উইকেট নেন মেহদি। বাংলাদেশের স্পিনার হিসেবে যা সর্বোচ্চ।
আরও পড়ুন: অ্যাডিলেডে বিরাটদের অপেক্ষায় সবুজ পিচ
দলের পারফরম্যান্সে মুগ্ধ অধিনায়ক শাকিব। রবিবার ম্যাচ শেষে তিনি বললেন, ‘‘গত ১৮ বছরে ১০০-র উপরে টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। কিন্তু কোনও দলকে ফলো-অন করাতে পারেনি। প্রথম বার সেই স্বাদ পেয়ে আমি আপ্লুত। তবে পুরো কৃতিত্বই দলের।’’ টেস্টে ৩৮টি ক্ষেত্রে ইনিংসে হারার অভিজ্ঞতা রয়েছে বাংলাদেশের। তার মধ্যে দশটি ম্যাচে ছিলেন শাকিব। তাই তাঁর কাছে এই অনুভূতি অন্য রকম। শাকিবের কথায়, ‘‘আমাদের স্বস্তির অন্যতম কারণ হল, আমরা বড় দলকে এ ভাবে হারিয়েছি। জুলাইয়ে ওদের বিরুদ্ধে হারের পরে এই সিরিজ আমাদের জেতা জরুরি ছিল। আমরা সেটা করে দেখিয়েছি।’’
শাকিব জানিয়েছেন, গোটা সিরিজ জুড়ে দলের খেলোয়াড়দের অনেক বার মনে করিয়ে দিয়েছেন, এই সিরিজ হাতছাড়া করা চলবে না। যার যোগ্য প্রতিদান দিয়েছে তাঁর দল। শাকিব বলছেন, ‘‘আমরা যে, আমাদের পরিকল্পনায় অটল থেকেছি, তার জন্য অবশ্যই ধন্যবাদ জানাব টিম ম্যানেজমেন্টকে। সিরিজ চলাকালীন আমি একটু বেশিই কঠোর হয়ে গিয়েছিলাম। অনেক কিছু চেয়ে ফেলেছিলাম ওদের কাছ থেকে। কিন্তু ছেলেরা আমাকে ভুল বোঝেনি। বরং নিজেদের উজাড় করে দিয়েছে।’’
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর অনুপ্রেরণা নিয়ে শাকিবের বক্তব্য, ‘‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে তাদের ঘরের মাঠে হোয়াইটওয়াশ হওয়াটা কোনও ভাবেই আমি মেনে নিতে পারিনি। তাই সতীর্থদের বলতাম, ওদের ঘরের মাঠে ওরা জ্বলে উঠেছে। এ বার আমাদের পালা। দেখিয়ে দাও।’’