সাদা-কালো রূপকথা থামিয়ে নায়ক সেই মেসি

ফাইনাল ম্যাচ মানেই আলাদা উত্তেজনা। কোনও দল হয়তো একটু বেশি শক্তিশালী। কিন্তু ফেভারিট বলে কেউ হয় না। নির্দিষ্ট দিনে যে একশো শতাংশ দিতে পারবে ম্যাচ তারই। শনিবার রাতেও দুই ঘরানার লড়াই দেখতে বসেছিলাম। খুব উত্সুক ছিলাম দেখতে মেসি-নেইমার-সুয়ারেজকে আটকাতে কী ছক কষবে জুভেন্তাস? ম্যাচের প্রথম দিকে যখন জুভেন্তাস হাই প্রেস করতে শুরু করল মনে হল, যাক আজ হয়তো বার্সার বিরুদ্ধে সাহসী ফুটবলটাই দেখব। অর্থাত্ আক্রমণের বিরুদ্ধে আক্রমণ।

Advertisement

ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৫ ০৪:০৩
Share:

বার্সার হয়ে দ্বিতীয় গোল করার পথে সুয়ারেজ।

ফাইনাল ম্যাচ মানেই আলাদা উত্তেজনা। কোনও দল হয়তো একটু বেশি শক্তিশালী। কিন্তু ফেভারিট বলে কেউ হয় না। নির্দিষ্ট দিনে যে একশো শতাংশ দিতে পারবে ম্যাচ তারই। শনিবার রাতেও দুই ঘরানার লড়াই দেখতে বসেছিলাম। খুব উত্সুক ছিলাম দেখতে মেসি-নেইমার-সুয়ারেজকে আটকাতে কী ছক কষবে জুভেন্তাস?
ম্যাচের প্রথম দিকে যখন জুভেন্তাস হাই প্রেস করতে শুরু করল মনে হল, যাক আজ হয়তো বার্সার বিরুদ্ধে সাহসী ফুটবলটাই দেখব। অর্থাত্ আক্রমণের বিরুদ্ধে আক্রমণ। প্রথম তিন মিনিটের পরেই সমস্ত আশা শেষ হল। জুভেন্তাসের থেকে সেই যে বলটা পেল বার্সা আর ফেরত দিতেই চাইল না। সেই ছোট ছোট পাস। মেসি-নেইমার-সুয়ারেজদের অনবরত জায়গা পাল্টানো। বার্সার বিরুদ্ধে যা সব বিপক্ষ করে থাকে, সেটাই করল জুভেন্তাস। সবাই মিলে পিছনে গিয়ে বসে থাকা। সুযোগ পেলে প্রতি আক্রমণ। ইভান রাকিটিচের গোলটা দেখে মনে হল বার্সা ফুটবলকে কত সহজ করে ফেলেছে। প্রথম গোলটা ভাবুন। নেইমার পাস দিল ইনিয়েস্তাকে। ইনিয়েস্তা থেকে রাকিটিচ। তার পরে বলটা সোজা জালে। দেখে মনে হল অনুশীলনে করা গোল। তিকিতাকার সঙ্গে ডিরেক্ট ফুটবলটাকে ভাল করেই মিশিয়ে দিয়েছেন এনরিকে।

Advertisement

গোলের পরেই খেলাটা স্লো করে দিল বার্সা। পাস দিতে দিতে জুভেন্তাসের দম বার করে দিল। মেসিকে আবার ডিপ থেকে এ দিন খেলালেন এনরিকে। প্রায় মাঝমাঠে নেমেই খেলাটা কন্ট্রোল করে গেল মেসি। পির্লো-মারচিসিও-রা গতিতেই পারল না। জুভেন্তাস যতটুকু যা সুযোগ পেল ফাইনাল থার্ডে গিয়ে নষ্ট করল।

জুভেন্তাস তিনটে খেল। আরও তিনটে খেলেও কিছু বলার থাকত না। ওদের ভাগ্য ভাল যে, জিয়ানলুইগি বুফোঁর মতো একজন গোলকিপার আছে। দানি আলভেজের শটটা কী দুর্দান্ত বাঁচাল। সেভটা যথেষ্ট কঠিন ছিল। এটাই কোনও সেরা কিপারের রিফ্লেক্স। অন্য দিকেই ঝাঁপিয়েও এক হাতে ঠিক বাঁচিয়ে নিল। তখন ওই গোল দু’টো হয়ে গেলে ম্যাচ অনেক আগেই শেষ হয়ে যায়।

Advertisement

গোলের উল্লাস। বার্লিনে বার্সার প্রথম গোলের পর।

দ্বিতীয়ার্ধে জুভেন্তাস চেষ্টা করেছিল ম্যাচে ফেরার। আলেগ্রি কী বলেছিলেন কে জানে। আন্দ্রে পির্লোকে আবার আন্দ্রে পির্লোর মতো লাগছিল। সেই যেন ২০০৬ বিশ্বকাপের পির্লো। মাঝমাঠ ও আবার ব্যান্ডমাস্টার। অনবরত ফরোয়ার্ড পাস দিয়ে বার্সা ডিফেন্সকে ভাঙতে শুরু করল। ম্যাচের পর তাই যখন ওকে কাঁদতে দেখছিলাম, খারাপ লাগছিল। জাভির মতো এটা ওরও শেষ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ হয়ে গেল কি না কে জানে। পির্লোর ওই নাগাড়ে বার্সা ডিফেন্সকে বিরক্ত করে যাওয়ার জন্যই তো একমাত্র গোলটা পেল জুভেন্তাস।

কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। আসলে যে টিমে মেসি, নেইমার, সুয়ারেজের মতো প্লেয়ার আছে তাদের একটা গোল করে আটকে রাখা সম্ভব নয়। ১-১ হয়ে যাওয়ার পর মেসির ডাউন দ্য মিডল দৌড়টা দেখলেন? সুয়ারেজ গোলটা পেল। কিন্তু ওটা মেসির হওয়া উচিত। শেষ গোলটাও স্রেফ সাজিয়ে দিল নেইমারের জন্য। আর নেইমার ও সব জায়গা থেকে মিস করে না। সামনে বুফোঁর মতো বিশ্বসেরা গোলকিপার থাকলেও তাকে ছিটকে ফেলে দেয়।

আসলে একটা টিমকে চ্যাম্পিয়ন অব দ্য চ্যাম্পিয়ন্স হতে গেলে যা যা দরকার, সব ছিল বার্সায়। মাঝমাঠে ইনিয়েস্তা, রাকিটিচের মতো প্লেয়ার। দুই ফুলব্যাক আলবা ও আলভেজ। লুই এনরিকের মতো মস্তিষ্ক। আর সবশেষে স্বপ্নের আক্রমণ।

জাভি হার্নান্দেজ বিদায়ের দিনে এর চেয়ে ভাল বার্সা টিম আর দেখে যেতে পারত কি?

ছবি: গেটি ইমেজেস

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন