ঐশ্বরিক

চার গোলের ঘাটতি মিটিয়ে ফুটবল ইতিহাসের সেরা প্রত্যাবর্তন বার্সেলোনার

আচমকাই হুড়োহুড়ি পড়ে গেল। দৌড়ে দৌড়ে মাঠে ঢুকে পড়ছেন অসংখ্য মানুষ। গ্যালারি থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে নামছেন বয়স্করা। ফুটবল বোঝেন না এমন কেউও সেই সব দৃশ্য দেখে বলে দিতে পারবেন, অসম্ভব, অলৌকিক, অভাবনীয় কিছু একটা ঘটেছে এখানে। ক্যাম্প ন্যু-তে তাই হয়তো এমন হিস্টিরিয়া!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৭ ০৩:৩৮
Share:

—ফাইল চিত্র।

দু’পর্ব মিলিয়ে ৬-৫

Advertisement

বার্সেলোনা ৬

প্যারিস সঁ জরমঁ ১

Advertisement

আচমকাই হুড়োহুড়ি পড়ে গেল। দৌড়ে দৌড়ে মাঠে ঢুকে পড়ছেন অসংখ্য মানুষ। গ্যালারি থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে নামছেন বয়স্করা। ফুটবল বোঝেন না এমন কেউও সেই সব দৃশ্য দেখে বলে দিতে পারবেন, অসম্ভব, অলৌকিক, অভাবনীয় কিছু একটা ঘটেছে এখানে। ক্যাম্প ন্যু-তে তাই হয়তো এমন হিস্টিরিয়া!

সত্যিই ঘটেছে? নাকি ‘মিডসামার নাইট্‌স ড্রিম’? রাত জেগে ম্যাচ দেখে পরের সকালে ঘুম থেকে উঠেও যেন অবিশ্বাসের ছোঁয়া। বার্সেলোনা ক্লাবের তরফেই ভোরবেলার বার্তা— ‘সুপ্রভাত বন্ধুরা। কাল রাতে আমরা স্বপ্ন দেখিনি। সত্যিই এমন ঘটেছিল। প্রথম লেগে ০-৪ পিছিয়ে থাকা আমাদের টিম ৬-১ জিতে পৌঁছেছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে। অলীক স্বপ্ন নয়, বাস্তব’।

অভিধান থেকে সমস্ত বিশেষণ বের করেও কি যথার্থ ভাবে বর্ণনা করা যাবে লিও মেসিদের এমন অভাবনীয় প্রত্যাবর্তনকে? অ্যালবাম থেকে দু’টো ম্যাচ তক্ষুনি ভেসে উঠল চোখের সামনে। ২০০৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল। হাফটাইমে ০-৩ পিছিয়ে থাকা লিভারপুল স্টিভেন জেরারের নেতৃত্বে ম্যাচে ফিরে এসে উড়িয়ে দিয়েছিল এসি মিলান-কে। জেরার-রা ৬ মিনিটে ৩ গোল করে অতিরিক্ত সময়ে খেলা নিয়ে যান। তার পর টাইব্রেকারে জিতে চ্যাম্পিয়ন। ১৯৯৯-এর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে স্যার আলেক্স ফার্গুসনের ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড এক গোলে পিছিয়ে থাকা অবস্থায় স্টপেজ টাইমে দু’গোল করে বায়ার্ন মিউনিখ-কে হারায়।

আরও পড়ুন: ‘যদি কেউ পারে তো আমরাই’

‘ফ্লোট লাইক আ বাটারফ্লাই, স্টিং লাইক আ বি’— আলির সেই বিখ্যাত উক্তিই কি ক্যাম্প ন্যু-তে মেসিদের খেলা দেখে মনে পড়ছিল না? প্রজাপতির মতোই তাঁরা ভেসে বেড়াচ্ছিলেন, উড়ছিলেন। আর মৌমাছির মতো হুল ফোটাচ্ছিলেন প্যারিস সঁ জরমঁ দলের ফুটবলারদের গায়ে।

জাদুকরি: নিজেদের মাঠে অবিশ্বাস্য জয়ের রাতে বিরল উৎসব মেসিরও। উঠে পড়লেন ভক্তদের কোলে। ছবি: এএফপি।

এডিনসন কাভানি-দের দোষ? প্রথম লেগে তারা ৪-০ হারানোর দুঃসাহস দেখিয়েছিল ফুটবল-ঈশ্বরের দলকে। বার্সেলোনা মানে এত কাল আমরা জানতাম, শিল্পের বার্সেলোনা। তিকিতাকার বার্সেলোনা। বুধবার রাতে ক্যাম্প ন্যু দেখতে পেল ক্ষিপ্ত বার্সেলোনা-কে। মেসি এবং ইনিয়েস্তাকে যে তীব্রতা এবং আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে শুরু থেকে খেলতে দেখা গেল, তা আগে কখনও দেখা গিয়েছে? জয়ের উৎসব করতে মেসি ফেন্সিংয়ের ওপর লাফিয়ে উঠে পড়ছেন— এমন ছবি কখনও কি আগে উঠেছে? ৪-০ হারিয়ে ভ্যালেন্টাইন্‌স ডে-তে প্যারিস লাঞ্চনার রাত উপহার দিয়েছিল। ফুটবল-ঈশ্বর তাঁর দলবলকে নিয়ে উওমেন্‌স ডে-তে লজ্জার রং লাগিয়ে দিলেন আইফেল টাওয়ারের গায়ে।

‘‘ওরা যদি চারটে গোল করতে পারে, আমরা ছ’টা করতেই পারি,’’ দ্বিতীয় লেগের এই ম্যাচের আগে যখন বলেছিলেন বার্সেলোনা কোচ লুইস এনরিকে, তাঁকে নিয়ে হাসাহাসি হয়েছিল। পাগল না হলে এমন কেউ ভাববে! এক ঘণ্টার মধ্যে তিন গোল করে কোচের কথা রাখা শুরু বার্সেলোনার। গোটা স্টেডিয়াম স্প্যানিশে গান ধরেছে ‘সি জে পুয়েদে, সি জে পুয়েদে’। যার অর্থ, ‘হ্যাঁ, আমরা পারি, হ্যাঁ আমরা পারি’। কাভানির গোলে ১-৩ করে ফেলল পিএসজি। অ্যাওয়ে গোল হয়ে যাওয়ায় বার্সাকে জিততে হলে আরও তিনটি গোল করতে হবে। শেষ ৭ মিনিট ১৭ সেকেন্ডে তিন গোল করল তারা।

ইনজুরির টাইমের শেষ সেকেন্ডে পিএসজি বক্সে নেমারের অসাধারণ লব অবিশ্বাস্য ক্ষিপ্রতায় পায়ের পাতা দিয়ে ভলি মেরে জালে জড়িয়ে দিলেন সের্জি রবের্তো। অলৌকিকের আলোয় জ্বলে উঠল ক্যাম্প ন্যু। ডাগ-আউট থেকে স্প্রিন্ট টেনে চলে এল বার্সার রিজার্ভ বেঞ্চ। কেউ হাতে হাত ধরে নাচছেন। কেউ বুকে হাত দিয়ে দেখছেন কত জোরে ধুকপুকানি হচ্ছে। চোখেমুখে অপার বিস্ময়। ভক্তরা উৎসব শুরু করে দিলেন টাইটানিকের মোহময়ী মিউজিক বাজিয়ে।

টাইটানিকের গান কেন?

হয়তো মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য যে, কিছু কিছু ঐতিহ্য, কিছু কিছু ইমারত, কিছু কিছু ইতিহাস ধাক্কা খেয়েও তলিয়ে যায় না। টাইটানিক চার ঘণ্টার মধ্যে ডুবে গিয়েছিল। বার্সেলোনা প্যারিসে হিমশৈলে ধাক্কা খেয়ে একুশ দিনের মধ্যে ক্যাম্প ন্যু-তে ভেসে উঠল!

সি জে পুয়েদে! সি জে পুয়েদে!

আজ

য়ুভেন্তাস বনাম এসি মিলান রাত ১.১৫।
সেরি আ-তে ডার্বি। সোনি ইএসপিএন চ্যানেলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন