এমএসএনের পাড়ায় বিবিসির দাদাগিরি

তিকিতাকায় ফিরেই ডুবল বার্সেলোনা

গত ক’দিন যাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি তারাই বলেছে, ধুর এই বার্সেলোনার সঙ্গে রিয়াল কী করবে! চার-পাঁচ গোল খাবে। ইন্টারনেট ঘেঁটেও দেখলাম, বার্সেলোনা গত বার বের্নাবাওতে গিয়ে চার গোল দিয়েছিল। নিজেদের ঘরের মাঠে তো কোনও সুযোগই দেবে না। শনিবার রাতে তাই আমিও আগ্রহী ছিলাম দেখতে, সত্যিই বার্সেলোনা এখন এতটাই ভাল যে ওদের কাছে এল ক্লাসিকোও কোনও গ্রানাদা বা রায়ো ভায়েকানো ম্যাচের মতোই?

Advertisement

সুব্রত ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৫১
Share:

মাঠে বিপর্যস্ত সুয়ারেজ-মেসি। ড্রেসিংরুমে রোনাল্ডো-সহ উচ্ছল রিয়াল। ছবি: এএফপি, ফেসবুক

বার্সেলোনা-১ (পিকে) : রিয়াল মাদ্রিদ-২ (বেঞ্জিমা, রোনাল্ডো)

Advertisement


গত ক’দিন যাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি তারাই বলেছে, ধুর এই বার্সেলোনার সঙ্গে রিয়াল কী করবে! চার-পাঁচ গোল খাবে। ইন্টারনেট ঘেঁটেও দেখলাম, বার্সেলোনা গত বার বের্নাবাওতে গিয়ে চার গোল দিয়েছিল। নিজেদের ঘরের মাঠে তো কোনও সুযোগই দেবে না। শনিবার রাতে তাই আমিও আগ্রহী ছিলাম দেখতে, সত্যিই বার্সেলোনা এখন এতটাই ভাল যে ওদের কাছে এল ক্লাসিকোও কোনও গ্রানাদা বা রায়ো ভায়েকানো ম্যাচের মতোই? যা নিয়ে হাইপ থাকলেও আদতে বার্সেলোনার জন্য সাধারণ একটা লড়াই। নাকি জিনেদিন জিদান এমন কোনও চাল দেবেন যা তাঁর পূর্বসূরিরা পারেননি কোচ হিসেবে নিজেদের প্রথম ক্লাসিকোতে।

ম্যাচের পঁচিশ মিনিট দেখে মনে হল, ইন্টারনেটই হয়তো ঠিক। সত্যিই রিয়ালও বাকি দলগুলোর মতো ন্যু কাম্পে অসহায় আত্মসমর্পণ করবে। কিন্তু আস্তে আস্তে ছবিটা পাল্টাল। তার পর নব্বই মিনিট শেষে দেখলাম একটা সুন্দর স্ট্র্যাটেজি কষে কী করে ম্যাচ বের করতে হয়, সারা বিশ্বের চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে গেলেন জিদান।

Advertisement

জানি একটা হারে বার্সেলোনার কিছু যায় আসে না। লা লিগায় ওরা এখনও সাত পয়েন্টে এগিয়ে রিয়ালের চেয়ে। কিন্তু এল ক্লাসিকো মানে তো শুধু ম্যাচ নয়, সম্মানের লড়াই। আর সেই সম্মানের লড়াই জিততে রোনাল্ডোরা যতটা মরিয়া ছিল, বার্সার মধ্যে সে রকম কিছুই অন্তত শনিবার রাতে দেখলাম না। বরং মেসিদের কেমন একটা গা-ছাড়া ভাব ছিল। হয়তো এত ম্যাচ অপরাজিত থেকেছে বলে ভেবেছিল এটাও ঠিক জিতে যাবে। সে রকম ভুল ডার্বিতে করলে কিন্তু মুশকিল। রিয়াল হয়তো ধারাবাহিক ভাবে খেলতে পারছে না। তাতেও ওদের দলে একজন রোনাল্ডো আছে। যে গোলটা করতে জানে। একটা বেল আছে। যার গতি প্রতিআক্রমণের বিপক্ষকে বিপদে ফেলতে পারে। একটা বেঞ্জিমা আছে। যার ফিনিশিং এখনও তুখোড়।

এই ক্লাসিকোতে বার্সেলোনার সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল তিকিতাকা। লুইস এনরিকে জমানায় অনেক বেশি ডিরেক্ট খেলছে বার্সা। কিন্তু ক্লাসিকোতে দেখলাম অকারণে বেশি পাস খেলছে বার্সা। রিয়ালের পেনাল্টি বক্সের সামনে গিয়েও শট নিচ্ছে না। অকারণে বাড়তি পাস দিচ্ছে। খেলার ‘টেম্পো’ স্লো হয়ে যাচ্ছে। অতিরিক্ত বেশি পাস খেলায় সুযোগও নষ্ট হচ্ছে। এখন তো ওদের কোনও জাভি নেই, যে কিনা মাঝমাঠ থেকে সব কিছু তৈরি করবে। জাভির জায়গায় আসা রাকিটিচ আরও বেশি ডিরেক্ট খেলতে অভ্যস্ত।

তবে রিয়াল ম্যাচটা জেতার পিছনে আসল জিনিস ছিল জিদান-ফ্যাক্টর। পিকের হেড থেকে বার্সা এগিয়ে যাওয়ার পরে যেমন ভাবে স্ট্র্যাটেজি বদলালেন, প্রশংসা করতেই হবে। জিদান জানতেন দুই উইংয়ে রোনাল্ডো, বেলকে বেশি নড়াচড়া করতে দেওয়া হবে না। তখন দেখলাম মার্সেলো আর কারভাজালকে ওভারল্যাপে পাঠিয়ে দিলেন। যাতে আক্রমণে আরও ‘অপশন’ বাড়ে। ক্রসগুলো অনবরত বাড়িয়ে যাচ্ছিল ওরা। রোনাল্ডো-বেলরা আরও বেশি করে সাপোর্ট পাচ্ছিল।

বড় ম্যাচ মানে নির্দিষ্ট স্ট্র্যাটেজি তোমায় রাখতেই হবে। কোচ হিসেবে আমার প্রথম বড় ম্যাচে দলের পজিশনিংয়ের উপর বেশি মন দিয়েছিলাম। বিপক্ষের কাছে যখন বল থাকবে তখন ফুটবলারদের পজিশন কী হবে সেটার উপর জোর দিতাম। বার্সার পজেশন দখল করার সময়েও রিয়াল ডিফেন্স ঠিকঠাক জায়গা রেখেছিল। কেউ ফাইনাল ট্যাকলে যায়নি। গোলকিপারের মুখটা পর্যন্ত দেখতে দেয়নি বার্সার আক্রমণকে।

এই মরসুমে বার্সা ম্যাচ মানেই তো এমএসএন। মেসি-সুয়ারেজ-নেইমার ফুটবলকে অনেক সহজ করে তুলেছে। কোনও কোচ মেসিকে আটকালে, নেইমার গোল করছিল। নেইমারকে আটকালে, সুয়ারেজ গোল করছিল। কিন্তু জিদান দেখলাম তিন জনের জন্যই আলাদা আলাদা প্ল্যান কষে রেখেছিলেন।

মেসির জন্য কাসেমিরো। প্রথম ক্লাসিকোতে রিয়াল ০-৪ হারের পিছনে অন্যতম কারণ ছিল কাসেমিরো দলে না থাকা। এ দিন সুযোগ পেয়েই কাসেমিরো প্রমাণ করে দিল মেসি তো কী হয়েছে, হোল্ডিং মিডফিল্ডার হিসেবে কাউকে ও ভয় পায় না। যেখানে মেসি সেখানেই কাসেমিরো। বল পেলেই গায়ে গায়ে লেগে থাকা। শ্যাডো মার্কিং বলতে যা বোঝায়। মাঝমাঠে নেমে এসেও তাই মেসি বেশি কিছু করতে পারেনি। একটা যা লব করেছিল সেটাও সেভ করে নিল কিপার।

নেইমারকে আবার উইংয়ে ঠেলে দিচ্ছিলেন জিদান। যাতে সাপোর্ট বেশি না পায়। ড্রিবল করেও তাই কোনও পাসের আউটলেট ও খুঁজে পায়নি।

আর সুয়ারেজ? ওর জন্য র‌্যামোস-পেপে। সুয়ারেজকে বলে সময় দেয়নি ওরা। বলটা দ্রুত ক্লিয়ারও করছিল।

এমএসএন যেটা পারল না, বিবিসি সেটা করে দেখিয়ে দিল। ঠিক সময় গোলগুলো করে। বেঞ্জিমার গোলটা যেমন দুর্দান্ত সাইড ভলিতে। র‌্যামোস লাল কার্ড দেখার পরেও রোনাল্ডো চেস্ট ট্র্যাপ করে সেই রোনাল্ডোর মতোই গোল। বার্সা তখন একরকম মেনেই নিয়েছে এটা ওদের রাত নয়।

রিয়াল জিতলেও আমার একটাই আক্ষেপ, প্রথম ছ’মাসও যদি জিদান রিয়ালের দায়িত্বে থাকতেন!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন