ডালমিয়ার হস্তক্ষেপে ম্যাচের আগে মুক্ত ‘সানি’

ব্র্যাড হগের কাঁধে হাত দিয়ে ক্লাবহাউসের সামনে অলস টহল দিচ্ছেন কেকেআর সিইও বেঙ্কি মাইসোর। ওয়াসিম আক্রম হাসতে হাসতে ঢুকে গেলেন কেকেআর ড্রেসিংরুমে, সঙ্গী জয় মেটা। ইউসুফ পাঠান জড়িয়ে ধরছেন ম্যাচের সেরা পীযূষ চাওলাকে। স্মিত মুখে একটু দূরে দাঁড়িয়ে তাঁদের খুনসুটি উপভোগ করছেন গৌতম গম্ভীর। এগারো ম্যাচে তেরো পয়েন্ট নিয়ে তিন নম্বরে উঠে আসা একটা টিম যে কতটা সুখী, সেটা বোঝাতে উপরের যে কোনও একটা দৃশ্যই যথেষ্ট।

Advertisement

প্রিয়দর্শিনী রক্ষিত

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৫ ০৩:৪৭
Share:

ব্র্যাড হগের কাঁধে হাত দিয়ে ক্লাবহাউসের সামনে অলস টহল দিচ্ছেন কেকেআর সিইও বেঙ্কি মাইসোর। ওয়াসিম আক্রম হাসতে হাসতে ঢুকে গেলেন কেকেআর ড্রেসিংরুমে, সঙ্গী জয় মেটা।

Advertisement

ইউসুফ পাঠান জড়িয়ে ধরছেন ম্যাচের সেরা পীযূষ চাওলাকে। স্মিত মুখে একটু দূরে দাঁড়িয়ে তাঁদের খুনসুটি উপভোগ করছেন গৌতম গম্ভীর।

এগারো ম্যাচে তেরো পয়েন্ট নিয়ে তিন নম্বরে উঠে আসা একটা টিম যে কতটা সুখী, সেটা বোঝাতে উপরের যে কোনও একটা দৃশ্যই যথেষ্ট। কিন্তু আদতে এর কোনওটাই নয়। রাতের ইডেনে নাইট এবং নাইট-ভক্তদের মুখে সবচেয়ে চওড়া হাসি ফোটাবে অন্য একটা ছবি— ম্যাচের শেষে পরাভূত বিপক্ষের সঙ্গে এক এক করে হাত মেলাচ্ছেন এক নাইট। টুপিটা আলগা ভাবে মাথায় বসানো, মুখে হালকা হাসি।

Advertisement

তিনি সুনীল নারিন। ষোলো দিনের ‘বনবাসের’ পর তিনি কেকেআরের প্রথম এগারোয়!

২২ এপ্রিল— বিশাখাপত্তনমে হায়দরাবাদ ম্যাচে শেষ বার বল করেছিলেন নারিন। ২৪ এপ্রিল— হায়দরাবাদ ম্যাচে আম্পায়ারদের রিপোর্ট জমা পড়ে তাঁর বোলিং অ্যাকশনের বিরুদ্ধে। তার পর নতুন করে পরীক্ষা, যার প্রাথমিক রিপোর্টের অদ্ভুত নিদান— অফস্পিন ছাড়া বাকি সব কিছু করতে পারবেন ক্যারিবিয়ান অফস্পিনার। ২৯ এপ্রিল— অফস্পিনের নতুন পরীক্ষা দিলেন নারিন। ৭ মে— যে রিপোর্ট নিয়ে ধোঁয়াশা ক্রমশ বাড়ছিল, এ দিন দুপুরে সেই রিপোর্ট পেয়ে গেল কেকেআর। যার নির্যাস— নারিন মুক্ত! অফস্পিন, নাক্‌ল বল, কুইকার, সব বৈধ। তবে শর্ত একটাই, ফের যদি তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তা হলে আইপিএলে আর বল করতে পারবেন না নারিন।

শোনা গেল, নারিনের রিপোর্ট যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যাতে পাওয়া যায়, তার জন্য বোর্ড প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়ার কাছে আবেদন করেছিল কেকেআর। যার সারমর্ম: খারাপ হোক বা ভাল, রিপোর্টটা যেন আর ঝুলিয়ে না রাখা হয়। প্রেসিডেন্টের হস্তক্ষেপেই নাকি বৃহস্পতিবার তারা রিপোর্ট হাতে পেয়ে যায়। যার সঙ্গে সঙ্গে ঠিক দু’সপ্তাহ ধরে তাদের প্রধান মারণাস্ত্রকে ঘিরে চলা নাটকে যবনিকা পড়ে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, নারিন ছাড়পত্র পেয়ে গেলেন এমন একটা সময়ে, যখন প্লে-অফ প্রায় নিশ্চিত কেকেআরের। এত দিন ম্যাচের আগে ওয়ার্ম আপে দেখা যেত ম্রিয়মাণ নারিনকে। বৃহস্পতিবারের ইডেন দেখল ক্যারিবিয়ান রহস্য স্পিনার ফুরফুরে ভাবে নেটে বল করছেন। টস করতে নামার সময় গম্ভীরও বলে গেলেন, ‘‘আমাদের আক্রমণের লিডারকে ফেরত পেয়ে গিয়েছি। সুনীল নারিন ইজ ব্যাক!’’

দিল্লি ইনিংসের পাঁচ নম্বর ওভারে যখন বল করতে এলেন নারিন, ইডেনের গর্জনে কান পাতা দায়। ক্যারম বল, অফস্পিন, ইডেন দেখল নারিনের সব ভেলকিই। তাঁর বোলিং অ্যাকশনে কোনও হেরফের চোখে পড়ল কি? প্রশ্নটা শুনে বিরক্ত মুখে ‘‘অত খেয়াল করিনি’’ যতই বলুন দিল্লি অধিনায়ক জেপি দুমিনি, কিছুক্ষণ পরে স্বীকার করতেই হল যে, নারিন নিঃসন্দেহে এই ম্যাচে একটা ফ্যাক্টর ছিলেন।

দিনের শেষে তাঁর বোলিং হিসেব অবশ্য খুব সুখকর নয়। চার ওভারে নারিন দিয়েছেন ৩০, উইকেট শূন্য। যে পরিসংখ্যান তাঁর আইপিএল কেরিয়ারে প্রায় বেনজির। কিন্তু ও সব নিয়ে মাথাই ঘামাচ্ছে না কেকেআর। বরং সাংবাদিক সম্মেলনে এসে পীযূষ চাওলা শুনিয়ে গেলেন, ‘‘নারিনের জাতটা দেখলেন তো? এই ক’দিন ওর যা কেটেছে, তার পরেও কী ভাবে ফিরে এল!’’

নারিন ফিরেছেন, ‘বুড়ো ঘোড়া’ হগ অদম্য গতিতে ছুটছেন, পীযূষ বলের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাটটাও বেশ ভাল করছেন। ব্যাটিং? গম্ভীর-রবিন তো ছিলেন, আছেন, থাকবেন। আন্দ্রে রাসেলের মাস্‌লের জোর ক্রমবর্ধমান। ইউসুফ পাঠান ফিরছেন ইউসুফ পাঠানে। আর নতুন করে স্বপ্ন দেখছে কলকাতা।

স্বপ্নের রং? সোনালি-বেগুনি!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন