বুধবার বোর্ডের বার্ষিক সভায় আপত্তি নেই লোঢা কমিটির। কিন্তু সেই বৈঠকে নতুন কমিটি গঠন নিয়ে আপত্তি রয়েছে তাদের। আর তা করলে বোর্ড কর্তাদের আদালত অবমাননার দায়ে পড়তে হতে পারে। অনুরাগ ঠাকুররা বুধবার মুম্বইয়ে বার্ষিক সভায় বসার অনেক আগেই এমন প্রচ্ছন্ন ‘হুমকি’ দিয়েছিল লোঢা কমিটি। ই-মেল মারফত। যা এজিএমের ঠিক আগে নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে আরও জোরালো করে তোলা হল। আদালত অবমাননার কালো মেঘ মাথার উপর নিয়েই যে বুধবার বৈঠকে বসছে বোর্ড, তা মনে করাতেই এই ই-মেল প্রকাশ, মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
বোর্ডের সিইও রাহুল জোহরিকে ৩১ অগস্ট যে ই-মেল পাঠিয়েছিলেন লোঢা কমিটির সচিব গোপাল শঙ্করনারায়ণন, তাতে শুরুতেই বলা ছিল, ‘‘২১ সেপ্টেম্বরের প্রস্তাবিত এজিএম গত বছরের (২০১৫-১৬) ‘রুটিন বিজনেস’-এ সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। আর আগামী বছরের বিষয় নিয়ে আলোচনা বা সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে কমিটির সুপারিশ করা নিয়ম প্রণয়নের পর।’’
কিন্তু বুধবারের বোর্ড বৈঠকের বিভিন্ন অ্যাজেন্ডার মধ্যে গত বছরের বিষয় নিয়ে আলোচনার কথা যেমন বলা রয়েছে, তেমনই বোর্ড সচিব নির্বাচন ও ওয়ার্কিং কমিটি-সহ বিভিন্ন কমিটি ও সাব কমিটি গঠনের কথাও বলা রয়েছে স্পষ্ট। এমনকী বুধবারের বৈঠকের জন্য একজন ইলেকশন অফিসারও বাছা হয়ে গিয়েছে। যিনি আবার কি না এক অবসরপ্রাপ্ত সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতি— পি বি সাওয়ান্ত। যা নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষুব্ধ লোঢা কমিটি। কমিটির এক কর্তা এক ভারতীয় ক্রিকেট ওয়েবসাইটকে এ দিন সাফ বলে দেন, ‘‘ওরা যদি লোঢা কমিটির নির্দেশিকা না মেনে মিটিং করে, তা হলে আদালত অবমাননার দায়ে পড়তেই হবে। আর সে রকম হলে বোর্ড ও বিভিন্ন রাজ্য সংস্থার কর্তাদের কঠোর শাস্তি হতে পারে। এমনকী জেলও হতে পারে ওদের।’’
লোঢা কমিটির এই হুঁশিয়ারি শুনে বোর্ড বৈঠকে যোগ দিতে যাওয়া এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘বোর্ড যে আগুন নিয়ে খেলছে সেই আগুন ভয়ঙ্কর হতে পারে। কিন্তু আমাদের তো হাত-পা বাঁধা। বোর্ডই আমাদের পেরেন্ট বডি। তাদের কথা শুনতেই হবে। রাজায়-রাজায় যুদ্ধে আমরা না উলুখাগড়া হয়ে যাই।’’
মঙ্গলবার মুম্বইয়ে ফোন করে জানা গেল, নতুন সচিব নির্বাচনও যেমন হবে, তেমনই ওয়ার্কিং কমিটি ও নির্বাচকদের কমিটিও গঠন করা হতে পারে। বোর্ডের যুক্তি, নতুন ওয়ার্কিং কমিটি ও সচিব নির্বাচন না হলে বোর্ডের দৈনন্দিন কাজকর্ম চালানো কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়বে। এর পর আর কোনও বৈঠকও ডাকা যাবে না। আর নির্বাচকদের নতুন কমিটি না গড়লে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সিরিজের দলও বাছা যাবে না। অর্থাৎ এই দুই নির্বাচন করতেই হবে।
গভীর রাতে খবর, ভারতীয় বোর্ড নাকি আইসিসি-তে নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনকে প্রতিনিধি করে পাঠালেও পাঠাতে পারে। বার্ষিক সভায় এই নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। শশাঙ্ক মনোহরের জবাব হিসেবে শ্রীনির নাম ভাবা হচ্ছে বলে কোথাও কোথাও খবর ছড়িয়েছে।
সচিব পদের জন্য অজয় শিরকে ছাড়া আরও কারও মনোনয়ন জমা পড়েনি। আর নির্বাচকদের কমিটিতে বাংলার দেবাঙ্গ গাঁধীর আসার সম্ভাবনা রয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মুম্বই পৌঁছে গিয়ে সিএবি প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় যে ব্যাপারে উদ্যোগ নেন বলে খবর। গত দু’দিনে নয়াদিল্লি ও মুম্বইয়ে নির্বাচক পদপ্রার্থীদের ইন্টারভিউও নেওয়া হয়েছে বলে শোনা গেল।
বুধবারের বৈঠকে এগুলো হয়তো হবে। কিন্তু লোঢাদের পাল্টা পদক্ষেপে বোর্ড বনাম আদালত যুদ্ধ নতুন কোন মোড় নেয়, সেটাই দেখার।