প্রশ্ন: আমরা সবাই জানি ৯/১১ কী। ২৬/১১ কী। ভারতীয় বোর্ড কর্তারা নাকি এখন আগাম মহাশঙ্কিত আরও একটা তারিখ নিয়ে। ২৯/৬।
শোনা যাচ্ছে সে দিন, মানে ২৯ জুন সুপ্রিম কোর্টের ভারতীয় বোর্ড সম্পর্কে চূড়ান্ত রায়দানের পর ভারতীয় ক্রিকেটে সর্বাত্মক ওলটপালট ঘটে যাবে। এক কথায় ভূমিকম্প হতে যাচ্ছে।
অনুরাগ: যে জিনিসটা আমি কন্ট্রোল করতে পারব না। যেটা তার আপন নিয়মে ঘটবে সেটা নিয়ে আগাম আতঙ্কিত হয়ে কী লাভ? পরিস্থিতিটা আসুক তার পর তো।
প্র: তবু কোথাও যেন একটা বিভীষিকা তৈরি হয়ে গিয়েছে যে ওই আসছে লোঢা। আসছে, বোর্ড কর্তাদের জন্য হাতুড়ি নিয়ে আসছে!
অনুরাগ: সবাই এখন মওকাতে চওকা মারছে।
প্র: মানে?
অনুরাগ: মানে এখন ভারতীয় বোর্ডের সমালোচনা হচ্ছে দেখে যে পারে বাজারে নেমে পড়েছে। সবাই বাউন্ডারি মারতে চায়।
প্র: কিন্তু আপনি তো ব্যাট করতে নেমেই সিমিং ট্র্যাকে পড়েছেন।
অনুরাগ: দেখুন ভাই আমি ক্রিকেটজীবনে বেশ কয়েক বার এই রকম হয়েছে সামলেছি। একবার তো নর্থ জোন অনূর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেটে আমরা ৬৩-৪, আমি আর অমিত শর্মা নেমে সেঞ্চুরি করেছিলাম। ক্রিকেট এমন একটা খেলা যা আপনার মনের জোর বাড়িয়ে জীবনের জন্য তৈরি করে দেয়। সেই জীবন রাজনীতি হতে পারে। বোর্ড প্রশাসনও হতে পারে।
প্র: কোনটা বেশি কঠিন? সিমিং ট্র্যাকে চারটে উইকেট চলে যাওয়ার পর ব্যাট করতে নামা? নাকি সুপ্রিম কোর্টের জুজু?
অনুরাগ: আমি আশা করব বিসিসিআই যা কন্ট্রিবিউট করেছে, যে ধরনের রিফর্ম এনেছে সেগুলো তাঁরা খেয়াল রাখবেন। আদালত নিশ্চয়ই আমাদের গাইড করবেন। কিন্তু ভাববেন না আমরা হলাম তিরিশ বছর আগের ছাত্র যারা নির্বিচারে অভিভাবকদের মারধর খাবে। ওঁরা যেন ভাবেন, বোর্ডের হাত ধরে গাইড করলে সেটা অনেক আশাব্যঞ্জক হবে।
প্র: একটা কথা বলুন আদালত তো এমনি এমনি বিসিসিআইয়ের সমালোচনা করছে না। নিশ্চয়ই তার পিছনে যথেষ্ট কারণ আছে। সাধারণ লোকেও এমনি এমনি বলছে না। নিজে কি কখনও ভেবে দেখেছেন আপনাদের ভুলগুলো কোথায়?
অনুরাগ: (তিক্ত গলা) বললাম তো সবাই এখন মওকা পেয়ে চওকা-তে ব্যস্ত। পাছে বাউন্ডারি না মারতে পেরে লোকসান হয়ে যায়।
প্র: কিন্তু কোর্টের একটা পর্যবেক্ষণ তো ঠিক যে জাতীয় স্তরে না ছড়িয়ে বিসিসিআই সত্যিই একটা ‘সিলেক্ট ক্লাব’।
অনুরাগ: সিলেক্ট ক্লাব কেন?
প্র: এই যে গোটা দেশ থেকে আপনাদের মাত্র ২৯-৩০ জন মেম্বার। এটাই তো ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা। বাকিদের ঢুকতে না দেওয়া।
অনুরাগ: মানে কী? ইন্ডিয়ান বোর্ডের কি তা হলে তিনশো জন মেম্বার হবে? ক্রিকেট তো এত দেশ খেলে। আইসিসি কেন দশ জন ফুল মেম্বার রেখেছে? আপনাকে তো ফুল মেম্বার হওয়ার জন্য এক-একটা ধাপ পেরোতে হবে। অ্যাসোসিয়েট মেম্বার বলেও তো একটা বস্তু আছে। অ্যাফিলিয়েট মেম্বার বলে একটা ব্যাপার আছে। ফ্রি-লাঞ্চ বলে কিছু হয় না। ও সবের দিন চলে গিয়েছে।
আমি ফুল মেম্বার হতে ইচ্ছুকদের বলতে চাই আপনারা ফ্রি-লাঞ্চ নেবেন না, অর্জন করুন। আফগানিস্তান যদি উঠে আসতে পারে। আয়ার্ল্যান্ড যদি উঠে আসতে পারে। ছত্তীশগঢ় যদি পারে তা হলে অন্যরা পারবে না কেন? এই যে নর্থ-ইস্ট টাকা খরচ করতে পারল না তার জন্য বিসিসিআই-কে দায়ী করব কেন? এটা তো প্লেয়িং টু দ্য গ্যালারি হয়ে গেল। বিসিসিআইয়ের তো কত ক্রেডিটও আছে। কবে প্রেস লিখেছে যে আইপিএল শেষ মুহূর্তে পশ্চিমাঞ্চল থেকে সরানোতেও তারা বিচলিত হয়নি। তারা দেশের বাইরেও আইপিএল করে দেখিয়েছে। কই সেগুলো তো লেখা হয় না। দু’একটা ভুল হলেই সেটা নিয়ে সবাই লাফিয়ে পড়বে?
প্র: নতুন বোর্ড গড়ে তোলার জন্য আপনার প্ল্যানিং কী?
অনুরাগ: আমি চাই গড়পরতা ক্রিকেট ফ্যানের সঙ্গে ভারতীয় ক্রিকেটের আরও প্রত্যক্ষ যোগাযোগ হোক। আমি প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সেই যোগাযোগটাই তৈরি করাচ্ছি। যাতে একটা বাটন টিপে কয়েক হাজার মাইল দূরে বসে থাকা ইন্ডিয়ান ক্রিকেট ফ্যান জানতে পারে কোথায় কী ঘটছে। খেলাটাকে আমি অনুরাগীদের আরও কাছে আনতে চাই। অলরেডি তো টিমের ফেসবুক পেজ আর ক্রিকেটারদের সরাসরি ফেসবুক চ্যাট শুরু হয়ে গিয়েছে।
প্র: কোচ নিয়োগ নিয়ে এত জলঘোলা হচ্ছে কেন? মিডিয়াতে শ’রকম নাম ভাসছে। লোকে বলছে, শাস্ত্রীর সরা শুধু সময়ের অপেক্ষা। বিদেশি এল বলে। আবার কেউ বলছে, শাস্ত্রী থেকে যাবেন।
অনুরাগ: হুঁ। কী বলতে চাইছেন?
প্র: বলতে চাইছি কোচ তাড়ানোর প্রশ্নটা তো তখনই উঠতে পারে যদি টিম খারাপ খেলে। আপনাদের কি মনে হচ্ছে টিম গত ১৮ মাসে খারাপ ক্রিকেট খেলেছে?
অনুরাগ: সবাইকে তো একটা সময়ের পর নতুন নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। এমনকী বোর্ড প্রেসিডেন্টকেও। তাকেও তিন বছরের মেয়াদের মধ্যে নির্বাচনে দাঁড়াতে হয়। সে ভাবে আমরা কোচ আর সাপোর্ট স্টাফের পারফরম্যান্স তাদের চুক্তি শেষ হওয়ার পর রিভিউ করি। আমি নিজে মনে করি শাস্ত্রী এবং তার সহকারীরা গত ১৮ মাসে দারুণ কাজ করেছে। ওদের বিরুদ্ধে আমার কিছু বলার নেই। শুধু আমি বলেছি চাকরিটা পুরো ওপেন করে দাও। অন্যদেরও অ্যাপ্লাই করতে দাও না।
প্র: তাই যদি বলেন, তা হলে ইন্ডিয়ান ফিল্ডিং কোচ শ্রীধরকে রাখা হল না কেন? যাঁকে দারুণ কাজ জানেন বলে টিমের ছেলেরা সার্টিফিকেট দিচ্ছে। তাঁকে জিম্বাবোয়ে পাঠানো হচ্ছে না। বোলিং কোচ ভরত অরুণের অধীনে টিমের সবচেয়ে ভাল বোলিং পারফরম্যান্স। তাঁকে বাদ দেওয়া হল। হঠাৎ সঞ্জয় বাঙ্গার কোচ কেন?
অনুরাগ: সবাইকেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সুযোগ দেওয়া হবে। এরা আইপিএলে কাজ করে করে ক্লান্ত ছিল তাই একটু ব্রেক দেওয়া হল।
প্র: সে তো বাঙ্গারও আইপিএলে ব্যস্ত ছিলেন। তাঁকে পাঠানো হচ্ছে কেন সবাইকে ছেড়ে?
অনুরাগ: দেখুন না পরেরগুলোয় কী হয়। সবাই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আসবে বললাম তো।
প্র: কথা ছিল কোচ আর সাপোর্ট স্টাফ বাছবে বোর্ডের তিন সদস্যের কমিটি। সৌরভদের সেই ভিভিআইপি ক্রিকেট উপদেষ্টা কমিটি। তারাই কি রবি শাস্ত্রী আর তাঁর সহকারীদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে?
অনুরাগ: না ওই কমিটি আর নেই। সৌরভ যে সিএবি প্রেসিডেন্ট হয়ে গেল।
প্র: বিসিসিআই নিয়ে আবার প্রশ্ন করতে চাই।
অনুরাগ: বলুন।
প্র: সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে কতটা ভয় ভয় করছে? আপনি জানেন বিসিসিআই অপদস্থ হলে দেশের একটা বড় অংশ কেমন খুশি হয়ে পড়ে।
অনুরাগ: সেটা খুব দুর্ভাগ্যের যে বিসিসিআই এত করেও মন পায়নি। উল্টে লোকে তাকে বদনাম করে। আর সিচুয়েশনের ভয়-টয় আমার নেই। যে ভাবে পরিস্থিতি এগোবে সে ভাবেই মানিয়ে নেব।
প্র: আপনার সবচেয়ে ফেভারিট ক্রিকেটার কে?
অনুরাগ: আমার অলটাইম ফেভারিট ক্রিকেটার ভিভিয়ান রিচার্ডস। আমার নিজের ওঁর স্টাইলটা মারাত্মক পছন্দ।
প্র: বিপর্যয়ের মধ্যে কি ভিভের মতো অ্যাক্রস খেলবেন?
অনুরাগ: যদি ঠিকমতো টাইম করতে পারি, তা হলে সোজা ব্যাটেই বাইরে পাঠাতে পারব। অ্যাক্রস খেলার দরকার হবে না।