রবির আলোয় বিদেশে সিরিজ জয়ের স্বপ্ন স্বর্ণযুগের স্পিনত্রয়ীর

নৈসর্গিক ও ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যে ভারত মহাসাগর কুলবর্তী এই দ্বীপপুঞ্জের অদ্ভুত একটা মাদকতা আছে। আন্তর্জাতিক রানওয়েতে একটু খোঁজাখুঁজি করলে চোখে পড়ে যেতে পারে আস্ত একটা সি-প্লেন! আবার এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে যদি এক্সপ্রেসওয়ে ধরেন, বিশ্বাস হবে না দেশটা তৃতীয় বিশ্বের বাসিন্দা। বাঁ দিকে সবুজের ‘প্রাচীর’, ডান দিকে ভারত মহাসাগরের অপার্থিব ঢেউ, মধ্যবর্তী হাইওয়েতে স্বচ্ছন্দে বলিউডি গানের শ্যুটিং সেরে নেওয়া যায়।

Advertisement

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়

কলম্বো শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৫ ০৩:২৩
Share:

নৈসর্গিক ও ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যে ভারত মহাসাগর কুলবর্তী এই দ্বীপপুঞ্জের অদ্ভুত একটা মাদকতা আছে। আন্তর্জাতিক রানওয়েতে একটু খোঁজাখুঁজি করলে চোখে পড়ে যেতে পারে আস্ত একটা সি-প্লেন! আবার এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে যদি এক্সপ্রেসওয়ে ধরেন, বিশ্বাস হবে না দেশটা তৃতীয় বিশ্বের বাসিন্দা। বাঁ দিকে সবুজের ‘প্রাচীর’, ডান দিকে ভারত মহাসাগরের অপার্থিব ঢেউ, মধ্যবর্তী হাইওয়েতে স্বচ্ছন্দে বলিউডি গানের শ্যুটিং সেরে নেওয়া যায়।

Advertisement

কলম্বোয় ঢুকলে আবার শান্তির মিঠে আমেজ। মোড় পিছু একটা বুদ্ধ মন্দির। সেখানে উপাসনারত সিংহলি মুখ। শান্তির পটভূমি ছেড়ে এ বার একটু ব্যাঙ্কক-পাটায়ার ছোঁয়া চাই? গল রোডে ঢুকে পড়ুন। ক্যাসিনোর লোভনীয় হাতছানি, নাইটক্লাবের উষ্ণ অভ্যর্থনা, ঝাঁ চকচকে ফুড জয়েন্টের আতিথেয়তা, সব ডাকবে। আর ডাকবে প্রাসাদতুল্য এক অট্টালিকা, কলম্বো-গল রোডের আভিজাত্যের প্রতীক হয়ে যে দাঁড়িয়ে।

ওই অট্টালিকার অধুনা বাসিন্দা যারা, তাদের বর্তমান অবস্থান এলাকাটার মতোই চোখ-ধাঁধানো। মেজাজ পার্শ্ববর্তী সমুদ্রের হাওয়ার মতো ফুরফুরে। দ্বীপপুঞ্জে বাইশ বছরের অভিশাপ কাটাতে এসে প্রথমেই অভিশপ্ত হারের মুখে পড়তে হয়েছিল। কিন্তু গলের বিধ্বস্ত স্বাধীনতা দিবসের দুপুর আর পি সারা ওভালে তাদের তাড়া করেনি। বরং উপহার দিয়েছে স্মরণীয় টেস্ট জয়, ব্যবধানের বিশালত্বে যা ইতিহাসে থেকে যাবে। এবং সৃষ্টি করেছে সেই সম্ভাবনা যা বিগত দু’যুগে লঙ্কারাজ্যে কোনও ভারত অধিনায়ক বাস্তবরূপ দিয়ে ফিরতে পারেননি। সৌরভ, কুম্বলে, ধোনি কেউ না।

Advertisement

গল রোডের অট্টালিকাকে ক্রিকেটপ্রেমীদের চিনতে অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। বাসিন্দাদেরও নয়। ওটা তাজ সমুদ্র হোটেল। কলম্বোয় ভারতীয় ক্রিকেট টিমের ঠিকানা।

রবিচন্দ্রন অশ্বিনদের ঠিকানা।

ভারতীয় অফস্পিনারের নাম বিশেষ উল্লেখের কারণ আছে। ভারতবাসী তো বটেই, ভারতীয় ক্রিকেটের স্পিন-স্বর্ণযুগের ত্রয়ী মনে করেন, পারলে অশ্বিনের স্পিনই পারবে দেশকে লঙ্কারাজ্য থেকে টেস্ট সিরিজ জিতিয়ে ফিরিয়ে আনতে। এঁরা পঞ্জাবের বিষেণ, কর্নাটকের চন্দ্র-প্রসন্ন। যাঁদের কেউ কেউ আনন্দবাজারকে ফোনে ভারত থেকে বলে দিলেন, এমন ‘অভিভাবকহীন’ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অশ্বিনের স্পিন টেস্ট সিরিজ জিতিয়ে না ফিরতে পারলে সেটা অবাক নয়, ঘোরতর আশ্চর্যের ব্যাপার হবে।

বেদী বরাবরই সোজাসাপ্টা, কাঠকাঠ। কোনও কিছু নিয়ে ঊর্ধ্ববাহু হওয়া ধাতে নেই। পরিষ্কার বলে দিলেন, “শ্রীলঙ্কার যা অবস্থা তাতে তৃতীয় টেস্ট পর্যন্ত ব্যাপারটা গড়াচ্ছে কী ভাবে, সেটাই আমার কাছে বেশি ইন্টারেস্টিং। যাই হোক, যা মনে হচ্ছে এটায় ভারত জিতবে। অশ্বিনকে ওরা আর ম্যানেজ করতে পারবে না।”

বিষেন সিংহ বেদী ও এরাপল্লি প্রসন্ন দু’জনেরই মনে হচ্ছে, বোলিং থেকে অযাচিত ‘কারুকার্য’ বিসর্জন দেওয়ায় রূপান্তর ঘটেছে তামিলনাড়ু অফস্পিনারের। গত বছর ভারতীয় টিম থেকে আচমকা বাইরে চলে যাওয়া, সেটাও পরোক্ষে বার করে এনেছে নতুন অশ্বিনকে। প্রসন্ন বলছিলেন, “এখন ও স্টক বলটা বেশি ব্যবহার করছে। বেশি বৈচিত্রের দিকে যাচ্ছে না। আগে ওকে খুব ডিফেন্সিভ লাগত আমার। টিমের সেরা স্পিনার সেটা কেন করবে? এখন সেটা ছেড়েছে। টিমকেও জেতাচ্ছে। শেষ টেস্টাও যা দেখছি, ভারতেরই।”

বেদী সমাপ্তিটা করে দিলেন। বললেন, “সোজা কথায়, দেখনদারিটা বাদ গিয়েছে। যেগুলো রাবিশ ছাড়া আর কিছু ছিল না! ক্যারম বল, দুসরা, ও সব দিয়ে কত দূর হবে? তবে মিডিয়া দেখছি বলছে যে, ও নাকি টিমে কুম্বলের জায়গাটা নিয়েছে। ও সবে ঢুকব না। সবার কাছেই আকাশ ছোঁয়ার সুযোগ থাকে। পারলে ছোঁবে।”

ভগবত চন্দ্রশেখর খোঁচাখুঁচির লোক নন। মিডিয়ায় বিবৃতি দেওয়া দূরের ব্যাপার, প্রতিক্রিয়া দিতেও কেমন যেন কুণ্ঠা বোধ করেন। ক্রিকেট খুব একটা আর দেখেনও না এখন। বিস্তর অনুরোধ-উপরোধের পর চন্দ্র শুধু বললেন, “ওভাল টেস্ট খুব অল্প দেখেছি। যতটুকু দেখেছি, আমার মনে হয়েছে ও খুব বড় স্পিনার। যার মধ্যে সম্ভাবনা আছে আরও বড় স্পিনার হয়ে ক্রিকেটজীবন শেষ করার।”

যাঁকে নিয়ে স্বর্ণযুগের ত্রয়ীর এত চর্চা, এত বিশ্লেষণ, সেটা তাঁর কানে গেল কি না, কে জানে। সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে আজ প্র্যাকটিস করল ভারতীয় টিম এবং সেখানে খবর বলতে গোটা আড়াই। ঋদ্ধিমান সাহা ও মুরলী বিজয়ের বদলি হিসেবে যথাক্রমে নমন ওঝা এবং করুণ নায়ারের আগমন ও মাঠে নেমে পড়া। দু’জনকে এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনেও পাঠিয়ে দেওয়া হল। আপাতত যা ঠিক, বিজয়ের জায়গায় এলেও সম্ভবত সিরিজ নির্ণায়ক টেস্টে নামা হচ্ছে না নায়ারের। চেতেশ্বর পূজারা সম্ভবত ওপেন করবেন কেএল রাহুলের সঙ্গে। আর ঋদ্ধিমানের জায়গায় সম্ভবত নমন। ঘরোয়া ক্রিকেটে বহু দিন ধরে পারফর্ম করলেও যাঁর ডাক পেতে পেতে এত দিন লেগে গেল। অপ্রত্যাশিত ডাকে নমন কতটা উত্‌সাহী, কথাবার্তায় ধরাও পড়ল।

শুধু একটা ব্যাপার ধরা গেল না। এবং সেটাই তৃতীয় খবর। এ দিন প্র্যাকটিস শুরুর সময় যাঁকে নিয়ে পড়ে থাকলেন টিম ডিরেক্টর রবি শাস্ত্রী এবং বোলিং কোচ ভরত অরুণ। কখনও আলোচনা, কখনও কঠোর অনুশীলন। তাঁর স্লটটা নিয়ে নাকি এখনও ধোঁয়াশা আছে। তিনি না স্টুয়ার্ট বিনি, এখনও নাকি নিশ্চিত নয়।

ইনি, হরভজন সিংহ। নামের পাশে চারশো টেস্ট উইকেট আছে। কিন্তু কোনও এক নতুন রবির ক্রমবর্ধমান তেজে ভারতীয় স্পিনের পুরাতনের পড়ে থাকা কয়েকটা বছরকে বড় বিবর্ণ, বড় ট্র্যাজিক দেখাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন