ভারতীয় হকির চার অলিম্পিয়ান। বাঁ দিক থেকে দীপক ঠাকুর, বলজিৎ সিংহ সাইনি, প্রভজ্যোৎ সিংহ ও ভিআর রঘুনাথ।
শুধু দীপক ঠাকুর নন এই তালিকাটা বেশ লম্বা। সবাই একটাই কথা বলছেন, ‘‘এ ভাবে খেলা যায় না। এখনই বন্ধ করে দেওয়া উচিত বেটন কাপ।’’ এটা নতুন কিছু নয়। প্রতিবারই দেশের সেরা তারকা হকি প্লেয়াররা এসে এই একই কথা বলেন। কিন্তু চিত্রটা বদলায় না। বদলায় না মাঠের হাল, বদলায় না বাকি সব কিছুই। তার মধ্যেই দেশের প্রাচীনতম টুর্নামেন্ট কোনওরকমে ধুকে ধুকে চলছে। এ বার যেন আরও বিস্ফোরক দীপক ঠাকুর, প্রভজ্যোৎ সিংহ, রঘুনাথরা। ম্যাচ খেলে সবে উঠেছেন। প্যান্ডেলের রিজার্ভ বেঞ্চ সঙ্গে প্লাস্টিকের চেয়ার। ক্লান্ত কিন্তু বিস্ফোরক দীপক ঠাকুর। দেখেই বলে উঠলে, ‘‘এই টুর্নামেন্টটা এ বার বন্ধ করে দেওয়া উচিত।’’ দীপকের মুখে কথা কেড়ে নিয়ে বিরক্ত ভিআর রঘুনাথ বলেন, ‘‘এটা খেলার গ্রাউন্ড হল কোনও? টার্ফ দেখুন। একটা ড্রেসিংরুম নেই, মাঠের মাঝখানে দাঁড়িয়ে জার্সি বদলাতে হচ্ছে। এখানে এত বড় বড় প্লেয়াররা খেলতে এসেছে। তাঁদের কোনও মর্যাদা নেই?’’
আরও খবর: ১৫ বছর পর জুনিয়র হকি বিশ্বকাপ ভারতের
এতটাই বিরক্ত সকলে যে প্রথমে মাঠে এসে মনে হয়েছিল ফিরে যাবেন। খেলবেন না জানিয়ে দেবেন। কিন্তু অফিস এত টাকা খরচ করে পাঠিয়েছে খেলতেই হবে। মাঠের চারদিকে ড্রেনের উপর কাঠের পাটাতন এতটাই পচে গিয়েছে যে পা দিলেই ভেঙে পড়ছে। মঙ্গলবার অনুশীলনে এসে ওই গর্তে পা পড়ে আহত হয়েছেন ইন্ডিয়ান অয়েলের এক প্লেয়ার। এতটাই আতঙ্কিত সবাই যে কেউ ওদিকে গেলেই প্লেয়াররা সাবধান করছে। এমনিতে সব সময় মজার মুডেই থাকেন দেশের আর এক অলিম্পিয়ান প্রভজ্যোৎ সিংহ। তবে এ বার খেলতে এসে তিনিও বেজায় বিরক্ত। বলেন, ‘‘এত বছর ধরে আসছি, সত্যি কোনও উন্নতি নেই। ইচ্ছেও নেই।’’ দীপক ঠাকুর বন্ধুর পাশে বসেই প্রশ্ন তুলে দিলেন হকি ইন্ডিয়ার ভূমিকা নিয়েও। ‘‘হকি ইন্ডিয়া কেন দেখে না কী ভাবে টুর্নামেন্টগুলো চলছে। বেঙ্গল হকি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কোথায়? ভেন্যুতে নেই কেন?’’ প্রশ্ন তুলে দিলেন স্বয়ং দীপক ঠাকুর।
সাইয়ের মাঠে চলছে বেটন কাপের ম্যাচ।
ভারতীয় হকিতে প্রতিবাদী বলেই পরিচিত বা সমালোচিত দীপক ঠাকুর। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সব সময়ই মুখ খুলে এসেছেন। ছাড়েননি হকি ইন্ডিয়াকেও। তাঁর মুখেই এ বার বেটন তুলে দেওয়ার দাবী। ভিআর রঘুনাথ তো তুলনা করছিলেন দেশের সব টুর্নামেন্টের সঙ্গে। সারা দেশে একাধিক টুর্নামেন্ট হয় সারা বছর ধরে। কোনওটাই নাকি এতটা নিম্ন মানের নয়। এমন চলতে থাকলে সত্যি ভবিষ্যতে এই নামী প্লেয়ারদের আর দেখা যাবে তো ঐতিহ্যশালী এই টুর্নামেন্টে? বাংলার হকির এটাই তো একমাত্র বেঁচে থাকার খড়কুটো। না হলে ডুবে যেতে আর বাকি কী আছে। দীর্ঘদিন ধরে শোনা যাচ্ছে যুবভারতী স্টেডিয়ামের ভিতরে একটা জায়গা দেওয়া হয়েছে হকির টার্ফ বসানোর জন্য। কিন্তু সেটা এখনও হয়ে ওঠেনি। কবে হবে তারও কোনও ঠিক নেই। অনূর্ধ্ব-১৭ ফুটবল বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পর যদি হয়। তবুও না হওয়া পর্যন্ত বিশ্বাস নেই।
নিজস্ব চিত্র।