সন্তোষ ট্রফি

তীর্থঙ্করদের আলোয় ট্রফির সামনে বাংলা

মোহনবাগানে সই করেও ময়দানের অন্যতম প্রতিশ্রুতিমান তীর্থঙ্কর হঠাৎ হারিয়ে গিয়েছিলেন। এ বারের বাংলা দলে অবশ্য তিনিই হয়ে উঠেছেন প্রধান চালিকাশক্তি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৮ ০৩:৫৮
Share:

দুরন্ত: যন্ত্রণা ভুলে ফের মাঠে সঞ্চয়ন। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

বাংলা ২ : কর্নাটক ০

Advertisement

অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরা দুই ফুটবলারের জ্যোতিতে সন্তোষ ট্রফি জয়ের মুখে এসে দাঁড়াল বাংলা।

নিয়মিত লিয়োনেল মেসির ফ্রি কিক দেখাটা তীর্থঙ্কর সরকারের তুকতাক বা অভ্যাস। মাঠে আসার আগে শুক্রবারও তা দেখে এসেছিলেন বাংলার মিডিও।

Advertisement

পড়ন্ত বিকেলে সেই তীর্থঙ্করের বাঁ পা থেকে বেরোল পঁচিশ গজের বাঁকানো শট। যা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আছড়ে পড়ল কর্নাটকের গোলে। গোলটা এত অসাধারণ হল যে শ্যাম থাপা থেকে প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, মানস ভট্টাচার্য থেকে বিদেশি বসু, লক্ষ্মীরতন শুক্ল থেকে শান্তি মল্লিক সবাই মোহিত। আপ্লুত।

মোহনবাগানে সই করেও ময়দানের অন্যতম প্রতিশ্রুতিমান তীর্থঙ্কর হঠাৎ হারিয়ে গিয়েছিলেন। এ বারের বাংলা দলে অবশ্য তিনিই হয়ে উঠেছেন প্রধান চালিকাশক্তি। টিমকে ফাইনালে তোলার পর তীর্থঙ্কর বলছিলেন, ‘‘এ রকম গোল আগেও করেছি। তবে গুরুত্বের বিচারে এটাই সেরা।’’

তীর্থঙ্কর যদি এ দিনের বাংলা টিমে রামধনু হন, তা হলে দুর্ভাগ্যের আঁধার সরিয়ে সঞ্চয়ন সমাদ্দার যেন উদিত সূর্য। এ দিন তীব্র চাপের মুখেও গতবারের চ্যাম্পিয়নরা যে ঘুরে দাঁড়াল, তার অনেকটাই সঞ্চয়নের জন্য।

বেহালার সঞ্চয়নের জীবন নিয়ে কবিতা হতে পারে। হতে পারে একটা ছোট গল্প। পাঁচ বছর আগে যখন পুণে এফ সি-র জুনিয়র টিমে খেলতে যাবেন বলে ঠিক করেছেন, তখনই হঠাৎ-ই মারা যান তাঁর মা। আর গত বছর যে দিন কলকাতা লিগের দল কাস্টমসে সই করেন, সে দিনই বাড়ি ফিরে দেখেন মর্মান্তিক দৃশ্য। দেনার দায়ে ডুবে যাওয়া বাবা আত্মঘাতী হয়েছেন। বাড়ি বন্ধক দিয়ে পেশায় হকার সঞ্চয়নের বাবা ব্যবসা করতে গিয়ে দেনায় ডুবেছিলেন। এখন স্কুলে পড়াশুনা করা ভাইকে নিয়ে একা থাকেন সঞ্চয়ন। আর প্রতি দিন বেঁচে থাকার জীবন যুদ্ধে লড়তে লড়তে স্বপ্ন দেখেন একটা চাকরির। বড় ক্লাবে খেলার। বলছিলেন, ‘‘চ্যাম্পিয়ন হতেই হবে। তা হলে একটা চাকরির সুযোগ আসতে পারে। বন্ধকের বাড়িটাও ছাড়াতে হবে। ভাইকে পড়াশুনা করাতে পারব। সেই স্বপ্নপূরণের জন্যই সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করছি।’’

এ রকম আলো, স্বপ্ন আর আশার মিশেলের জোরেই কর্নাটকের বিরুদ্ধে জিতে ফাইনালে উঠল বাংলা। মুখোমুখি হল কেরলের। কেরল এ দিন এক গোলে হারাল মিজোরামকে। হাওড়া স্টেডিয়ামে বিরতিতে ম্যাচ গোলশূন্য রেখে বেরোনোর সময় বাংলার জিতেন মুর্মু-দের দেখে মনে হচ্ছিল শক্তিশালী কর্নাটককে হারানোর জেদটাই যেন নেই। কিন্তু বাংলার কোচ রঞ্জন চৌধুরীর করা একটা পরিবর্তনই ম্যাচের রং বদলে দিল। কৃষ্ণ বিশ্বাসের জায়গায় সঞ্চয়নকে নামানোর সঙ্গে সঙ্গেই বাংলা বদলে গেল। সঞ্চয়ন আর তীর্থঙ্কর মাঝমাঠ শাসন করা শুরু তখন থেকেই। আর লেফট ব্যাকে ফিরে অঙ্কিত মুখোপাধ্যায় থামিয়ে দেন কর্নাটকের ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা উইং মিডিও লিয়ো অগাস্টিনকে। এতেই কেল্লাফতে। সুমিত দাসের বাঁ প্রান্তের একটা লম্বা দৌড় ছিন্নভিন্ন করে দেয় কর্নাটককে। তাঁর বাড়ানো বল থেকেই জিতেন মুর্মু-র গোল। এর পর তীর্থঙ্করের ফ্রি-কিকের গোল।

তীব্র গরমেও প্রথমার্ধটা ছিল কর্নাটকের। এগিয়েও যেতে পারত তারা। কিন্তু বাংলার দুই স্টপার সৌরভ দাশগুপ্ত ও প্রসেনজিৎ পাল-এর যুগলবন্দি দক্ষিণী দলটির সব আক্রমণই রুখে দিল। ম্যাচের পর বাংলা কোচ বললেন, ‘‘রক্ষণটা মজবুত করে আক্রমণে যাওয়াই ছিল লক্ষ্য। অনুশীলনটা কাজে লেগেছে।’’

রবিবার যুবভারতীতে ফাইনাল। দেখার, তেত্রিশ বারের জন্য আইএফএ অফিসে ট্রফি আসে কী না?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন