স্যালুট: ইডেনে অনুশীলনে খোশমেজাজে ঋদ্ধিমান সাহা। নিজস্ব চিত্র
সাড়ে চব্বিশ মাস পরে যে ইডেনে ফিরছে বাংলার রঞ্জি দল, সেই আবেগের ছিটেফোঁটাও নেই। বরং ইডেনের বাতাসে যেন বারুদের গন্ধ।
এক শিবির থেকে হুঙ্কার ভেসে আসছে, ‘‘আমাদের মহম্মদ শামি, অশোক ডিন্ডা আছে। সবুজ উইকেট আছে। ব্যাটসম্যানরা ফর্মের তুঙ্গে। তোমাদের কী আছে?’’
অন্য শিবিরের পাল্টা হুঙ্কার, ‘‘আমাদেরও ট্রিপল সেঞ্চুরি হাঁকানো প্রশান্ত চোপড়া আছে। আরও চারটে সেঞ্চুরি আছে। সবুজ উইকেটে আমরাও খেলে থাকি। আমাদের ভয় দেখিও না।’’
বাংলা ও হিমাচল প্রদেশ রঞ্জি দ্বৈরথে নামার আগের দিন ইডেনে এমনই যুদ্ধ-যুদ্ধ ভাব। দুই দলের ক্রিকেটার, কোচেদের কথায় একে অপরকে দেখে নেওয়ার ইঙ্গিত। একটা হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে যা যা উপাদান থাকা দরকার, তার সবই মজুত ক্রিকেটের নন্দনকাননে। এই যুদ্ধের রেশ মাঠেও থাকলে বলা যায়, আগামী চার দিন উপভোগ্য ম্যাচ দেখতে চলেছে ইডেন।
আরও পড়ুন: সহবাগকে সম্মান দিতে গিয়ে ঐতিহাসিক ভুল
এ বার রঞ্জি ট্রফির সর্বশেষ গ্রুপে বাংলা। সেখানে এখন হিমাচল ও বাংলাই প্রথম দুইয়ে। অর্থাৎ লড়াইটা গ্রুপের শীর্ষস্থান দখলের। তাই হয়তো উত্তপ্ত আবহাওয়া রয়েছে। এক দিকে, বাংলা দু’টো ম্যাচে পাঁচশোর উপর রান তুলে এসেছে। চার ইনিংসে ৩৭ উইকেট ফেলেছে। অন্য দিকে, হিমাচল কোনও ম্যাচে সাতশোর উপর রান করেছে তো কোনও ম্যাচে ছ’শোর উপর। কে কাকে দেখে নেবে, সেটা আগামী চার দিন ধরে ইডেনেই ঠিক হবে।
মাঠে নামার জন্য ছটফট করছেন অশোক ডিন্ডা। যিনি রায়পুরে পাটা উইকেটেও দুই ইনিংসে দশ উইকেট নিয়েছেন। শামি ও তাঁর জন্য সেখানে এক সময় ন’জন স্লিপ ফিল্ডার রাখতে হয়েছিল। সে রকমই বিধ্বংসী মেজাজ দেখাতে চান ডিন্ডা। তবে নিজে নয়, তাঁর বলই কথা বলুক, চান নৈছনপুর এক্সপ্রেস।
বাংলার দুই পেসারকে এ দিন নেটে আগলেই রাখা হল। বেশি পরিশ্রম করতে দেওয়া হল না। যাতে তাজা হয়ে আজ মাঠে নামতে পারেন তাঁরা। বাংলা শিবিরে পেসার কণিষ্ক শেঠ ও পেসার-অলরাউন্ডার বি অমিতকে নিয়ে নামার ভাবনা রয়েছে। আগের ম্যাচে ওপেন করতে নেমে সেঞ্চুরি করা কৌশিক ঘোষকে প্রথম এগারোয় দেখা গেলেও ওপেন করবেন না হয়তো।
মঙ্গলবার নেটের পরে ইডেনে বাংলার অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারি বলে দিলেন, ‘‘সবুজ উইকেটে আমরা চার পেসারে খেলার কথা ভাবছি। আমাদের পেস আক্রমণ ওদের চেয়ে অনেক ভাল। ওদের ব্যাটিং আমরা পেসার দিয়েই থামাব।’’ হিমাচলের কোচ বিক্রম রাঠৌরের পাল্টা হুঙ্কার, ‘‘আমাদের সবুজ উইকেট দেখিয়ে ভয় দেখানো যাবে না। এমন উইকেটে আমরা হোম ম্যাচ খেলি। এখানে আমরা হোম ম্যাচের মতোই উইকেট দেখতে পাচ্ছি।’’
দলের সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান প্রশান্ত চোপড়া, যিনি এ বার রঞ্জির প্রথম ম্যাচেই ঘরের মাঠে ৩৩৮-এর একটা ইনিংস হাঁকিয়ে এসেছেন, তিনি বলছেন, ‘‘ট্রিপল সেঞ্চুরির ম্যাচেও এ রকমই সবুজ উইকেট ছিল। এ রকম উইকেটে পেসারদের সামলে কী করে বড় ইনিংস খেলতে হয়, জানা আছে আমার। কে শামি, কে ডিন্ডা ও সব ভেবে চাপ বাড়াতে চাই না। সেরা খেলাটাই খেলতে চাই।’’
বঙ্গ পেসার মহম্মদ শামির বক্তব্যেও ঝাঁঝ, ‘‘সবুজ উইকেটে ব্যাটসম্যানদের জীবন কঠিন করে তোলাই পেসারদের কাজ। আমারও সেই চেষ্টাই থাকবে।’’ হিমাচল অলরাউন্ডার ঋষি ধবন পাল্টা বলছেন, ‘‘আমি তো কেকেআরে খেলেছি। ইডেনের উইকেট চেনা। আমাদের পেসাররাও যে খারাপ নয়, তা এই ম্যাচেই প্রমাণ করতে চাই।’’
শেষে রাঠৌরের রায়, ‘‘ম্যাচটা ৬ পয়েন্টের। আর এটা আমাদের ব্যাটসম্যান আর ওদের বোলারদের মধ্যে লড়াই।’’ মনোজ আবার বলছেন, ‘‘এই পিচে কুড়ি উইকেট নিতে পারবে যে দলের বোলাররা, তারাই ম্যাচ জিতবে। সে দিক থেকে আমরাই এগিয়ে।’’ বুধবার ইডেনে প্রথম বল পড়ার চব্বিশ ঘণ্টা আগে থেকেই যেন ম্যাচটা শুরু হয়ে গেল।