প্রজ্ঞানের স্পিনে ভাঙল যুবরাজদের মিডল অর্ডার

শেষ বেলায় অয়ন-ফাটকায় বাংলার ছ’পয়েন্ট

দিনের আলো যে ভাবে কমে আসছিল, তাতে আর বড়জোর দু’ওভার খেলা হত হয়তো। পঞ্জাবের শেষ উইকেট জুটি যেমন এক দিকে ম্যাচ বাঁচিয়ে এক পয়েন্ট পাওয়ার জন্য মরিয়া, তেমনই বাংলাও শেষ উইকেটটা তোলার জন্য পাগল। দলের প্রধান বোলারদের দিয়ে বল করিয়েও কিছু হচ্ছে না দেখে বাংলার ক্যাপ্টেন মনোজ তিওয়ারি নবাগত অলরাউন্ডার অয়ন ভট্টাচার্যর হাতে বল তুলে দেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৬ ০৪:০৮
Share:

প্রজ্ঞান: দ্বিতীয় ইনিংসে যুবরাজ-সহ চার উইকেট।

দিনের আলো যে ভাবে কমে আসছিল, তাতে আর বড়জোর দু’ওভার খেলা হত হয়তো। পঞ্জাবের শেষ উইকেট জুটি যেমন এক দিকে ম্যাচ বাঁচিয়ে এক পয়েন্ট পাওয়ার জন্য মরিয়া, তেমনই বাংলাও শেষ উইকেটটা তোলার জন্য পাগল।

Advertisement

দলের প্রধান বোলারদের দিয়ে বল করিয়েও কিছু হচ্ছে না দেখে বাংলার ক্যাপ্টেন মনোজ তিওয়ারি নবাগত অলরাউন্ডার অয়ন ভট্টাচার্যর হাতে বল তুলে দেন। এটাই প্রথম রঞ্জি ম্যাচ যাঁর। প্রথম ইনিংসে যে ১৫ ওভারে ৬০ রান দিয়েছে তাকে ওই সময়ে বল করানোর ঝুঁকিটা নিয়েই নিলেন মনোজ। আগেও অয়ন চার ওভার বল করেন। তাতে কিছু করতে না পারার পরও পড়ন্ত বিকেলে পাঁচ নম্বর ওভারটা তাঁকে করতে দিলেন ক্যাপ্টেন। অশোক দিন্দা ওই ওভারে বল করতে চাওয়া সত্ত্বেও। আর সেই ওভারেই এক বাউন্সারে অয়ন বোকা বানালেন মনপ্রীত গোনিকে।

অয়নের বাউন্সার পুল করতে গিয়ে গোনির ব্যাটের কানায় লেগে উঠে যায় আকাশে। নেমে আসে উইকেটকিপার শ্রীবৎসের গ্লাভসে। পঞ্জাবের বিপজ্জনক শেষ জুটি শেষ। যুবরাজ সিংহের পঞ্জাবকে ১১৫ রানে হারিয়ে ছ’পয়েন্ট চলে এল বাংলার খাতায়।

Advertisement

ম্যাচের শেষ বিকেলের ঘটনাটার কথা বলতে গিয়ে উত্তেজনায় প্রায় কাঁপছিলেন অধিনায়ক মনোজ। ফোনের এপার থেকেও তাঁর গলা শুনে বেশ বোঝা যাচ্ছিল সেটা। বললেন, ‘‘চাপ তো আমার চিরসঙ্গী। এই ম্যাচেও বরাবরই চাপ ছিল। কিন্তু শেষ দিকে দিন্দা, ওঝারাও যখন শেষ উইকেটটা পাচ্ছিল না, তখন আমার মন বলছিল, অয়নকে বল দিলে কাজ হতে পারে। কারণ, নিয়মিত বোলারদের যখন ওরা সামলে নিচ্ছে, তখন বোলার চেঞ্জ করলে তার এফেক্ট পড়বেই। তাই ঝুঁকিটা নিয়েই নিলাম। ওই ওভারটা দিন্দা করতে চাইলেও আমি অয়নকেই বল দিই।’’ আর এই সিদ্ধান্তেই কেল্লা ফতে। গোনিকে ফিরিয়ে দিয়ে জয়। সারা ম্যাচে সবচেয়ে দরকারি উইকেটটা নিয়ে নায়ক হয়ে ওঠা অয়ন রাতে বিলাসপুর থেকে ফোনে বলছিলেন, ‘‘মনোজদা ভরসা করে যখন বলটা দিল, তখন মনে হল কিছু একটা করতেই হবে আমাকে। মনোজদাকে জিজ্ঞেস করেই বাউন্সারটা দিয়েছিলাম। যাতে গোনি সেটা ওড়াতে গিয়ে ক্যাচ দেয়।’’

গত দু’মরসুমে রঞ্জির অ্যাওয়ে ম্যাচে বাংলার জয় ছিল না। ’১৩-’১৪ মরসুমে সেই চিপকের ‘খোঁয়াড়’ উইকেটে চার রানে তামিলনাড়ুকে হারিয়েছিলেন লক্ষ্মীরতন শুক্লরা। সেই শেষ। এ বার জয় এল হিমাচলের মাঠে। পঞ্জাবের বিরুদ্ধে, অচেনা পরিবেশে। মরসুম শুরুর আগে এই অচেনা পরিবেশে ভাল খেলা নিয়ে বাংলা শিবিরে দুশ্চিন্তা থাকলেও এখন আর ততটা নেই বলেই জানালেন কোচ সাইরাজ বাহুতুলে। বললেন, ‘‘দল যে নিরপেক্ষ ভেনুতে খেলার জন্য তৈরি, তা তো বুঝতেই পারছেন। এই চ্যালেঞ্জিং কন্ডিশনে যদি আমরা পঞ্জাবের মতো টিমকে হারাতে পারি, তা হলে যে কোনও কন্ডিশনেই ভাল খেলবে আমাদের ছেলেরা।’’

রবিবার সকালে ব্যাট করতে নেমে আট রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেন মনোজ। সন্দীপ শর্মার বলে তিনি কট বিহাইন্ড হওয়ার পরই বাংলার ইনিংস শেষ হয়ে যায়। তখনই অবশ্য ৩৫৯ রানের লিড নেওয়া হয়ে গিয়েছে বাংলার। সকালে তারা প্রায় বারো ওভার ব্যাট করার পর পঞ্জাব ব্যাটিংয়ে নামে। ওপেনিং জুটি একশো তোলায় বোলাররা চাপে পড়ে গেলেও ১২ রানের মধ্যে তিন উইকেট পড়ায় সেই চাপ কিছুটা কাটে। প্রথম ইনিংসের দুই সেরা শিকারি অশোক দিন্দা ও অমিত কুইলা ছাড়াও এই ইনিংসে জ্বলে ওঠেন প্রজ্ঞান ওঝাও (৪-৭০)। যুবরাজের (২৬) স্টাম্প যেমন ছিটকে দেন তিনি। তেমনই একশো রানের ওপেনিং জুটিও তিনিই ভাঙেন। ফের ছ’রানের মধ্যে চার উইকেট পড়ে পঞ্জাবের। কিন্তু গোনি ও সিদ্ধার্থ কলের ৫৫-র শেষ উইকেট পার্টনারশিপই বাংলার নাভিশ্বাস তুলে দেয়। সেই জুটি ভেঙেই দলকে জেতান অয়ন। বলছিলেন, ‘‘আমরা খালি আকাশের দিকে তাকাচ্ছিলাম। আকাশে সূর্য রয়েছে কি না, সেটাই দেখছিলাম বারবার।’’

আর মনোজ বললেন, ‘‘দলের অল রাউন্ড পারফরম্যান্সে জিতলাম। তবে বেশি কৃতিত্ব বোলারদের। দিন্দা, কুইলা, ওঝা সবাই নিজেদের নিংড়ে দিয়েছে। চার দিনের ম্যাচে কুড়িটা উইকেট ফেলা মোটেই সোজা নয়। তা ছাড়া সিদ্ধান্তগুলোও খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেটা আমরা ঠিক মতো নিতে পেরেছি বলেই ম্যাচটা জিততে পারলাম।’’

দুর্গাপুরের সায়নশেখর মণ্ডল, মেদিনীপুরের কুইলা, অগ্নিভ পান, কালীঘাটের অয়ন— জেলা ও শহর থেকে উঠে আসা নতুন ছেলেরা যে ক্রমশ পরিণত হয়ে উঠছেন, বাংলার এই মরসুমের প্রথম কয়েকটা ম্যাচই তার প্রমাণ। বাংলার এই নতুন প্রজন্মের দলের প্রতি দায়বদ্ধতা দেখে খুবই আশাবাদী মনোজ। বলছেন, ‘‘এ বার মরসুমের শুরু থেকেই এরা প্রত্যেকেই এত সিরিয়াস যে, দেখে ভাল লাগছে। বাংলার হয়ে রঞ্জি ট্রফি খেলাটা যে বড় ব্যাপার, তার জন্য যে নিজেদের সেরাটা দেওয়া উচিত, সেটাই উপলব্ধি করতে পারছে এরা। আশা করি, এ বার আরও বেশি ম্যাচ জিতে নক আউটে যেতে পারব।’’

লিগ টেবিলে বাংলা এখন ন’পয়েন্ট নিয়ে তিনে। এ বার নতুন গন্তব্য ধর্মশালা। প্রতিপক্ষ রেলওয়েজ। সোমবার বাসে পাঁচ ঘণ্টার যাত্রা। আর এক শৈলশহরে মনোজরা পাবেন টেস্ট তারকা ঋদ্ধিমান সাহাকেও। ‘‘হাই কনফিডেন্স লেভেল আর ঋদ্ধি মিলে আমরা নিশ্চয়ই ওখানে আরও ভাল খেলব। জয়ের চেষ্টাও করব’’, বললেন আত্মবিশ্বাসী ক্যাপ্টেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন