অসম রূপকথা থামানোর চ্যালেঞ্জ নিয়ে নামছে বাংলা

ধর্মশালার পর বর্ষাপাড়া। পাহাড়ের কোলে আর এক স্টেডিয়াম। ব্যাকগ্রাউন্ডে যেমন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ‘কালাপাহাড়’, তেমনই পাহাড়প্রমাণ চাপ নিয়ে সোমবার থেকে মাঠে নামছে দুই দল— অসম আর বাংলা। যারা হারবে বা পিছিয়ে থাকবে, তাদের ছিটকে যেতে হতে পারে রঞ্জি নক আউটের দৌড় থেকে। তাই ‘কালাপাহাড়’ যেন এই ম্যাচেরই প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে।

Advertisement

রাজীব ঘোষ

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৫ ০২:৫৯
Share:

সাফল্যের প্রার্থনায় কামাখ্যা মন্দিরে লক্ষ্মী-রণদেবরা। (ডান দিকে) অস্ত্রে শান ওঝার।

ধর্মশালার পর বর্ষাপাড়া। পাহাড়ের কোলে আর এক স্টেডিয়াম।

Advertisement

ব্যাকগ্রাউন্ডে যেমন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ‘কালাপাহাড়’, তেমনই পাহাড়প্রমাণ চাপ নিয়ে সোমবার থেকে মাঠে নামছে দুই দল— অসম আর বাংলা। যারা হারবে বা পিছিয়ে থাকবে, তাদের ছিটকে যেতে হতে পারে রঞ্জি নক আউটের দৌড় থেকে।

তাই ‘কালাপাহাড়’ যেন এই ম্যাচেরই প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে।

Advertisement

সোমবার সকালে গুয়াহাটি শহরের প্রাণকেন্দ্রের বেশ কিছুটা দূরে নতুন এই স্টেডিয়ামের প্র্যাকটিস এরিনায় গিয়ে দেখা গেল নেটে ব্যাট হাতে প্রজ্ঞান ওঝাকে তুলে তুলে মারছেন লক্ষ্মীরতন শুক্ল। বহু দিন পর বাংলার নেটে তিনি। মনের ভিতরের জ্বালা ও খিদে, দুটোই যেন তাঁর ব্যাটে ফুটে উঠছিল সমানে।

নেট থেকে বেরিয়ে ড্রেসিংরুমে যেতে যেতে লক্ষ্মী বললেন, ‘‘বহু দিন পর বাংলার নেটে নেমে খুব ভাল লাগছে।’’ চোখে-মুখে তৃপ্তির ছাপ স্পষ্ট। মঙ্গলবার থেকে হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচ জিতে নক আউটে যাওয়া যেমন বাংলার লক্ষ্য, তেমনই তাঁরও তো বড় পরীক্ষা। প্রত্যাবর্তনে ফের চেনা লক্ষ্মীর ঝলসে ওঠার তাগিদ।

অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারি এ দিন যেন সেই তাগিদটাকে আরও বাড়িয়ে দিলেন ‘এলআর ভাই’-এর উপর তাঁর ভরসার কথা বলে। বললেন, ‘‘ওর মতো অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার দলে থাকা মানে দলের ব্যালান্স আরও বেড়ে যাওয়া। এলআর ভাই দলে ফিরে আসায় তাই আমার মনে হয় এই ম্যাচে আরও শক্তিশালী দল নামাতে পারব। ওদের ঘরের মাঠ হলেও এই ম্যাচে বোধহয় আমরাই এগিয়ে।’’

ভরসা করার মতো একাধিক ক্রিকেটার তাঁর দলে। ব্যাটে সুদীপ চট্টোপাধ্যায়, বলে প্রজ্ঞান ওঝা। বাংলাকে তো এঁরাই এত দিন ধরে ভরসা জুগিয়ে আসছেন। এই মরসুমে অধিনায়ক মনোজের দুই প্রধান অস্ত্র। যথারীতি এই ম্যাচেও এঁদের দিকে তাকিয়ে বাংলার ক্রিকেট। ভরসা দেওয়ার তালিকায় অবশ্য লক্ষ্মীর নামটাও এখন যোগ হয়ে যাচ্ছে।

কর্নাটকের বিরুদ্ধে রঞ্জির প্রথম ম্যাচে খেলার দেড় মাসেরও বেশি সময় পর মাঠে নামছেন লক্ষ্মী। তাই বলে নতুন করে নিজেকে মোটিভেট করার মতো নাকি কিছু খুঁজে পাচ্ছেন না। বললেন, ‘‘আরে বাংলার হয়ে মাঠে নামাটাই সবচেয়ে বড় মোটিভেশন। তাই আলাদা করে আর কী নিজেকে মোটিভেট করব? দেড় মাস আগে পর্যন্ত যে মানসিকতা নিয়ে, যে তাগিদ নিয়ে মাঠে নেমেছি এখনও সেই নিয়েই নামব।’’

আগের দিনই এখানকার বিখ্যাত কামাখ্যা মন্দিরে গিয়ে পুজো দিয়ে এসেছেন লক্ষ্মী। সঙ্গে ছিলেন তাঁর এককালের সতীর্থ, বর্তমানে বোলিং কোচ রণদেব বসু ও ফিল্ডিং কোচ জয়দীপ মুখোপাধ্যায়।

ভগবান এই ম্যাচে কার দিকে, তা যেমন বলা যাচ্ছে না, তেমনই বলা এখনই সম্ভব নয় এই পিচ শেষ পর্যন্ত কাদের ত্রাতা হয়ে উঠবে। তবে এটুকু বলা যায়, এই মরসুমে অসমের যে রূপকথা চলছে, তা জন্মেছে এবং ডানা মেলেছে এই বাইশ গজ থেকেই। বর্ষাপাড়া স্টেডিয়ামের বাইশ গজে চোখ বুলিয়ে দেখা গেল, ঘাস প্রায় নেই বললেই চলে। হার্ড উইকেট। গত সপ্তাহে কল্যাণীতে যে রকম উইকেট দেখা গিয়েছিল, তা যদি হয় কাশ্মীর, তা হলে এটা অবশ্যই কন্যাকুমারী।

এই উইকেটেই রবিন উথাপ্পা, মণীশ পাণ্ডেরা প্রথম দিনই ১৮৭ রানে শেষ হয়ে গিয়েছিল। কারণ প্রথম দিন এখানে পেসাররা সুবিধে পায়। পরের দুই ম্যাচে দিল্লি ও রাজস্থানকে সরাসরি হারিয়ে দেয় অসম। হরিয়ানাকে লাহলিতে গিয়ে হারিয়ে এসেছে এ বারের রঞ্জি ট্রফির সবচেয়ে বড় সারপ্রাইজ প্যাকেজ। দুই পেস বোলার কৃষ্ণ দাস ও অরূপ দাস বিধ্বংসী ফর্মে। কৃষ্ণর সাত ম্যাচে ৪২ উইকেট তো অরূপের ২১। চোট সারিয়ে এই ম্যাচে ফিরছেন অরূপ। এ দিন নেটেও দুই পেসারকে সেই আগ্রাসী মেজাজে দেখা গেল। তাঁদের কর্নাটকী কোচ সনৎ কুমার মাঠে দাঁড়িয়ে বলছিলেন, ‘‘দু’জনের রসায়নটা অসাধারণ। বোঝাপড়াটাও অনবদ্য। সে জন্যই এত সাফল্য পাচ্ছে।’’ পাশের নেটেই বাংলার এক নম্বর পেসার অশোক দিন্দাকে এ দিন প্রায় বিশ্রামে থাকতেই দেখা গেল। এটাই নাকি এখন তাঁর নতুন রুটিন।

বাইশ গজের চরিত্র নিয়ে ধন্দে থাকা মনোজ বলছেন, ‘‘এখানে বোধহয় টস হারাই ভাল। সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন।’’ পিচ অনুযায়ী দল সাজাতে বর্ষাপাড়ায় দুই পেসার ও দুই স্পিনারে নামার কথা ভাবছেন মনোজ-সাইরাজরা। কিন্তু বীরপ্রতাপ সিংহর চোট। এ দিনই তাঁকে কলকাতায় ফিরিয়ে ব্যাক-আপ হিসেবে সায়ন ঘোষকে আনা হল। তবে দিন্দার সঙ্গে তাঁকে নয়, মুকেশ কুমারকে রাখা হবে হয়তো। তৃতীয় পেসার লক্ষ্মী। দরকার পড়লে সায়নশেখরও আছেন। আর স্পিনে ওঝার সঙ্গে গনি। ম্যাচ জিততে অধিনায়কের একটাই যুক্তি, ‘‘যে কোনও উইকেটের জন্য আমরা তৈরি।’’

কিন্তু বর্ষাপাড়ায় বর্ষার পূর্বাভাস থাকবে না, তা আবার হয়? শেষ দু’দিন বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলেই আবহাওয়া ওয়েবসাইটগুলো জানাচ্ছে। এই মাঠের জলনিকাশি ব্যবস্থা ইডেনকে কুড়ি গোল মারতে পারে বিশেষজ্ঞরা বলেন। কিন্তু ম্যাচ যদি ভেস্তে যায়, দু’দলই যদি ১-১ পয়েন্ট ভাগ করে নেয়, তা হলেও কিন্তু বাংলা-অসম দু’দলেরই নক আউটে ওঠার সুযোগ আছে।

একটা ব্যাপারে অবশ্য দুই কোচই এক মেরুতে। সাইরাজ ও সনৎ দু’জনেই তাঁদের ছেলেদের এ দিন বলে দিলেন, ‘‘হার-জিত নয়, এই ম্যাচে ভাল ক্রিকেট খেলাই আসল কথা। বিপক্ষ যেন ম্যাচের পরও শ্রদ্ধা না হারায়।’’

হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচে নামার আগে দুই কোচের মুখে এমন দর্শনের বুলি কিন্তু বেশ বিরল!

ছবি: ফেসবুক ও পিটিআই

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন