ঝাড়খণ্ডকে ‘দ্বিখণ্ড’ করে প্রায় নক আউটে বাংলা

Advertisement

প্রিয়দর্শিনী রক্ষিত

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৪ ০২:০০
Share:

গ্রুপের কঠিনতম যুদ্ধে এখনও পর্যন্ত সহজতম জয়।

Advertisement

রঞ্জি এক দিনের প্রেক্ষিতে ‘ঝাড়খণ্ড’ শব্দটা এত দিন সমার্থক ছিল বাড়তি স্নায়ুচাপের সঙ্গে। কিন্তু মঙ্গলবারের পর বোধহয় শব্দটা তার আসল অর্থেই ফিরে যাবে। ঝাড়খণ্ড মানে এ বার থেকে চোরা টেনশন নয়, ঝাড়খণ্ড মানে এ বার থেকে স্রেফ পড়শি রাজ্যের একটা টিম।

মঙ্গলবার সল্টলেকের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে যাঁরা ঝাড়খণ্ডের খণ্ড-খণ্ড হওয়া দেখলেন, তাঁদের এতটুকু অত্যুক্তি বলে মনে হবে না। যে জয়ের ব্যবধান ১৬৩ রান। যে জয়টা অনায়াস বললেও কম বলা হয়। হেভিওয়েট বিপক্ষের বিরুদ্ধে যে জয় কিছুটা হলেও অপ্রত্যাশিত। যে জয়ের তিন নায়কের নাম বঙ্গক্রিকেটে খুব চেনা।

Advertisement

ঋদ্ধিমান সাহা ৬৯ বলে ৮৪ নট আউট। এক ডজন বাউন্ডারি, একটা ওভার বাউন্ডারি।

অশোক দিন্দা সাত ওভার, ২৯ রান, পাঁচ-পাঁচটা উইকেট।

এবং লক্ষ্মীরতন শুক্ল ৪১ বলে অপরাজিত ৭১। বাউন্ডারি মাত্র তিন, ওভার বাউন্ডারির সংখ্যা তার ডাবল।

টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শ্রীবত্‌স গোস্বামীর (২৪) ফিরে যাওয়ার পর যখন অরিন্দম দাস এবং মনোজ তিওয়ারি ক্রিজে ছিলেন, তখনও বোঝা যায়নি যে দিনের শেষে গল্পটা এ রকম দাঁড়াবে। অরিন্দম ‘ডন’ দাসের ৮৪ বলে ৭৪ বা মনোজের ৪৩ রানের ইনিংসের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে না। ওই কুশনটা না থাকলে পরে লক্ষ্মী-ঋদ্ধির ব্যাট অত সাহসী হতে পারত না। কিন্তু আলাদা ভাবে মনে রাখা? সেটা শেষোক্ত দুইয়েরই অনেক বেশি প্রাপ্য।

বাংলা ইনিংসের অর্ধেকটা পেরিয়ে যাওয়ার পর ক্রিজে আগমন ঋদ্ধির। প্রথমে একটু সতর্ক, কিন্তু খুব দ্রুতই আইপিএল সেভেন ফাইনালের মোডে উত্তরণ। দু’দিন আগেও যে তিনি আন্তর্জাতিক বোলারদের বিরুদ্ধে ব্যাট করে এসেছেন এবং ঝাড়খণ্ডের রাহুল শুক্ল, ঋতুরাজ সিংহরা যে তাঁর কাছে প্রায় চলন্ত বোলিং মেশিনেরই সমান, স্বভাবলাজুক, নম্র ঋদ্ধি সেটা মুখে কোনও দিনই বলবেন না। কিন্তু তাঁর ব্যাটের চরিত্রের সঙ্গে যে ঋদ্ধির নিজস্ব ব্যক্তিত্ব একটুও মেলে না! তাই তিনি মুখে না বলুন, তাঁর ব্যাট যা বোঝানোর বেশ ভালই বুঝিয়ে দিয়ে গেল।

অন্য জনের ব্যাট আবার যেন তাঁর চরিত্রেরই প্রসার। ব্যক্তি এলআরএস যতটা ডাকাবুকো, যতটা ক্যারিশম্যাটিক, তাঁর ব্যাটও ঠিক তাই। বাংলা অধিনায়ক ক্রিজে স্টান্স নেওয়া মানেই উপস্থিতদের নড়েচড়ে বসা। গ্যালারিতে হালকা শিরশিরানি এ বার কিছু একটা হবে! মঙ্গলবারের ‘কিছু একটা’র নমুনা? ঋদ্ধির সঙ্গে জুটিতে শেষ পাঁচ ওভারে ৮৫ তুলে দেওয়া। শেষ ওভারের প্রথম তিনটে বল অব্যর্থ নিশানায় বাউন্ডারির বাইরে ‘টাঙিয়ে’ দেওয়া। ঋদ্ধির ব্যাটে খুন হওয়া বিপক্ষ বোলিংকে তা-ও ময়নাতদন্তে পাঠানো যেতে পারে। কিন্তু লক্ষ্মীর ব্যাটে ‘নিহত’ বোলিংয়ের শবদেহই তো খুঁজে পাওয়া যাবে না!

৩১০ তুলে লক্ষ্মী-ঋদ্ধি যখন তুমুল হাততালির মধ্যে ড্রেসিংরুমে ফিরছেন, ম্যাচটা তখন প্রায় জিতেই গিয়েছে বাংলা। তবু বিপক্ষের নাম ঝাড়খণ্ড তো, অল্পস্বল্প সন্দেহ তখনও উঁকি মারাটা স্বাভাবিক। যেটার দায়িত্ব নিয়ে নিলেন অশোক দিন্দা। বাংলা অধিনায়কের মতো এই বঙ্গ পেসারের মধ্যেও ‘কিছু একটা হবে’ ব্যাপারটা সহজাত। ঝাড়খণ্ড ইনিংসের চার নম্বর বলটাতেই শূন্য রানে ফিরিয়ে দিলেন ওপেনার ইশাঙ্ক জাগ্গিকে। পাঁচ নম্বর ওভারে লেগ-বিফোর ধোনির রাজ্যের তিন নম্বর। তার পরের দুটো ওভারে শিকার মিডল অর্ডারের এক জোড়া। দিন্দার চার আর বীরপ্রতাপ সিংহের একটা মোক্ষম ধাক্কায় দশ ওভারের মধ্যে ঝাড়খণ্ড ৩৫-৫। মাঠ জুড়ে ‘জয় বাংলা’।

ম্যাচটা যে তার কয়েক ওভারের মধ্যে শেষ হয়ে যায়নি, তার পিছনে রয়েছে ষষ্ঠ উইকেটে সৌরভ তিওয়ারি (৪৫) এবং শাহবাজ নাদিমের (৩৪) ৭১ রানের জুটি। যদিও তাঁদের জুটিতে এক মুহূর্তের জন্যও পাল্টা লড়াইয়ের স্ফুলিঙ্গ ছিল না। ছিল শুধু অবশ্যম্ভাবী ফলটাকে টেনে টেনে পিছিয়ে দেওয়া।

ঘ্যানঘ্যানে, অনর্থক যে লড়াইয়ের সমাপ্তি ঝাড়খণ্ডকে কিছুই দিতে পারল না। কিন্তু বাংলাকে দিল অনেক কিছু। গ্রুপ পর্বে দুইয়ে দুই করে নকআউট প্রায় নিশ্চিত করা। ঝাড়খণ্ড-ভূত তাড়ানো। প্রাক্‌ মরসুম বিপর্যয় অনেকটাই অতীতের দিকে ঠেলে দেওয়া। এবং বঙ্গ ক্রিকেটকুলে আশার কোরাস তুলে দেওয়া।

হবে, এ বার হবে।

তিন নায়ক। লক্ষ্মী-ঋদ্ধি-দিন্দা। মাঠে ছিলেন শামিও। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলা ৩১০-৩ (ঋদ্ধি ৮৪ নটআউট, লক্ষ্মী ৭১ নটআউট, অরিন্দম ৭৪)

ঝাড়খণ্ড ১৪৭ (সৌরভ ৪৫, দিন্দা ৫-২৯, সৌরাশিস ২-৩৮)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন