‘ফ্রান্সেসকোলিকে দেখেই বুঝি, ভবিষ্যতের নায়ক’

দিল্লিতে এশিয়ান গেমসের আগে প্রস্তুতির জন্য নেহরু কাপের আয়োজন করেছিল ফেডারেশন। দু’টো টুনার্মেন্টেই আমি ছিলাম ভারতের অধিনায়ক।

Advertisement

ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৮ ০৬:০৩
Share:

শিল্পী: আশির দশকে উরুগুয়ের সেরা তারকা ফ্রান্সেসকোলি। ফাইল চিত্র

বিশ্বকাপ ফুটবলে উরুগুয়ে বারবারই একটা শক্তিধর দেশ হয়ে আত্মপ্রকাশ করে। ছোট বেলা থেকেই তা দেখে এসেছি। ওদের প্রথম সামনাসামনি দেখলাম নেহরু কাপে। খেলেছিলামও। সেই ১৯৮২-তে।

Advertisement

দিল্লিতে এশিয়ান গেমসের আগে প্রস্তুতির জন্য নেহরু কাপের আয়োজন করেছিল ফেডারেশন। দু’টো টুনার্মেন্টেই আমি ছিলাম ভারতের অধিনায়ক। উরুগুয়ের সঙ্গে এসেছিল ইতালি, যুগোস্লাভিয়া, চিন এবং দক্ষিণ কোরিয়া। চিন ছাড়া বাকি সব দলই ছিল প্রচন্ড শক্তিশালী। কিন্তু পুরো টুর্নামেন্টে সবচেয়ে ভাল খেলেছিল উরুগুয়ে। ওরাই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল প্রথম নেহরু কাপে। সেই দলটার প্রাণভ্রোমরা ছিল একজন সুদর্শন মাঝমাঠের খেলোয়াড়। ছত্রিশ বছর আগের নেহরু কাপের স্মৃতি রোমন্থন করতে গেলে তাঁর নামটা আমার একার নয়, পুরনো দিনের সব ফুটবল প্রেমীদের হয়তো মনে পড়বেই, তিনি এনসো ফ্রান্সেসকোলি। আকর্ষক চেহারার জন্য নয়, গতি ও ড্রিবলের জন্য ওর নাম সেই সময় মুখে মুখে ঘুরত। তখন সবে উঠে আসছে ফ্রান্সেসকোলি। তারুণ্যে ভরপুর। খেলার মধ্যে একটা দারুণ সৌন্দর্য ছিল। উরুগুয়ের সঙ্গে ম্যাচটা আমরা সে বার হেরেছিলাম। ও একটা গোলও করেছিল। আঠারো গজ বক্সের মধ্যে দু’জনের সঙ্গে পাস খেলে আলতো শটে আমাকে বোকা বানিয়েছিল ফ্রান্সেসকোলি। সেই শট রোখার ক্ষমতা আমার ছিল না। মাঝমাঠ থেকে পুরো উরুগুয়ে দলটাকে খেলাত ও। পরের দুটো বিশ্বকাপে (১৯৮৬ ও ১৯৯০) ফ্রান্সেসকোলি, গনজালেস, লুইস রুজো-সহ পুরো দলটাই দুর্দান্ত খেলেছিল। আসলে সে বার যে উরুগুয়ে দলটা ভারতে এসেছিল সেই দলের প্রায় সবাই পরের বিশ্বকাপের খেলেছিল। মনে আছে ওদের গোলকিপার রোজোলফো রদরিগেজের কথা। ফ্রান্সেসকোলি পাশাপাশি ওকে মনে রাখার কারণ আমার মতো ও ছিল উরুগুয়ে অধিনায়ক। র‌্যামোস আর নাদাল নামের দু’জন স্ট্রাইকার ছিল উরুগুয়ে দলে। বেশ কয়েকটা ম্যাচে গোল করার জন্য মনে আছে দু’জনকে।

উরুগুয়ের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে একটা ভয় কাজ করছিল আমাদের সবার মধ্যে। আমরা মানে মনোরঞ্জন (ভট্টাচার্য), কম্পটন (দত্ত), প্রশান্ত (বন্দ্যোপাধ্যায়), মানস (ভট্টাচার্য), বিদেশ (বসু)। কিন্তু সবাই মিলে ঠিক করেছিলাম যে করেই হোক ওদের রুখতে হবে। আমাদের যুগ্ম কোচ ছিলেন প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও অরুণ ঘোষ। তাঁরাও চেয়েছিলেন আমরা না জিততে পারলেও অন্তত লড়াই করি। সেটা হয়েওছিল। চিন আর দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে ড্র করেছিলাম। জিতেছিলাম যুগোশ্লাভিয়ার বিরুদ্ধে। ইতালির সঙ্গে আত্মঘাতী গোলে হেরেছিলাম। কিন্তু উরুগুয়েকে আটকাতে পারিনি। ৩-১ গোলে হেরেছিলাম। এখনকার মতো শক্তি নির্ভর ফুটবল তখনও খেলত উরুগুয়ে। শক্তির সঙ্গে সৌন্দর্যও মিশে থাকত ওদের খেলায়। ছোট ছোট পাস, উইং ধরে দৌড়, প্রতিপক্ষ বক্সের ভিতর হঠাৎ হঠাৎ চাপ তৈরি করা—এখনও দেখি ওদের খেলায়। যা ওদের নিজস্ব ঘরানা। এ বার তো অস্কার তাভারেজের দল খুবই শক্তিশালী। এডিনসন কাভানি, লুইস সুয়ারেসের মতো ফুটবলার আছে উরুগুয়েতে। আমার ধারণা এ বারের রাশিয়া বিশ্বকাপে উরুগুয়ে চমকে দেবে। অনেক অঘটন ঘটাবে।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন