গোমেজের গোল। ছবি: এএফপি
ম্যাচ শুরুর আগে অসম্ভব আগ্রহ নিয়ে বসেছিলাম টমাস মুলার কেমন খেলে সেটা দেখার জন্য। বিশ্বাস করবেন কি না জানি না, বিরতির আগেই মন জয় করে নিল মুলার।
জানি অনেকে হয়তো আমার সঙ্গে একমত হবেন না। বিশেষ করে যে ভাবে শুরুতেই একের পর এক গোল নষ্ট করেছে মুলার। কিন্তু ফুটবল তো আর বীজগণিত নয়। যে ফর্মুলা বসালাম আর তাৎক্ষণিক রেজাল্ট চলে এল। ফুটবলে কখনও প্রচুর গোলের সুযোগ পেয়েও জেতা যায় না। আবার গোটা ম্যাচে একটাই সুযোগ, একটাই জয়ের গোল। তাই গোল নষ্টের নিরিখে যদি জার্মানিকে এই ম্যাচে বিচার করা হয়, তা হলে সেটা বড় ভুল হবে। উল্টে ইউরোয় এই প্রথম বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের খুঁজে পেলাম আমি। চোখের আরাম। প্রবল সন্তুষ্টি। টোটাল ফুটবল বলতে যা বোঝায়, হুবহু সেটাই।
আগের ম্যাচে পোল্যান্ডের সঙ্গে গোলশূন্য ড্রয়ের পরে অনেকেই ভেবে নিয়েছিল, জার্মানি বোধহয় শেষ। অন্তত ইউরোয় এ বার ওজিল-মুলারদের কোনও সম্ভাবনা নেই। কিন্তু সবাই এটা জানে না, জোয়াকিম লো-র দলের যখন সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হয়, তখনই দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে তারা। যেটা এই ম্যাচে হল। যেন ঘুমন্ত আগ্নিয়গিরি। প্রথম আধ ঘণ্টা টেনে-টুনে বেঁধে রাখলেও, মাঝমাঠ থেকে চাপের লাভাস্রোত বইতেই আইসল্যান্ডের ‘বরফ’ গলে জল। নিজে গোল করতে না পারলেও, মারিও গোমেজের গোলে সেই মুলারেরই বেশি অবদান। আরও চারটে গোল হতে পারত যদি ওজিল-গটজেরাও মুলারের মতো একের বিরুদ্ধে এক গোলের সুযোগ নষ্ট না করত। তবে সেটা তো ফুটবলের একটা অঙ্গ। যেটা আগেও বললাম।
তবে এটাও ঠিক, এই ফিনিশারের অভাব জার্মানিকে ভোগাতে পারে। আমার এক ঝলক দেখে মনে হল, মাঝমাঠ থেকে ঝাঁকে বাঘ তাড়া করছে। কিন্তু শেষমেশ হরিণ ঠিক বেঁচে ফিরছে তার ডেরায়। কেননা শিকারের অজস্র সুযোগ থাকলেও, শিকারি জাতের নয়। ঠিক যেমন জার্মানির অজস্র গোলের সুযোগ তৈরি হলেও গোল করার লোক নেই। মিরোস্লাভ ক্লোজের পরে কোনও স্ট্রাইকার উঠে আসেনি। বিশ্বকাপে যেটা বাড়তি পাওনা ছিল জার্মানির। গোমেজ সেই জাতের নয়। আর গটজে? ওকে প্রকৃত স্ট্রাইকার বলা যাবে না। আগের ম্যাচেই সেটা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। গটজেকে মিডল হাফ কিংবা উইথড্রয়াল ফরোয়ার্ডে ব্যবহার করা যেতে পারে। লো হয়তো সেটা বুঝেই এই ম্যাচে গটজেকে লেফট উইং করে গোমেজকে একা স্ট্রাইকারে খেলালেন। ছক না বদলে (৪-২-৩-১)।
ইউরোয় যদি কোনও একটা খুঁত ধরতে হয় জার্মানির, তা হলে সেটা হবে ফিনিশারের সমস্যা। বাকি পুরোটাই ঝাঁ-চকচকে। দু’টো উইং ব্যাক যেন উইং হাফ। যেমন ‘উইথ দ্য বল’ দৌড়, তেমন গতি। মাঝমাঠে ওজিল, মুলারের পাশে গটজে যোগ দিতেই ফের মসৃণ ফুটবল জার্মানির।
ফিনিশার নেই ধরেও বলছি, এই জার্মানি সেমিফাইনাল না খেললে অবাক হব।