মায়াঙ্ককে দেখে মনে হয়নি প্রথম টেস্ট

দীর্ঘদিন ধরেই আমরা মায়াঙ্কের কথা শুনে আসছি। গত দেড় বছরে সব ধরনের ক্রিকেট মিলে ও বোধ হয় চার হাজারের ওপর রান করেছে। ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টকে অভিনন্দন জানাতে হবেই অস্ট্রেলিয়ায় উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে একেবারে মায়াঙ্ককে দিয়ে ওপেন করানোর জন্য।

Advertisement

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:২১
Share:

তরুণ মায়াঙ্কের ওপর ভরসা রেখে ভুল করেননি কোহালি-রবি শাস্ত্রী।—ছবি এএফপি।

অনেক দিন বাদে ভারতীয় দলে নতুন একটা ওপেনিং জুটিকে খেলতে দেখলাম। মায়াঙ্ক আগরওয়াল এবং হনুমা বিহারী। এঁদের মধ্যে মায়াঙ্ক ওপেনার হলেও হনুমা আদতে মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। কিন্তু ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের সাহসী সিদ্ধান্তের মর্যাদা এই দুই ওপেনার দিলেন সাহসী ক্রিকেট খেলেই। অনেক দিন বাদে প্রথম উইকেট জুটি এক ঘণ্টা ২০ মিনিট উইকেটে কাটিয়ে দিল। যার ফলে বিরাট কোহালিকে নতুন বলের সামনে পড়তে হল না। না হলে আমরা তো দেখে আসছি, ১০-২০ রানে দুই উইকেট পড়ে যাওয়াটা ইদানীং ভারতীয় ক্রিকেটের নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Advertisement

দীর্ঘদিন ধরেই আমরা মায়াঙ্কের কথা শুনে আসছি। গত দেড় বছরে সব ধরনের ক্রিকেট মিলে ও বোধ হয় চার হাজারের ওপর রান করেছে। ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টকে অভিনন্দন জানাতে হবেই অস্ট্রেলিয়ায় উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে একেবারে মায়াঙ্ককে দিয়ে ওপেন করানোর জন্য। ওদের হাতে পার্থিব পটেলও ছিল। কিন্তু দেখা গেল, তরুণ মায়াঙ্কের ওপর ভরসা রেখে ভুল করেননি কোহালি-রবি শাস্ত্রী।

সকালে টিভি খুলে মায়াঙ্কের মুখ আর খেলার ধরন দেখে মনে হচ্ছিল, ছেলেটা যেন অনেক দিন ধরেই জাতীয় দলের জার্সিতে খেলছে। অস্ট্রেলিয়ার মতো পরিবেশে, এই রকম পরিস্থিতিতে অভিষেক টেস্ট খেলছেন, একেবারেই বোঝা যায়নি। এই মানসিকতাই কিন্তু মায়াঙ্ককে এতদূর নিয়ে এসেছে।

Advertisement

পাশাপাশি অবশ্যই মায়াঙ্কের টেকনিকের কথাও বলতে হবে। প্রথম দিনেই বেশ জমাট দেখিয়েছে কর্নাটকের এই ব্যাটসম্যানকে। ফ্রন্টফুটে আসতে দ্বিধা করেননি। আমার সব চেয়ে ভাল লাগল একটা দৃশ্য। বাউন্সার এসে শরীরে লাগল। কিন্তু তাতে একটুও ঘাবড়ে গেলেন না এই তরুণ। ওই অবস্থায় বেশির ভাগ সময় দেখা যায়, ব্যাটসম্যানরা ব্যাকফুটে চলে যায়। কিন্তু মায়াঙ্ককে দেখলাম, শুধু ফ্রন্টফুটে এসেই পেসারদের খেললেন না, দারুণ একটা বাউন্ডারিও মারলেন। মায়াঙ্কের ফুটওয়ার্কও দুর্দান্ত। বিশেষ করে নেথান লায়নকে খেলার সময় সেটা খুব ভাল করে বোঝা গিয়েছে। কোহালির নেতৃত্বে ভারতীয় দলে অনেক ওপেনারই খেলে ফেললেন। তবে এই মায়াঙ্ককে দেখে কিন্তু লম্বা রেসের ঘোড়াই মনে হচ্ছে।

পাশাপাশি বিহারীর কথাও বলতে হবে। মিডল অর্ডার থেকে এসে ওপেন করা সহজ কাজ নয়। সবাই তো আর বীরেন্দ্র সহবাগ নন। কিন্তু বিহারীর চেষ্টার ত্রুটি ছিল না। হেলমেটে বল লেগেছে। কিন্তু সামলে নিয়ে আবার ব্যাট হাতে দাঁড়িয়ে গিয়েছেন। বিহারী হয়তো মাত্র আট রান করেছেন, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ৬৬টা বল খেলে গিয়েছেন। এই দুই ওপেনার অনেক দিন বাদে নতুন বলটা দারুণ সামলে দেন।

দিনের শেষে ভারতের স্কোর ২১৫-২। উইকেটে চেতেশ্বর পূজারার সঙ্গে আবার সেই কোহালি। বুধবারের নায়ক মায়াঙ্ক হলেও কোহালির কথা সব সময়ই আলাদা করে বলতে হবে। বক্সিং ডে টেস্টের প্রথম দিনের সেরা শটটাও এল কোহালির ব্যাট থেকেই। জশ হেজলউডের একটা বল অফস্টাম্পের সামান্য বাইরে পড়েছিল। অন্য যে কোনও ব্যাটসম্যান হলে বলটাকে অফসাইডেই মারত। কোহালির কব্জির মোচড়ে বলটা অন সাইডের বাউন্ডারিতে চলে গেল।

উল্টো দিকে পূজারা উইকেটে জমে গিয়েছে। দু’জনে মিলে দিনের শেষে মিচেল স্টার্কদের আগুনে স্পেল সামলে দিয়েছেন। প্রথম নতুন বলে অস্ট্রেলিয়ার পেসাররা সুইংই পাননি। কিন্তু দ্বিতীয় নতুন বলে পেলেন। দিনের ৮৭তম ওভারে স্টার্ক ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিলেন। ওই সময় পাঁচটা বলে কোহালিকেও চাপে ফেলে দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই ওভারটা সামলে দিয়েছেন ভারত অধিনায়ক। ফলে বৃহস্পতিবার এই জুটির দিকে তাকিয়ে থাকবে ভারত। মেলবোর্নে টস জেতার পরে প্রথম দিনটা ভারতেরই। কিন্তু এখান থেকে রাশ নিজেদের হাতে রাখতে গেলে অন্তত সাড়ে চারশো রান চাই। সা়ড়ে চারশোর ওপর রান উঠে গেলে টেস্ট ম্যাচ হারা কঠিন। সেখান থেকে ভারত ম্যাচ জিততে পারে বা ড্র হতে পারে।

বড় রান না ওঠারও কারণ নেই। ভারত এই টেস্টে ব্যাটিং লেজটা কমিয়েছে। আট নম্বরে রবীন্দ্র জাডেজা মানে লোয়ার অর্ডারও মজবুত। এই ব্যাটিং নিয়ে ভারত কিন্তু দ্বিতীয় দিনই চালকের আসনে বসে যেতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন