তলপেটের চোট সেরে উঠেছে কি না, সংশয় কাটাতে ট্রেনারকে নিয়ে কসরত

ছুটিতে প্রস্তুতি, সিডনিতে নামতে মরিয়া অশ্বিন

সিডনিতে শেষ টেস্ট খেলতে নামার জন্য তিনি যে মরিয়া, বুঝিয়ে দিলেন আর অশ্বিন। নতুন বছরের প্রথম দিনে তাঁর দলের বাকিরা ছুটি উপভোগ করলেও একাই নিঃশব্দে অনুশীলন করে গেলেন অফস্পিনার। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ট্রেনার শঙ্কর ভাসু। 

Advertisement

সুমিত ঘোষ 

সিডনি শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:০১
Share:

একাগ্র: নিঃশব্দে অনুশীলন অশ্বিনের। ফাইল চিত্র

সিডনিতে শেষ টেস্ট খেলতে নামার জন্য তিনি যে মরিয়া, বুঝিয়ে দিলেন আর অশ্বিন। নতুন বছরের প্রথম দিনে তাঁর দলের বাকিরা ছুটি উপভোগ করলেও একাই নিঃশব্দে অনুশীলন করে গেলেন অফস্পিনার। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ট্রেনার শঙ্কর ভাসু।

Advertisement

যদিও গোপন এই অভিযানকে কতটা অশ্বিনের নেটে বোলিং বলা যাবে আর কতটা ফিটনেস যাচাইয়ের চেষ্টা, সেই প্রশ্ন থাকছে। বিশেষ করে ট্রেনার সঙ্গে থাকার জন্য মনে করা হচ্ছে, সম্ভবত কতটা তিনি ফিট হয়েছেন, সেটাই বোঝার চেষ্টা হচ্ছে। মেলবোর্নে টেস্ট শুরুর আগের দিন থেকে নেটে ব্যাটিং-বোলিং করা শুরু করেন অশ্বিন। কিন্তু তাঁর তলপেটের চোট সম্পূর্ণ সেরে উঠেছে কি না, তা নিয়ে সংশয় এখনও রয়েছে। সম্ভবত সেই কারণেই ট্রেনারকে সঙ্গে নিয়ে ছুটির দিনেও তিনি বোঝার চেষ্টা করে নিলেন, কতটা ফিট হয়েছেন।

অশ্বিনের আচমকা সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে হানা দিয়ে ইন্ডোরে ঢুকে পড়া বাদ দিলে নববর্ষের প্রথম দিনে ছুটিই ঘোষণা করেছিল ভারতীয় শিবির। সিডনিতে এমনিতেই বর্ষবরণের রাত মানে মহাধুমধাম ব্যাপার। সারা পৃথিবীর মানুষ ছুটে আসেন সিডনি হারবার ব্রিজে গিয়ে আতসবাজির প্রদর্শনী দেখার জন্য। তিন মাস আগে থেকে সব টিকিট নিঃশেষ হয়ে গিয়েছে। রাস্তায় উপচে পড়া ভিড়। অন্তত তিন কিলোমিটার আগে থেকে সব রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। স্পটে পৌঁছতে হলে তিন কিলোমিটার হাঁটতে হবে অথবা ট্রেনে করে নামা যাবে সিডনি হারবার এবং অপেরা হাউসের সামনে। এত লোক এসেছেন যে, সন্ধে সাতটার মধ্যেই সব গেট হাউসফুল। দু’টো ইমার্জেন্সি গেট খুলে দেওয়ার পরেও ব্রিজের আশপাশ জুড়ে কাতারে কাতারে লোক দাঁড়িয়ে। দূর থেকে দাঁড়িয়েই তাঁরা বাজির প্রদর্শনী দেখলেন। রাত ন’টা এবং বারোটা দু’বার হল সেই প্রদর্শনী। বিশেষ করে বারোটায় নতুন বছরকে বরণ করার ‘শো’ দেখার জন্যই ভিড় জমেছিল বেশি।

Advertisement

ভারতীয় ক্রিকেটারদের সকলের পরিবার এসেছে নববর্ষ উপলক্ষে। তাই অনেকেই আতসবাজির প্রদর্শনী এবং বর্ষবরণের রাতের সিডনি উপভোগ করতে বেরিয়েছিলেন। কোহালি ছবি টুইট করলেন অনুষ্কাকে নিয়ে নববর্ষ কাটানোর। বছরের প্রথম দিনে প্রধানমন্ত্রীর চায়ের নিমন্ত্রণ রাখতে গেল দল। কিন্তু অশ্বিনের নতুন বছর মনে হচ্ছে শুরু হল সংশয় আর লড়াই দিয়ে। চলতি সিরিজকে এক দিক দিয়ে তাঁর সঙ্গে নেথান লায়নের দ্বৈরথ হিসেবেও চিহ্নিত করা হচ্ছিল। কিন্তু তিনটি টেস্ট হয়ে গিয়েছে, অশ্বিন দু’টিতে খেলতেই পারেননি। সেখানে লায়ন তাঁর দলের এক নম্বর বোলার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন। তাই সিডনিতে যদি অশ্বিন না-খেলতে পারেন বা ভাল কিছু করতে না-পারেন, তা হলে তাঁকে নিয়ে ফের কথা উঠতে বাধ্য। অশ্বিনকে প্রতিযোগিতায় ফেলে দিয়েছেন রবীন্দ্র জাডেজা। ইংল্যান্ডে ওভাল টেস্টে অশ্বিনকে বসিয়ে তাঁকে খেলানো হয়েছিল। সেখানে জাড্ডু ভাল খেলে দেওয়ার পরে মেলবোর্নেও তাঁকে খেলানো হয়েছে। জাডেজা খুব খারাপ করেছেন, বলা যাবে না। এটাও ঠিক যে, অশ্বিনের ফিটনেসের ব্যাপারে আর কোনও আপস করতে চায় না দল। সাউদাম্পটনে আশি শতাংশ ফিট অবস্থায় তাঁকে খেলিয়ে ফল ভুগতে হয়েছিল। নিজের সেরা ছন্দে একেবারেই ছিলেন না অশ্বিন। সাউদাম্পটনের পিচে ক্ষত তৈরি হলেও তা কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। মইন আলির মতো স্পিনার ভারতকে ধ্বংস করে দিয়ে যান, অথচ অশ্বিন কোনও ছাপই ফেলতে পারেননি।

সেই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভারতীয় দল ঠিক করে ফেলেছে, টেস্টে সম্পূর্ণ ফিট ক্রিকেটারকেই শুধু খেলানো হবে। অশ্বিনকে তাই সিডনিতে ফিরতে হলে প্রথমে ফিটনেস টেস্টে ভাল ভাবে উত্তীর্ণ হতে হবে। ছুটি কাটিয়ে আজ, বুধবার প্র্যাক্টিসে ফিরবে ভারতীয় দল। তখনই হয়তো ফিটনেস টেস্টে দেখে নিয়ে চরম সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে অফস্পিনারকে নিয়ে। বৃহস্পতিবার থেকে শেষ টেস্ট শুরু। সিডনিতে স্পিনাররা সাহায্য পান বলে অশ্বিন-জাডেজা দু’জনকেও খেলাতে পারে ভারত। তবে কারও কারও মনে হচ্ছে, স্পিন-সহায়ক পিচ চাইবে না অস্ট্রেলিয়া দল। তারা যে একমাত্র টেস্ট জিতেছে পার্‌থে, সেখানে গতি এবং বাউন্সের পিচ ছিল। অনেকটা ঘাস রাখা হয়েছিল। টিম পেনরা অন্তত চাইবেন, সিডনির পিচে ঘাস থাকুক। সে ক্ষেত্রে কোহালিরাও ফর্মে থাকা তিন পেসারের কাউকে বসানোর ঝুঁকি নিতে পারবেন না। তখন অশ্বিন বা জাডেজার মধ্যে যে কোনও এক জনকে বেছে নেওয়ার কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে দলকে।

ফিটনেস এবং ফর্ম জাডেজার দিকে। অভিজ্ঞতা এবং উৎকর্ষে এগিয়ে অশ্বিন। সিডনিতে দু’দলের লড়াই শুরু হওয়ার আগেই শুরু হয়ে গিয়েছে অন্য দ্বৈরথ!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন