লোঢা মামলার নয়াদিল্লি যে দিন নিঝুম-নিস্তরঙ্গ থাকল, কলকাতার ক্রিকেট প্রশাসনে আবার একই দিনে বইতে শুরু করল শৈত্যপ্রবাহ।
শৈত্যপ্রবাহের কারণ— একটা চিঠি। সিএবি কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে-র সদস্যদের পাঠানো একটা চিঠি। যেখানে বিশ্বরূপ লিখেছেন, সিএবির ফিক্সড ডিপোজিট ১০৬ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। ২০০৮-০৯ সালে যখন সিএবি যুগ্ম সচিবের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে এসেছিলেন, ফিক্সড ডিপোজিটের অঙ্ক ছিল ৩৪ কোটি। চার বছর আগে সিএবি কোষাধ্যক্ষ পদে আসেন, অঙ্কটা বেড়ে ৫৭ কোটি হয়, আর এখন ১০৬ কোটি। চিঠিতে বিশ্বরূপ আরও লেখেন, সিএবি-র প্রাক্তন ও বর্তমান প্রশাসকদের সাহায্য ছাড়া এটা সম্ভব হত না। এর বাইরে তিনি একটা স্মারকও সবাইকে পাঠাচ্ছেন নিজের খরচে।
যে চিঠিকে ঘিরে তীব্র বিতর্ক বেঁধে গিয়েছে সিএবিতে। কোনও কোনও পদাধিকারী বলতে শুরু করেছেন যে, চিঠিটা পাঠানো হয়েছে ‘মুষ্টিমেয়’ কিছু সদস্যকে। মোটেও সবাইকে নয়। অনেকেই চিঠি পাননি। বলা হচ্ছে, চিঠিটা সিএবি কোষাধ্যক্ষ পাঠিয়েছেন সৌরভ-জমানায় সিএবি-র প্রভূত আর্থিক উন্নতির পাল্টা হিসেবে। দেখানো হচ্ছে, বিশ্বরূপের আমলে সিএবি-তে কতটা আর্থিক উন্নতি ঘটেছে। আর সেটা লিখতে ব্যবহার করা হয়েছে সিএবি লেটারপ্যাড। এবং সংস্থার অফিসে তার কোনও কপিও রাখা হয়নি।
আপত্তি উঠছে চিঠির প্রথম দিকে ব্যবহার করা একটা লাইন নিয়েও। যেখানে লেখা— একজন ক্রিকেট প্রশাসক সাধারণত ক্রিকেটারের মতো সেঞ্চুরি করতে পারে না। কিন্তু সংস্থার ইতিহাসে প্রথম বার একশো কোটি টাকার ফিক্সড ডিপোজিট ম্যাজিক ফিগার ছুঁল সিএবি। বলা হচ্ছে, এটা আসলে কাকে বলতে চাওয়া হল?
সিএবি প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে কোষাধ্যক্ষের এই চিঠি নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, ‘‘আমি এ রকম কোনও চিঠি পাইনি। আর এই চিঠি নিয়ে কোনও মন্তব্যও করতে পারব না।’’
সিএবি কোষাধ্যক্ষ— তিনি বললেন। অভিযোগ ধরে-ধরে। একটার পর একটা।
‘‘আমি সৌরভকেও চিঠি পাঠিয়েছি। মুষ্টিমেয় নয়, সমস্ত সদস্যকেই পাঠিয়েছি। গতকাল থেকে চিঠি যাওয়া শুরু হয়েছে, কারও কারও কাছে চলেও গিয়েছে। একদিনের মধ্যে তো আর সবার কাছে চলে যাবে না,’’ পরিষ্কার বলে দিলেন বিশ্বরূপ। এটা সৌরভ-জমানার আর্থিক উন্নতির পাল্টা কি না জিজ্ঞেস করা হলে সিএবি কোষাধ্যক্ষের উত্তর, ‘‘আমার বক্তব্য খুব স্পষ্ট। আধুনিক সিএবির রূপকার কিন্তু বিশ্বনাথ দত্ত থেকে জগমোহন ডালমিয়া। তাঁদের জমানার ভিত্তিতেই আজকের সিএবি দাঁড়িয়ে আছে। একটা কথা বলতে চাই যে, মাইলস্টোনের দিনে এমন বিতর্ক অনভিপ্রেত।’’
সিএবি লেটারপ্যাড ব্যবহার নিয়ে বেশ আক্রমণাত্মক শোনায় কোষাধ্যক্ষকে। বললেন, ‘‘আমি প্রধান পদাধিকারী। লেটারহেড ব্যবহার করা তো গর্হিত নয়। যেখানে সহ সচিবরা ব্যবহার করতে পারেন, আমি কেন করব না?’’ যা শুনে সৌরভ গোষ্ঠীর কেউ কেউ আবার বললেন, আজ পর্যন্ত ফিক্সড ডিপোজিটের অঙ্ক ৬৪ কোটি। যার মধ্যেকার ৩৫ কোটি-তে লোঢা কমিশন হাত দিতে বারণ করেছে। তা হলে? সব খতিয়ে দেখতে তো এ বার নিরপেক্ষ অডিটর নিয়োগ করতে হবে।
শৈত্যের মাত্রাটা বোঝা যাচ্ছে?