জয়োল্লাস: স্বস্তির গোলের পরে হেনরিকে (মাঝখানে) অভিনন্দন সতীর্থদের। শনিবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
মোহনবাগান ১ • পাঠচক্র ০
শনিবার সকালেই উগান্ডা থেকে কলকাতায় উড়ে এসেছেন তিনি। বিকেলে মোহনবাগান বনাম পাঠচক্র ম্যাচের বিরতিতে দিপান্দা ডিকার পিছনেই হাঁটতে হাঁটতে সবুজ-মেরুন তাঁবুর দিকে এগোচ্ছিলেন ট্রায়ালে আসা সেই নবাগত বিদেশি বোবান। ম্যাচ তখন গোলশূন্য।
মোহনবাগান সমর্থকদের সঙ্গে প্রথম আলাপেই বোবান জ্যোতিষীর মতোই আশ্বস্ত করছিলেন তাঁদের, ‘‘কোনও চিন্তা নেই। দ্বিতীয়ার্ধে আমার বন্ধু হেনরি গোল করে দেবে।’’ শেষ পর্যন্ত হলও ঠিক তাই।
দ্বিতীয়ার্ধে খেলা শুরু হতেই শঙ্করলাল চক্রবর্তীর মোহনবাগান এমন সব গোলের সুযোগ নষ্ট করছিল যে বেড়ে গিয়েছিল সবুজ-মেরুন গ্যালারির রক্তচাপ। শেষমেশ মোহনবাগান কোচের ত্রাতা হয়ে দাঁড়াল সেই সেট পিসই। যা আগের দিন অনুশীলন করিয়েছিলেন তিনি।
পঁচাত্তর মিনিটে তীর্থঙ্কর সরকার যখন ডান দিক থেকে কর্নার মারতে যাচ্ছেন তখন অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়ছে। পাঠচক্রের ডাচ কোচ রেমকো বোয়ের আট জনকে রক্ষণে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন মোহনবাগানের থেকে পয়েন্ট কাড়ার জন্য। ধীরে ধীরে তাতছে গ্যালারি। যেখানে অনেকেই কালোবাজারিদের থেকে টিকিট কিনে ঢুকেছিলেন প্রিয় দলের প্রথম ম্যাচ দেখতে। তীর্থঙ্করের কর্নারে মাথা ছোঁয়াতে রক্ষণ থেকে উঠে এসেছিলেন মোহনবাগান স্টপার লালছাওয়ান (কিম) কিমা। কর্নার থেকে ভেসে আসা বল পাঠচক্র গোলকিপার অরিন্দম ঘোষ ঘুসি মেরে বিপন্মুক্ত করলেও তা কিমার মাথায় লেগে মাটিতে পড়ে। যা দুরন্ত ক্ষিপ্রতায় পাঠচক্রের জালে জড়িয়ে দেন সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা সুযোগসন্ধানী হেনরি।
১-০ জিতে মোহনবাগান কোচ বলে গেলেন, ‘‘প্রথম ম্যাচ সব সময় কঠিন। তিন পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়াটাই সব চেয়ে বড় ইতিবাচক ব্যাপার।’’
ম্যাচে পাঠচক্র কোচ জাপান ও ক্রোয়েশিয়ার দুই ফরোয়ার্ড ফুতা নাকামুরা ও আন্তো পেয়িচকে দিয়ে শিল্টন পালদের চেপে ধরতে চেয়েছিলেন। দু’জনেই অতি সাধারণ ফুটবলার। শুরু থেকেই মোহনবাগান মাঝমাঠে সৌরভ দাস এঁদের কড়া ট্যাকলে নিষ্প্রভ করে রেখেছিলেন। সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে খেলা সৌরভের ছেলেটির ট্যাকল ভাল। বল কাড়তে পারেন। বাড়ান ঠিকানা লেখা পাসও। ঠিক ভাবে এগোলে অনেক দূর যাবেন। কিন্তু মোহনবাগানের দুই উইং হাফ বসন্ত সিংহ বা পিন্টু মাহাতো প্রথমার্ধে হেনরিকে বল বাড়াতে গিয়ে ভুল পাস করছিলেন। ফলে মোহনবাগানের আক্রমণ দানা বাঁধছিল না। দ্বিতীয়ত, লেফ্ট ব্যাক অরিজিৎ বাগুই ওভারল্যাপে গেলেও রাইট ব্যাক অমেয় আক্রমণে যাচ্ছিলেন না। তাঁকে ভরসাও করা যাচ্ছিল না। তাঁর সঙ্গে স্টপারদের দূরত্ব মাঝেমাঝেই বেড়ে যাচ্ছিল। বিপদ বুঝে মোহনবাগান কোচ দ্বিতীয়ার্ধে তাঁর জায়গায় অভিষেক আম্বেকরকে নামিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন।
তবে মরসুমের এটি প্রথম ম্যাচ। মোহনবাগান কোচ বলছেন, ‘‘আমাদের পরিকল্পনার সত্তর শতাংশ খেলতে পেরেছি আজ। লিগ জিততে গেলে কিন্তু আরও ভাল খেলতে হবে আমাদের।’’
মোহনবাগান: শিল্টন পাল, অমেয় গণেশ রানাওয়াড়ে (অভিষেক আম্বেকর), লালছাওয়ান কিমা, কিংসলে ওবুমনেমে, অরিজিৎ বাগুই, পিন্টু মাহাতো (তীর্থঙ্কর সরকার), সৌরভ দাস, শিল্টন ডি’সিলভা, বসন্ত সিংহ (মইনুদ্দিন), আজহারউদ্দিন মল্লিক, হেনরি কিসেক্কা।
পাঠচক্র: অরিন্দম ঘোষ, আমোদ মাহাতো(স্নেহাশিস চক্রবর্তী), মনতোষ চাকলাদার, ভিক্টর কামহুকা, বিধান দাস, দীপঙ্কর সরকার, লালকমল ভৌমিক, তন্ময় কুন্ডু (সন্দীপ ভট্টাচার্য), বুদিরাম টুডু (জগন্নাথ ওরাওঁ), ফুতা নাকামুরা, আন্তো পেয়িচ।